ধর্ষণের বিরুদ্ধে কঠোর আইন প্রণয়নের আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

784

সংসদ ভবন, ১১ জুলাই, ২০১৯ (বাসস) : প্রধানমন্ত্রী এবং সংসদ নেতা শেখ হাসিনা ধর্ষণের বিরুদ্ধে কঠোর আইন প্রণয়ন করে অপরাধীদের কঠোর শাস্তি প্রদানের ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেছেন, এ ধরনের জঘন্য কার্যকলাপ কখনও মেনে নেয়া যায় না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের আইন আরো কঠোর করা দরকার, আরো কঠোরভাবে তাদের (এসব অপরাধীদের) শাস্তি দেয়া দরকার। কারণ এই ধরনের জঘন্য কার্যকলাপ কখনও মেনে নেয়া যায় না।’
এ ব্যাপারে তাঁর সরকার যথাযথ পদক্ষেপ প্রহণ করবে বলেও প্রথানমন্ত্রী কঠোর হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করেন।
প্রধানমন্ত্রী এবং সংসদ নেতা শেখ হাসিনা আজ সন্ধ্যায় একাদশ জাতীয় সংসদের তৃতীয় (বাজেট) অধিবেশনের সমাপনী ভাষণে একথা বলেন। ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এ সময় স্পিকারের দায়িত্ব পালন করছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের কিছু সামাজিক অপরাধ প্রবণতা বেড়ে গেছে। শিশুদের ওপর পাশবিক অত্যাচার অথবা মানুষ খুন করা, ছোট শিশুদের খুন করা- যখন ঘটনা ঘটে এবং এরপর পত্রিকায় সংবাদ হয় (অবাধ তথ্য প্রবাহের এই যুগে) তারপরে যেন এর হারটা বেড়ে যায়।
তিনি ইলেকট্রনিক মিডিয়া বা চ্যানেলগুলোর উদ্দেশে ধর্ষকদের চেহারাটা বার বার তুলে ধরার আহবান জানান। যাতে তাদের যেন লজ্জা হয়।
এসব সামাজিক অপরাধের বিরুদ্ধে পুরুষদেরকেও নারীদের পাশাপাশি প্রতিবাদ-প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ‘আমরা শুধু মেয়েরাই এর প্রতিবাদ করবো কেন? এখানে পুরুষ সম্প্রদায়ের জন্য লজ্জার বিষয় যে তারা এই অপরাধটা করে যাচ্ছে। সেজন্য আমাদের পুরুষ সম্প্রদায়কেও আরো সোচ্চার হতে হবে বলে আমি মনে করি।’
প্রধানমন্ত্রী দেশে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় এ বিষয়ে সকলকে সচেতন থাকার পাশাপাশি বাসগৃহের চারপাশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রী ডেঙ্গুর জন্য দায়ী এডিস মশাকে ‘অ্যারিস্টোক্রাট’ মশা আখ্যায়িত করে কৌতুক ছলে বলেন, এরা বস্তিতে থাকে না, ময়লা জায়গায় থাকে না, তারা ভদ্র জায়গা খোঁজে এখানেই সমস্যা, ওষুধ দিলেও যায় না।
তিনি বলেন, মশারি টানিয়ে থাকার সঙ্গে সঙ্গে সকলকে বাড়ি-ঘর এবং এর আশপাশ পরিষ্কার রাখতে হবে। পাশাপাশি যেসব জায়গায় পানি জমে থাকে, ফুলের টব, এয়ার কন্ডিশনের পানি যেন জমতে না পারে সেদিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে। কারণ এই মশা পরিষ্কার জায়গায় ডিম দেয় ও বংশবৃদ্ধি করে।
দেশে ডেঙ্গুর চিকিৎসা ব্যবস্থার যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ডেঙ্গু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ধরা পড়ছে এবং চিকিৎসার ব্যবস্থা আমরা নিচ্ছি।’

