বিশ্বকাপ মিশন শেষে বিদায় ঘটছে কোচিং স্টাফদের

418

ঢাকা, ৯ জুলাই, ২০১৯ (বাসস) : আইসসিসি দ্বাদশ ক্রিকেট বিশ্বকাপ এখনো শেষ হয়নি। চলছে সেমিফাইনাল পর্ব। টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে পড়া দলগুলোর কোচিং স্টাফদের ইতোমধ্যেই বিদায় শুরু হয়েছে। যেমন সবার আগে বিদায় নিশ্চিত হয়েছে বাংলাদেশ দলের প্রধান কোচ স্টিব রোডসের। যদিও ২০২০ সালে অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠেয় টি-২০ বিশ্বকাপ পর্যন্ত রোডসের সঙ্গে চুক্তি ছিল বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি)। কিন্তু দলকে চলমান বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে ওঠাতে ব্যর্থ হওয়ায় রোডসের সঙ্গে সম্পর্ক ছেদ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিসিবি। বিশ্বকাপ মিশন শেষে দল দেশে ফেরার পর গতকাল সোমবার বিসিবি সদর দপ্তর শের-এ বাংলা স্টেডিয়ামে টাইগারদের পারফরমেন্স পর্যালোচনা সভায় রোডসকে না রাখার বিষয়ে সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।
বিসিবি প্রধান নির্বাহী নিজাম উদ্দিন চৌধুরী বিষয়টি ‘পারস্পরিক সমঝোতার ভিত্তিতে’ করা হচ্ছে বলে উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, ‘বিষয়টি এমন নয় যে আমরা তাকে বরখাস্ত করছি। আমরা বিষয়টিকে ‘পারস্পরিক সমঝোতা’ হিসেবেই দেখতে চাই।’
প্রধান কোচ রোডসের চুক্তি বাতিলের এক দিন পরই আজ মঙ্গলবার বোলিং কোচ কোর্ট ওয়ালস এবং ফিজিও থিলান চন্দ্রমোহনের চুক্তির মেয়াদও আর বৃদ্ধি না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিসিবি।
চৌধুরী বলেন, ‘আপরারা ইতোমধ্যেই জেনেছেন হেড কোচ রোডসের সঙ্গে আমরা আর চুক্তি নবায়ন করছি না। আলোচনার ভিত্তিতেই সম্পর্ক চুকে গেছে।
বিশ্বকাপ মিশন শেষেই ওয়ালস ও চন্দ্রমোহনের সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। তবে তাদের সঙ্গে চুক্তি নবায়ন না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিসিবি। তবে ব্যাটিং কোচ নেইল ম্যাককেঞ্জি, ফিল্ডিং কোচ রায়ান কুক এবং স্পিন কেচি সুনিল যোশির ক্ষেত্রে অন্য কিছু ভাবছে ক্রিকেট বোর্ড। নতুন একটি চুক্তির বিষয়ে বোর্ড বর্তমানে তাদের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। এ ছাড়া বিশ্বকাপ মিশন শেষ হয়ে যাওয়ায় ওয়ালস ও চন্দ্রমোহনের সঙ্গেও আমরা চুক্তি নবায়ন করছি না।’
বাদ পড়তে যাচ্ছেন আগে ভাগে কিছু না জানিয়ে হঠাৎ করেই টাইগারদের দায়িত্ব ছেড়ে শ্রীলংকা দলের প্রধান কোচের দায়িত্ব নেয়া চন্ডিকা হাথুরুসিংহেও।
এক রাশ হতাশা নিয়ে বিশ্বকাপ শেষ করার পরও শ্রীলংকা ক্রিকেট দলের প্রধান কোচ থাকতে চাচ্ছেন চন্ডিকা হাথুুরুসিংহে। তবে সেটা বোধ হয় পারছেন না তিনি। হিসেবের বাইরে থেকেই ইংল্যান্ড ওয়েলসে চলমান বিশ্বকাপ শুরু করে শ্রীলংকা। তবে স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে একটিসহ মোট তিন ম্যাচে জয়ী হয়ে ষষ্ঠ স্থানে থেকে বিশ্বকাপ মিশন শেষ করে ১৯৯৬ চ্যাম্পিয়ন লংকানরা।
শ্রীলংকান জাতীয় দল খুব শিগগিরই নতুন একজন প্রধান কোচ পেতে যাচ্ছে বলে জানা গেছে।
শ্রীলংকা ক্রিকেটের (এসএলসি) ঊর্ধ্বতন একটি সূত্র জানিয়েছে, ইতোমধ্যেই নতুন প্রধান কোচ, ব্যাটিং কোচ ও বোলিং কোচ আনার সিদ্ধান্ত হয়ে রয়েছে।
নাম প্রকাশ না করে সূত্রটি জানায়, ‘হাথুরুর পরিবর্তে একজন বিদেশী নতুন কোচ নিয়োগ দেয়া হবে।’
মূলত এ বিষয়ে কাজও শুরু করে দিয়েছেন এসএলসি কর্মকর্তারা। প্রধান কোচ হিসেবে নিয়োগদানের লক্ষ্যে ইতোমধ্যেই দু’জন বিদেশীর সঙ্গে আলোচনা চলছে বলেও উল্লেখ করেন সুত্রটি।
বর্তমানে জুরিয়র দলের সঙ্গে কাজ করা স্বদেশী চামিন্ডা ভাসকে জাতীয় দলের বোলিং কোচের দায়িত্ব দেয়া হতে পারে।
