বাসস ক্রীড়া-১৪ : মুস্তাফিজের পাঁচ উইকেট : পাকিস্তানের সংগ্রহ ৯ উইকেটে ৩১৫ রান

141

বাসস ক্রীড়া-১৪
ক্রিকেট-বাংলাদেশ-পাকিস্তান
মুস্তাফিজের পাঁচ উইকেট : পাকিস্তানের সংগ্রহ ৯ উইকেটে ৩১৫ রান
লর্ডস (লন্ডন), ৫ জুলাই, ২০১৯ (বাসস) : দ্বাদশ বিশ্বকাপের ৪৩তম ম্যাচে বাংলাদেশের বিপক্ষে টস জিতে প্রথমে ব্যাট করে ৫০ ওভার শেষে ৯ উইকেটে ৩১৫ রান করেছে পাকিস্তান। বাংলাদেশের মুস্তাফিজুর রহমান ১০ ওভারে ৭৫ রানে ৫ উইকেট নেন। পাকিস্তানের পক্ষে ব্যাট হাতে ১০০ রান করেছেন ওপেনার ইমাম-উল-হক।
ক্রিকেটের ‘মক্কা’খ্যাত লর্ডসে বাংলাদেশের বিপক্ষে হৃদয়ে ধুক-ধুক কম্পনে টস করতে নামেন পাকিস্তানের অধিনায়ক সরফরাজ আহমেদ। কারন সেমিফাইনালে খেলার আশা বাঁচিয়ে রাখতে হলে টস ভাগ্যে জিতে প্রথমে ব্যাট করতেই হবে পাকিস্তান। শেষ পর্যন্ত টস ভাগ্যে জয় পান সরফরাজ। জিতেই ব্যাটিং নিয়ে পাকিস্তানের আশা বাঁচিয়ে রাখেন দলনেতা।
এখন দেখা যাক, সেমিফাইনালে খেলতে হলে সমীকরণের কোন হিসাব-নিকাশ মেলাতে হবে। যদি পাকিস্তান ৩৫০ রান করে, তবে বাংলাদেশের বিপক্ষে ৩১১ রানের বড় ব্যবধানে জিততে হবে তাদের। অর্থাৎ বাংলাদেশকে ৩৯ রানে গুটিয়ে দিতে হবে পাকিস্তানকে।
আবার ৪০০ রান করলে ৩১৬ রানের ব্যবধানে জিততে হবে পাকিস্তানকে। তখন বাংলাদেশকে ৮৪ রানে গুটিয়ে দিতে হবে পাকিস্তানের বোলারদের।
আবার যদি ৪৫০ রান করে পাকিস্তান, তবে বাংলাদেশের ইনিংস ১২৯ রানে শেষ করতে হবে। তখন ৩২১ রানের ব্যবধানে বাংলাদেশকে হারাতে হবে পাকিস্তানকে। এমন সমীকরণ মেলাতেই পারলেই চতুর্থ ও শেষ দল হিসেবে এবারের বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে খেলবে পাকিস্তান।
এমন সমীকরণকে মাথায় নিয়ে ব্যাট হাতে পাকিস্তানের ইনিংস শুরু করেন দুই ওপেনার ফখর জামান ও ইমাম। বল হাতে বাংলাদেশের পক্ষে ইনিংস শুরু করেন অফ-স্পিনার মেহেদি হাসান মিরাজ। প্রথম ওভারে মাত্র ১ রান দেন তিনি। এমন চিত্র বলে দেয় শুরুতেই সর্তক পাকিস্তান। এই সর্তকতা অব্যাহত থাকে পরবর্তীতেও। প্রথম ৭ ওভারে ৩ দশমিক ২৮ গড়ে মাত্র ২৩ রান তুলে পাকিস্তানের দুই ওপেনার ফখর ও ইমাম।
দুই শুরুর বোলার মিরাজ-মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনের ওপর ভরসা রেখেছিলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা। অধিনায়কের ভরসার প্রতিদান দেন সাইফউদ্দিন। অষ্টম ওভারের দ্বিতীয় বলে পাকিস্তান শিবিরে আঘাত হানেন সাইফউদ্দিন। সাইফউদ্দিনের অফ-স্টাম্পের বাইরের বল পয়েন্টের উপর দিয়ে মারতে গিয়ে মিরাজকে ক্যাচ দেন ফখর। ১টি চারে ৩১ বলে ১৩ রান করেন তিনি।
