দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে হারায় সেমিতে ইংল্যান্ডের মোকাবেলা করবে অস্ট্রেলিয়া

385

ম্যানচেস্টার (ইউকে), ৭ জুলাই ২০১৯ (বাসস/এএফপি) : বিশ্বকাপ ক্রিকেটের ‘ব্লকবাস্টার’ সেমি-ফাইনালে স্বাগতিক ইংল্যান্ডের মোকাবেলা করবে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া। গতকাল শনিবার ওল্ড ট্রাফোর্ডে গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে ১০ রানের নাটকীয় পরাজয় তাদেরকে স্বাগতিকদের সামনে ফেলেছে।
১২ মাস আগে বল টেম্পারিংয়ে অভিযুক্ত হয়ে নির্বাসিত হবার পর প্রথম দক্ষিন আফ্রিকার মুখোমুখি হয়েছিলেন ডেভিড ওয়ার্নার। ওই ম্যাচেও সেঞ্চুরি হাকিয়েছেন তিনি। যেটি ছিল টুর্নামেন্টে তার তৃতীয় সেঞ্চুরি। তবে সেটি শেষ পর্যন্ত কাজে লাগেনি। ১০ দলের অংশগ্রহনে গ্রুপ পর্বে দ্বিতীয় হারের মুখে পড়তে হল অসিদের।
এই পরাজয়ের কারণে সবার আগে শেষ চার নিশ্চিত করা অস্ট্রেলিয়া পয়েন্ট তালিকার শীর্ষ স্থান হারিয়েছে। একই দিন শ্রীলংকাকে ৭ উইকেটে হারিয়ে তালিকার শীর্ষ স্থানটি দখলে নিয়েছে ভারত।
খেলা শেষে অস্ট্রেলিয় অধিনায়ক এ্যারন ফিঞ্চ বলেন,‘ এটি কিছুটা হতাশার। ওয়ার্নার অসাধারণ একটি সেঞ্চুরি হাকিয়েছেন এবং এ্যালেক্স ক্যারি অসাধারণ একটি ইনিংস খেলে আমাদেরকে জয়ের বেশ কাছাকাছি পৌঁছে দিয়েছিলেন। তবে তা দলের জন্য পর্যাপ্ত হলোনা।’
এ ম্যাচ জিতে পারলে তালিকার শীর্ষস্থান অক্ষুন্ন রেখেই চতুর্থ স্থানে থাকা নিউজিল্যান্ডকে সেমিতেই প্রতিপক্ষ হিসেবে পেত বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা। আসরের প্রথম সেমি-ফাইনাল অনুষ্ঠিত হবে আগামী মঙ্গলবার ওল্ড ট্রাফোর্ডে। দ্বিতীয় সেমি-ফাইনালে এজবাস্টনে মঙ্গলবার ইংল্যান্ডের মোকাবেলা করবে অসিরা।
ফিঞ্চ বলেন, ‘ম্যাচটি ব্লক বাস্টারে পরিণত হতে যাচ্ছে। এটি অস্ট্রেলিয়া বনাম ইংল্যান্ড ম্যাচেই সীমাবদ্ধ থাকছেনা। এটি বিশ্বকাপের সেমি-ফাইনালের চেয়েও বড় কিছু।’ গ্রুপ পর্বে এই ইংল্যান্ডকেই ৬৪ রানে হারিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া।
আহত অবসর নিয়ে ম্যাচের শেষ ভাগে পুনরায় মাঠে নাম উসমান খাজা টুর্নামেন্ট থেকে বাদ পড়তে পারেন বলেও জানিয়েছেন ফিঞ্চ। অসি অধিনায়ক বলেন,‘ উসমান খাজার অবস্থা স্বস্তিদায়ক নয়। সকালে তাকে স্ক্যান করাতে হবে।’
প্রেটিয়াদের দেয়া ৩২৬ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে ওয়ার্নার (১২২) ও এ্যালেক্স ক্যারির (৮৫) পঞ্চম উইকেটের ১০৮ রানের পার্টনারশীপ সেই লক্ষ্যের দিকেই নিয়ে যাচ্ছিল বর্তমান চ্যাম্পিয়নদের। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ফাফ ড ুপ্লেসিস (১০০) ও রাসি ফন ডার ডুসেনের ক্যারিয়ার সেরা ৯৫ রানের সুবাদে প্রোটিয়াদের ৬ উইকেটের বিনিময়ে করা ৩২৫ রান টপকাতে ব্যর্থ হয় অস্ট্রেলিয়া।