তাঁর সরকার বিরাট অঙ্কের ভর্তুকি দিয়ে গ্যাস ও বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা আন্দোলন করছেন তারা প্রকৃত অবস্থা চিন্তা করছেন না, এটা দুঃখজনক। গ্যাসের আমদানি খরচ যেটা, সেটা তো বিবেচনায় নিতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশে যে গ্যাস আছে তা দিয়ে চাহিদা পূরণ না হওয়ায় এবং ব্যাপক চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে এলএনজি আমদানির সিদ্ধান্ত নেয়া হলো। এর জন্য ৩০ হাজার কোটি অতিরিক্ত টাকার প্রয়োজন দেখা দিয়েছে। পুরো টাকাই ভর্তুকি দিচ্ছি। আমরা এলএমজি আমদানি করছি গ্যাসের চাহিদা মেটাবার জন্য।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এলএনজি আমদানি খুব ব্যয় সাপেক্ষ। বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন মূল্যায়ন করে দেখেছে বর্ধিত ব্যয় নির্বাহের জন্য কমপক্ষে ৭৫ শতাংশ দাম বাড়ানোর প্রয়োজন ছিল। সেখানে আমরা কতটুক দাম বাড়িয়েছি। গ্রাহকদের আর্থিক চাপ বিবেচনা করে কমিশন মাত্র ৩২.৮ শতাংশ দাম বাড়িয়েছে। অর্থাৎ, ভোক্তা পর্যায়ে প্রাকৃতিক গ্যাসের মূল্যহার বর্তমানে প্রতি ঘনমিটার ৯.৮০ টাকা। ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প গ্রাহকদের জন্য কোনো দাম বাড়ানো হয়নি। গণপরিবহনের বিষয়টি বিবেচনায় করে সিএনজি খাতে শুধু প্রতি ঘনমিটারে ৩ টাকা বাড়ানো হয়েছে। বিভিন্ন শ্রেণীর গ্রাহকদের অভিযোগের ভিত্তিতে এখন থেকে মিনিমাম চার্জ প্রত্যাহার করা হয়েছে।
সব শিল্প গ্রাহকদের ইবিসি মিটার দেয়া হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, গ্রাহকদের ওপর যেন আর্থিক চাপ বেশি না পড়ে সেজন্য প্রতি বছর ৭ হাজার ৯৯০ কোটি টাকা আর্থিক সহায়তা বা ভর্তুকি দেয়া হবে। তাছাড়া জ্বালানি নিরাপত্তা তহবিল থেকে ২ হাজার ৪২০ কোটি টাকা দেয়া হবে। আমদানিতে যে মূল্য পড়ছে তাতে আমরা সেখানে পাইপলাইন তৈরি করছি সংরক্ষণ করতে হচ্ছে। পাইপলাইনের মাধ্যমে সরবরাহ করছি। এরও একটা খরচ আছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা যদি খরচটা ধরি তাতে এলএনজি আমদানির খরচ পড়ে ৬১.১২ টাকা। আমরা দাম ধরেছি খুব কম। এর দাম পড়ে প্রতি কিউবিক মিটার ৬১.১২ টাকা। আমরা নিচ্ছি মাত্র ৯.৮০ টাকা। যেখানে ৬১.১২ টাকা দাম পড়ে সেখানে ধরা হচ্ছে ৯.৮০ টাকা। অর্থাৎ ৫১.৩২ টাকা সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা যদি গ্যাস দিতে না পারি তাহলে উৎপাদন বন্ধ হবে, রফতানি বন্ধ হবে, কর্মসংস্থান বন্ধ হবে। এজন্য গ্যাস আমদানির খরচ যেটা, সেটা আমাদের বিবেচনা করতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জানি না যারা আন্দোলন করছেন তারা কি চায়। ভারতে গ্যাসের দাম কমের কথা বলা হচ্ছে কিন্তু সব খাতেই ভারতে গ্যাসের দাম বাংলাদেশ থেকে বেশি।’
তিনি এ সময় ভারত এবং বাংলাদেশের গ্যাস এবং এলএনজি’র বর্তমান মূল্যের একটি তুলনামূলক চিত্রও সংসদে তুলে ধরেন।
দেশে গ্যাসের প্রকৃত মজুদের পরিমাণ না জেনে যুক্তরাষ্ট্রের বহুবিধ চাপের পরও ভারতে গ্যাস রপ্তানি করতে রাজি না হওয়ায় আন্তর্জাতিক কূটনীতির শিকার হয়ে ভোট বেশী পাওয়ার পরেও ২০০১ সালে ক্ষমতায় আসতে পারেননি বলে শেখ হাসিনা উল্লেখ করেন।
তিনি অভিযোগ করেন, সে সময় এই পরাশক্তির কাছে গ্যাস বিক্রির মুচলেখা দিয়েই খালেদা জিয়া ও বিএনপি ক্ষমতায় এসেছিল।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি মুচলেকা দেইনি। বলেছিলাম আগে আমাদের চাহিদা পূরণ করে ৫০ বছরের রিজার্ভ রাখার পর চিন্তা করবো। কিন্তু খালেদা জিয়া মুচলেকা দিয়ে এসেছিলেন। নির্বাচনে আমরা বেশি ভোট পেয়েও ক্ষমতায় আসতে পারিনি।’
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতার গত এক দশকে বাংলাদেশ উন্নয়নের মহাসোপানে যাত্রা শুরু করেছে। দেশের যে অগ্রযাত্রা শুরু হয়েছে, তা আরও এগিয়ে নিয়ে যাব। দেশকে আরও সমৃদ্ধশালী করব।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০২০ সালে জাতির জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী, ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী আমরা পালন করব ভিক্ষুকমুক্ত, ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত দেশ হিসেবে। ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হবে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে উন্নত ও সমৃদ্ধশালী দেশ।