দলীয় ২৩ রানে প্রথম উইকেট হারানোর পর দলের হাল ধরেন আরেক ওপেনার ইমাম ও তিন নম্বরে নামা ইনফর্ম বাবর আজম। দ্রুত রান তোলার চেষ্টায় ছটফট করেছেন তারা। কিন্তু বাংলাদেশ বোলারদের নিয়ন্ত্রিত বোলিং-এ রান তোলার কাজটা কঠিন হয়ে পড়ে ইমাম ও বাবরের। ২২তম ওভারের তৃতীয় বলে শতরানে পৌঁছায় পাকিস্তানের স্কোর। এসময় ধারাভাষ্যকাররা সমীকরণের কথা মনে করিয়ে দেন পাকিস্তানকে। তারা বলেন, সেমিতে খেলতে হলে আরও ৩৫০ রান করতে হবে পাকিস্তানকে।
ধারাভাষ্যকারদের কথা হয়তো কানে গিয়েছিলো ক্রিজে থাকা পাকিস্তানের দুই ব্যাটসম্যানের। তাই রান তোলার গতি কিছুটা বাড়ান তারা। ৩১ ওভারে ৫ দশমিক ৩৫ রান রেটে ১ উইকেটে ১৬৬ রান করে পাকিস্তান। রান তোলার গতি ৬এর উপর তুলতে না পারলেও উইকেটে জমে গিয়েছিলেন ইমাম-বাবর। তাই ওইসময় ইমাম ৫৯ ও বাবর ৮৭ রানে অপরাজিত ছিলেন। এই জুটিকে ভাঙ্গতে ৩২তম ওভারে সাইফউদ্দিনকে আক্রমণে নিয়ে আসেন মাশরাফি।
দ্বিতীয় স্পেলে আক্রমণে এসে শুরুতেই হতাশ করেন প্রথম স্পেলে ৪ ওভারে ২২ রানে ১ উইকেট নেয়া সাইফউদ্দিন। চতুর্থ ও পঞ্চম বলে দু’টি বাউন্ডারি হজম করতে হয় সাইফউদ্দিনকে। ব্যাটসম্যান ছিলেন বাবর। এতে ৯৬ রানে পৌঁছে যান বাবর। সেঞ্চুরি থেকে ৪ রান দূরে ছিলেন তিনি। তবে ওই ওভারের শেষ বলে বাবরকে লেগ বিফোর ফাঁদে ফেলেন সাইফউদ্দিন। আম্পায়ারের আউটের পর রিভিউ নিয়েছিলেন বাবর। কিন্তু সেই রিভিউতেও বাঁচতে পারেননি ৫৭ রানে জীবন পাওয়া বাবর। শেষ পর্যন্ত ১১টি চারে ৯৮ বলে ৯৬ রানে থেমে যান তিনি। এই ইনিংস খেলার পথে বিশ্বকাপের এক আসরে পাকিস্তানের পক্ষে সর্বোচ্চ রানের মালিক হলেন বাবর। এতে পেছনে পড়ে গেলেন সাবেক অধিনায়ক জাভেদ মিঁয়াদাদ। ১৯৯২ সালের বিশ্বকাপে ৯ ইনিংসে ৫টি হাফ-সেঞ্চুরিতে ৪৩৭ রান করেছিলেন মিয়াদাদ। আর এবার আসরে ৮ ইনিংসে ১টি সেঞ্চুরি ও ৩টি হাফ-সেঞ্চুরিতে ৪৭৪ করেছেন বাবর। ২৭ বছর আগে মিয়াদাদের করা রেকর্ডকে ভেঙ্গে ফেলেন ২৪ বছর বয়সী বাবর। দ্বিতীয় উইকেটে ইমাম-বাবর ১৪৮ বলে ১৫৭ রান যোগ করেন।
দলীয় ১৮০ রানে বাবরের বিদায়ে উইকেটে আসেন মোহাম্মদ হাফিজ। দ্রুত রান তোলায় ব্যস্ত ছিলেন হাফিজও। তাকে সঙ্গ দিচ্ছিলেন ইমাম। সঙ্গ দিতে গিয়ে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের সপ্তম ও এবারের আসরে প্রথম সেঞ্চুরির স্বাদ পান ইমাম। ৯৯ বলে সেঞ্চুরির পাবার পরের ডেলিভারিতেই হিট উইকেট হয়ে প্যাভিলিয়নে ফিরেন ইমাম। বোলার ছিলেন বাংলাদেশের মুস্তাফিজুর রহমান। ৭টি চারে ১০০ বলে ১০০ রান করেন ইমাম। তৃতীয় উইকেটে হাফিজের সাথে ৫৯ বলে ৬৬ রান দলকে এনে দেন ইমাম।
২৪৬ রানে তৃতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হন ইমাম। চার বল ২ রান পর প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন হাফিজও। মিরাজের ডেলিভারিকে সুইপ করতে গিয়ে ডিপ ব্যাকওয়ার্ড স্কয়ারে সাকিবকে ক্যাচ দেন হাফিজ। ৩টি বাউন্ডারিতের ২৫ বলে ২৭ রান করে আউট হন হাফিজ।