ডু প্লেসিস বলেন,‘ দারুন একটি ম্যাচ। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষের ম্যাচ মানেই সব সময় দারুন এক আনন্দের বিষয়। এটি ছিল চমৎকার একটি প্রতিদ্বন্দ্বিতাপুর্ন ম্যাচ। অন্তত ছোট্ট একটি স্বস্তি নিয়েই আমরা ঘরে ফিরতে চেয়েছিলাম।’
ম্যাচে ১১৯ রানে চার উইকেট হারিয়েই সংকটে পড়ে গিয়েছির অস্ট্রেলিয়া। মাত্র ৩ রান করেই ওয়ার্নারের সঙ্গে ওপেনিং জুটি ভেঙ্গে ফিরতে হয়েছিল ফিঞ্চকে। ইমরান তাহিরের বল শর্ট কভার অঞ্চলে তুলে দিলে মার্করামের হাতে ধরা পড়েন তিনি। ফলে দলীয় পঞ্চম রানেই পতন ঘটে অস্ট্রেলিয়ার প্রথম উইকেটের। মাত্র ৭ রান করে ডোয়াইন প্রিটোরিয়াসের বলে এলবিডব্লিউর ফাঁদে পড়ে বিদায় নিতে হয় আরেক অসি ব্যাটিং স্তম্ভ স্টিভ স্মিথকেও। তবে লক্ষ্যে অবিচল ছিলেন ওয়ার্নার। ১০০ বলে সেঞ্চুরি হাকিয়ে তিনি অতিক্রম করেন টুর্নামেন্টের ৬০০ রানের মাইলফলক। অসাধারন সেঞ্চুরিটি সাজানো ছিল ১২টি চারে। শেষ পর্যন্ত প্রিটোরিয়াসের বল ড্রাইভ করতে গিয়ে মরিসের হাতে ধরা পড়েন তিনি। মিড অনে অসাধারণ ডাইভে বল তালন্দী করেন মরিস।
এদিকে একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ক্যারিয়ার সেরা সংগ্রহ দাঁড় করাতে ইমরান তাহিরের বলে ছক্কাও হাকিয়েছেন ক্যারি। শেষ পর্যন্ত ৬৯ বলে তার ৮৫ রানের ইনিংসিটি থামিয়ে দেন মরিস। ব্যাটের কানায় লেগে উপরে উঠে যাওয়া বলটি ডিপ কভার অঞ্চলে তালুবন্দী করেন আইডেন মার্করাম। এরপরও দলকে লক্ষ্যে পৌঁছে দেয়ার প্রাণপণ চেষ্টা করেছেন উসমান খাজা। কিন্তু ব্যক্তিগত ১৮ রানে কাগিসো রাবাদার বলে বোল্ড আউট হন তিনি। জয়ের জন্য শেষ ওভারে ১৮ রানের প্রয়োজন পড়ে অস্ট্রেলিয়ার। এই ওভারটি করতে আসেন আন্দিল ফেলুকুয়াও। শেষ ভাগে জয়ের জন্য শেষ দুই বলে অসিদের প্রয়োজন পড়ে ১১ রানের। কিন্তু সেই লক্ষ্যে অস্ট্রেলিয়াকে পৌঁছে দিতে পারেনি শেষ উইকেট জুটি। নাথান লিওকে (৩) ডিপে তালুবন্দী করেন মার্করাম। ফলে ৪৯.৫ ওভারে ৩১৫ রানে অল আউট হয় অস্ট্রেলিয়া।
এর আগে ২৬ টি উইকেট নিয়ে বিশ্বকাপের এক আসরে সর্বোচ্চ উইকেট শিকার স্বদশেী গ্লেন ম্যাকগ্রার রেকর্ড স্পর্শ করেন অসি পেসার মিচেল স্টার্ক। ম্যাচে ৫৯ রানের বিনিময়ে ২ উইকেট সংগ্রহ করেছিলেন তিনি। ২০০৭ সালে ক্যারিবীয় অঞ্চলের বিশ্বকাপে ২৬ উইকেট নিয়ে সর্বাধিক উইকেট সংগ্রহকারীর রেকর্ডটি দখল করেছিলেন অস্ট্রেলীয় কিংবদন্তী গ্লেন ম্যাকগ্রা।