যুক্তরাষ্ট্র সরে গেলেও জলবায়ু পরিবর্তন হ্রাস থেমে থাকবে না : পররাষ্ট্রমন্ত্রী

402

ঢাকা, ৮ জুলাই, ২০১৯ (বাসস) : পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবুল মোমেন বলেছেন, জলবায়ু পরিবর্তন হ্রাসের ব্যাপারে স্বাক্ষরিত প্যারিস চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রর সরকার নিজেকে প্রত্যাহার করে নিলেও জলবায়ু অভিযোজন পদক্ষেপের বৈশ্বিক প্রচারণা বন্ধ হবে না। বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলো এই চুক্তির সঙ্গে রয়েছে।
আজ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক প্রেস বিফ্রিংকালে তিনি একথা বলেন।
মোমেন বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র এই চুক্তি থেকে সরে গেলেই সবকিছু বন্ধ হয়ে যাবে না। এর ফলে চুক্তিটিতে স্বাক্ষরিত মাত্র একটি দেশ নিজেকে প্রত্যাহার করে নেবে। কিন্তু অন্যান্য দেশগুলো চুক্তিবদ্ধ থাকবে। ৭৯ শতাংশ মার্কিন নাগরিক বিশ্বাস করেন যে জলবায়ু পরিবর্তন একটি গুরতর ইস্যু এবং তাদের সরকারকে এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেয়া উচিত।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরো বলেন, তিনি বিশ্বাস করেন যে যুক্তরাষ্ট্র সরকার অল্প সময়ের জন্য প্যারিস চুক্তি থেকে দূরে থাকবে। আমরা আশা করছি যে তারা (যুক্তরাষ্ট্র) তাদের জনগণের ইচ্ছা অনুযায়ী আবার এতে (প্যারিস চুক্তি) অংশ নিবে।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী (এসডিজি বিষয়ক) মুখ্য সমন্বয়ক মো. আব্দুল কালাম আজাদও এতে বক্তব্য রাখেন।
ঢাকা মিটিং অব দ্য গ্লোবাল কমিশন অন অ্যাডাপটেশন’ উপলক্ষে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
বুধবার এটি অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করবেন।
অনুষ্ঠানে অংশ নিতে মার্শাল আইল্যান্ড প্রেসিডেন্ট ড. হিলডা হেইন, জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান কি-মুন ও বিশ্বব্যাংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. ক্রিস্টিলিনা জর্জিয়েভার আগামীকাল বাংলাদেশে আসার কথা রয়েছে।
বাংলাদেশে সফরকালে আন্তর্জাতিক মর্যাদাসম্পন্ন এই ব্যক্তিবর্গ কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবিরও পরিদর্শন করবেন। রোহিঙ্গা জন¯্রােতের আগমনের কারণে এখানকার পরিবেশগত ঝুঁকি প্রত্যক্ষ করবেন তারা।
আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘আমরা বিশ্ব নেতৃবৃন্দকে দেখাতে চাই যে রোহিঙ্গা জন¯্রােত আমাদের পরিবেশের উপর কিভাবে বিরূপ প্রভাব ফেলছে। তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের অস্থায়ী আশ্রয় দানের কারণে কক্সবাজারের পরিবেশের যে ক্ষতি হয়েছে তা পূরণ করতে বাংলাদেশের বৈশ্বিক সহয়তার প্রয়োজন।
আজাদ বলেন, ‘বিশ্বনেতারা সরেজমিনে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করলে, এ ব্যাপারে আন্তর্জাতিক সমর্থন পাওয়া আমাদের জন্য সহজ হবে ।’
মোমেন বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রতিক্রিয়া মোকাবেলায় এ ধরনের উচ্চ পর্যায়ের আন্তর্জাতিক বৈঠক বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করবে।
মার্শাল আইল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট মঙ্গলবার ভোরে ও বান কি-মুন বিকেলে বাংলাদেশে পৌঁছাবেন। হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবুল মোমেন তাদের অভ্যর্থনা জানাবেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বুধবার হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে গ্লোবাল কমিশন অন এডাপটেশন (জিসিএ) এর একদিনের বৈঠকের উদ্বোধন করবেন। জিসিএ এর বর্তমান সভাপতি বান কি-মুন এতে ‘ওয়ে ফরোয়ার্ড এন্ড নেক্সট স্টেপ টুয়ার্ডস ক্লাইমেট চেঞ্জ এডাপ্টেশন’ শীর্ষক এক অধিবেশনে ভাষণ দিবেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আগে প্রধানমস্ত্রী শেখ হাসিনা মার্শাল আইল্যান্ডে প্রেসিডেন্ট ড. হিলদা এবং জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান কি-মুনের সঙ্গে একই স্থানে জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজন প্রচেষ্ঠা সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করবেন।
উদ্বোধনী অধিবেশনে ড. হিলদা, বান কি-মুন এবং বিশ্বব্যাংকের প্রধান নির্বাহী এবং জিসিএ-র কো-চেয়ার ড. কিস্টালিনা জর্জিভা এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বক্তৃতা করবেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন স্বাড়ত বক্তৃতা করবেন।
বন, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিনের বকতৃতার মধ্যদিয়ে অধিবেশনের সমাপ্তি হবে।
উদ্বোধনের পর ‘কমিউনিটি ডায়ালগ’, একশন ট্যাকস-মবিলাইজিং এক্সিলারেটেড এডাপটেশন এন্ড সাপোর্ট’, মোবিলাইজিং এ গ্লোবাল অডিয়েন্স- কমিউনিকেশন টুলস্ এন্ড ইভেন্ট’ শীর্ষক অধিবেশন অনুষ্ঠিত হবে।
বিকেলে মার্শাল আইল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট, বান কি-মুন, এবং বিশ্বব্যাংকের প্রধান নির্বাহী রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন ছাড়াও কক্সবাজারের উখিয়ায় কুরুশখুল আশ্রয়ণ প্রকল্প পরিদর্মন করবেন বলে জানা যায়।
সন্ধ্যা হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে পররাষ্ট্র মন্ত্রী মোমেন বিশিষ্টদের সম্মানে এক নৈশ ভোজের আয়োজন করবেন।
মঙ্গলবার মার্শাল আইল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট একই স্থানে বাংলাদেশ এবং বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজনসহ বিভন্ন বিষয়ে এক প্রাক বৈঠকে অংশ নিবেন।
বন, পরিবেশ ও জলবায়ু মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন, গ্লোবাল কমিশন ফর এডাপটেশন সেন্টারের প্রধান নির্বাহী ড. প্যাট্রিক ভি ভারকুয়েজেন, নির্বাহী সভাপতি এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক মনিশ বাপনা এবং সিসিএ-র কমিশনার এবং ব্রাকের নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ মুসা এই প্রাক বৈঠকে অংশ নিবেন।
ড. হিলদা এবং বান কি-মুন বৃহস্পতিবার ঢাকা ত্যাগ করবেন। এসময় পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিমানবন্দরের তাদের বিদায় জানাবেন।