দ্রুত ২ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে যায় পাকিস্তান। সেই চাপ আরও বাড়ে, দলীয় ২৫৫ রানে পাকিস্তানের মিডল-অর্ডার ব্যাটসম্যান হারিস সোহেলও উইকেট পতনের তালিকয় নাম তুললে। মুস্তাফিজের দ্বিতীয় শিকার হবার আগে ৬ রান করেন সোহেল। এই শিকারের মাধ্যমে ওয়ানডেতে শততম উইকেট নিলেন ফিজ। যা ওয়ানডেতে চতুর্থ দ্রুত শততম উইকেট। ৫৪ ম্যাচে ১০০ উইকেট নিলেন মুস্তাফিজ। ৪৪ ম্যাচে ১০০ উইকেট নিয়ে সবার উপরে আছেন আফগানিস্তানের লেগ-স্পিনার রশিদ খান।
২৪৬ থেকে ২৫৫ রানের মধ্যে ৩ উইকেট হারানোয় পাকিস্তানের ৩শতাধিক রানে পৌঁছানো চিন্তার বিষয় হয়ে পড়ে। ততক্ষণে পাকিস্তানের রান রেটের সমীকরন মেলানোর আশাও নিভে যায়। এ অবস্থায় ক্রিজে গিয়েও আহত অবসর হয়ে মাঠ ছেড়ে যান পাকিস্তানের অধিনায়ক সরফরাজ। ৪৫তম ওভারে সাইফউদ্দিনের দ্বিতীয় ডেলিভারিটি মিড-অফে হিট করেছিলেন পাকিস্তানের ইমাদ। তার জোরালো শটটি গিয়ে লাগে সরফরাজের হাতে। তখনই মাঠে প্রাথমিক চিকিৎসা নিলেও কিছুক্ষণ বাদে মাঠ ছাড়েন সরফরাজ। ২ রান করে আহত অবসর হন তিনি।
স্বীকৃত ব্যাটসম্যানরা ফিরে গেলেও পাকিস্তানকে ৩শ’ রানে পৌছানোর একমাত্র ভরসা ছিলেন আফগানিস্তানের বিপক্ষে পাকিস্তানের জয়ের নায়ক ইমাদ। এক প্রান্ত আগলে মারমুখী মেজাজেই ছিলেন তিনি। তাই ৪৭তম ওভারের তৃতীয় বলে পাকিস্তানের ইনিংসের প্রথম ছক্কা আসে তার ব্যাট থেকে। ৪০০, ৪৫০ ও ৫০০ রান করার লক্ষ্য নিয়ে খেলতে নেমে ইনিংসের শেষ দিকে প্রথম ছক্কা দেখে পাকিস্তান।
ওই ছক্কার পর পাকিস্তানের লোয়ার-অর্ডারের দুই ব্যাটসম্যানকে দ্রুতই আউট করেন সাইফউদ্দিন ও মুস্তাফিজ। ওয়াহাব রিয়াজকে ২ রানে বোল্ড করেন সাইফউদ্দিন। আর শাদাব খানকে নিজেই দুর্দান্ত এক ক্যাচ নিয়ে ১ রানে থামিয়ে দেন ফিজ।
৪৭ তম ওভারের প্রথম বলে দলীয় ২৮৯ রানে সপ্তম উইকেট হারানোর পরও ইমাদের নৈপুণ্যে ৩শ’ রানের স্বাদ নেয় পাকিস্তান। সেটি ঘটে ৪৮ দশমিক ৪ ওভারে। পাকিস্তানকে ৩শ’ রানে পৌঁছে দেয়া ইমাদকে ব্যক্তিগত ৪৩ রানে থামিয়ে দেন মুস্তাফিজ। ৬টি চার ও ১টি চারে ২৬ বলে নিজের ঝড়ো ও গুরত্বপূর্ণ ইনিংসটি সাজান ইমাদ। এরপর পাকিস্তানের দশম ব্যাটসম্যান মোহাম্মদ আমিরকে তুলে নিয়ে ওয়ানডে ক্যারিয়ারে পঞ্চমবারের মত এবং এবারের আসরে দ্বিতীয়বারের মত পাঁচ উইকেট পুর্ন করেন মুস্তাফিজ। ভারতের বিপক্ষে আগের ম্যাচেও ৫ উইকেট নিয়েছিলেন তিনি। ৫০ ওভারে ৯ উইকেটে ৩১৫ রানের সংগ্রহ পায় পাকিস্তান। মুস্তাফিজ ১০ ওভারে ৭৫ রানে ৫ উইকেট নেন। সাইফউদ্দিন ৭৭ রানে ৩ উইকেট নেন।
স্কোর কার্ড :
পাকিস্তান : ৩১৫/৯, ৫০ ওভার (ইমাম ১০০, বাবর ৯৬, ইমাদ ৪৩, মুস্তাফিজ ৫/৭৫)।
বাসস/এএসজি/এএমটি/১৯৪৫/স্বব