হাথুরুর সঙ্গে বর্তমান চুক্তির মেয়াদ আরো ১৬ মাস বাকি আছে- এ বিষয়ে সুত্রটি জানায়, ‘হ্যাঁ হাথুরুর বর্তমান চুক্তির বিষয়ে আমরা জ্ঞাত আছি। তবে পরিস্থিতি অনুযায়ী আমরা সেটা মোকাবেলা করব।’
এমনকি শীর্ষ পর্যায়ে এবং নির্বাচকরাও কেউ কেউ চাকরি হারাতে পারেন। নির্বাচক হিসেবে নতুন কেউ কেউ আসতে পারেন।
সুত্রটি আরো জানায়, ‘ক্রীড়া মন্ত্রী হারিন ফার্নান্দো ক্রিকেট কমিটির প্রধান হিসেবে সাবেক অধিনায়ক মাহেলা জয়াবর্ধনেকে আমন্ত্রণ জানাতে পারেন এবং নির্বাচক কমিটি বাছাইসহ ক্রিকেট বিষয়ক যে কোন সিদ্ধান্ত নিতে তার সর্বময় ক্ষমতা থাকেব।’
দলের হাই পারফরমেন্স ম্যানেজার অশাঙ্কা গুরুসিনহার পরিবর্তে নিয়োগ দেয়া হতে পারে ১৯৯৬ মিরোপা এনে দেয়া ডেভ হোয়াটমোরকে।
দক্ষিণ আফ্রিকা দলের কোচ ওটিস গিবসনেরও বিদায় নিতে হতে পারে। যদিও তার চুক্তির মেয়াদ আগামী সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাকি আছে। তবে দক্ষিণ আফ্রিকাকে প্রথম বার বিশ্বকাপ শিরোপা এনে দেয়ার শর্তেই তাকে নিয়োগ দেয়া হয়েছিল। ক্রিকেট দক্ষিণ আফ্রিকা শেষ পর্যন্ত দলকে অন্তত ফাইনালে নিতে পারলেও গিবসনকে রেখে দিত। কিন্তু সেটাও পারেননি। বাজে পারফরমেন্সের কারণে সবার আগে টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে পড়েছে প্রোটিয়ারা। অধিনায়ক ফাফ ডু প্লেসিস পক্ষে থাকলেও বোর্ডের প্রধানসহ অধিকাংশ সদস্যই গিবসনকে না রাখার পক্ষে।
আফগানিস্তান কোচ ফিল সিমন্স নিজে থেকেই দায়িত্ব ছেড়ে দিচ্ছেন। বিশ্বকাপ শুরুর আগ মুহূর্তে অধিনায়ক, দল নির্বাচনসহ অনেক বিষয়েই তার সঙ্গে আলোচনা না করেই সিদ্ধান্ত নেয়ায় ক্ষুদ্ধ সিমন্স। এমনকি বিশ্বকাপ চলাকালেও বোর্ডের কতিপয় কর্মকর্তার সেেঙ্গ প্রকাশ্যে বিবাদে জড়িয়ে পড়েন এ ক্যারিবিয়। যার প্রভাব পড়েছে দলের পারফরমেন্সেও। অনেক আশা নিয়ে শুরু করলেও জয়হীনভাবেই বিশ্বকাপ মিশন শেষ করতে হয়েছে বিশ্ব ক্রিকেটের উদীয়মান দেশটিকে। বিশ্বকাপ শেষে আফগান দলের কোচের দায়িত্ব ছেড়ে দেবেন বলে আগেই ঘোষণা দিয়ে রেখেছেন সিমন্স।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট দলও বিশ্বকাপে করেছে ফ্লপ। যাচ্ছেতাই পারফরমেন্সের কারণে টুর্নামেন্টের সেমিতে উঠতে পারেনি দলটি। অবশ্য অন্তবর্তীকালীন কোচ নিয়েই বিশ্বকাপ মিশন শুরু করেছিল ক্যারিবিয়রা। সুতরাং এখন স্থায়ীভাবে নতুন কোচ নিয়োগ দেয়াটাই স্বাভাবিক।
পাকিস্তান কোচ মিকি আর্থারও দায়িত্বে থাকতে পারবেন কিনা সন্দেহ সৃষ্টি হয়েছে। পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি) চেয়ারম্যান এহসান মানি এবং ম্যানেজিং ডিরেক্টর ওয়াসমি খান সম্প্রতি লন্ডনে প্রধান কোচ আর্থারের সঙ্গে তার ভবিষ্যত নিয়ে আলোচনা করেছেন।
সাধারণ আলোচনা ছাড়া চলতি বিশ্বকাপে পাকিস্তান দলের পারফরমেন্স এবং পরবর্তী কোচ নিয়োগ বিষয়েও তাদের মধ্যে আলোচনা হয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকান আর্থার নিজের দায়িত্ব চালিয়ে যেতে চাইলেও মানি তার ভবিষ্যত বিষয়ে কোন নিশ্চিয়তা দেননি।
ক্রিকেট কমিটির পরবর্তী সভায় আর্থার একটি প্রেজেনেটশন উপস্থাপন করবেন এবং এরপরই পাকিস্তান কোচের ভবিষ্যত বিষয়ে একটা চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
প্রতিটি বিশ্বকাপ শেষেই দলের ব্যর্থতার পর পাকিস্তানে একটা পরিবর্তনের ঢেউ ওঠে এবং বরখাস্ত শুরু হয়। নতুন করে শুরুর প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়, একটা ম্যাচ জিতলে সব ভুলে যায়।
সরফরাজ আহমেদের দল এবারের বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে উঠতে ব্যর্থ হওয়ায় এবারও একই চিত্রনাট্য।