বাসস দেশ-৭ : মুক্তিযুদ্ধে আত্মদানকারী দুই শহীদের স্বীকৃতি,তবে তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হননি একজন

149

বাসস দেশ-৭
স্বীকৃতি-১৯৭১-মুক্তিযোদ্ধা
মুক্তিযুদ্ধে আত্মদানকারী দুই শহীদের স্বীকৃতি,তবে তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হননি একজন
গোপালগঞ্জ, ৫ জুলাই, ২০১৯ (বাসস) : ১৯৭১ সালের ৯ মে পাকিস্তানী দখলদার বাহিনীর সদস্যরা তাদের এদেশীয় দোসরদের নির্দেশনায় দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলীয় ছোট শহর গোপালগঞ্জের উপকন্ঠে পাইকারডাঙ্গা ইউনিয়নের স্থানীয় সরকারের একটি কার্যালয়ে অভিযান চালায়। তাদের লক্ষ্য ছিল রাজস্ব বিভাগের দু’জন জুনিয়র অফিসার।
তারা স্থানীয় ভূমি কর্মকর্তা তহসিলদার ও সহকারী তহসিলদারকে অফিস থেকে টেনে হেছড়ে বের করে তাদের উপর নির্মম নির্যাতন চালায়। নৃশংস নির্যাতনের পর তাদের দু’জনকে গুলি করে হত্যা করা হয়।
তাদের এই নির্মম পরিণতির কারণ ছিল ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের কালো রাত্রিতে পাকিস্তানী বাহিনীর ধ্বংসযজ্ঞের পর তারা দু’জন বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে আশেপাশের লোকজনকে সংগঠিত করতে প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যায়। দীর্ঘ ৪৮ বছর পর তাদের কবর উদ্ধার করে আত্মত্যাগের স্বীকৃতি হিসেবে কবরে ফলক স্থাপনের মাধ্যমে তাদের প্রতি আনুষ্ঠানিক সম্মান জানানো হয়।
গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোখলেশুরু রহমান সরকার বলেন, আমাদের দু’জন সহকর্মী ৪৮ বছর আগে দেশের জন্য শহীদ হয়েছেন। তারা এখানেই পরোলৌকিক শান্তিতে শায়িত আছেন। এজন্য তাদের কবর সংরক্ষণের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসক জেলার অন্যান্য কর্মকর্তা স্থানীয় ও পার্শ্ববর্তী এলাকার মানুষদের নিয়ে তাদের আত্মার মাগফেরাতের জন্য দোয়া করেন।
জেলা প্রশাসক বাসস’কে বলেন, তিনি আত্মদানকারী মোতালেব মিয়া ও আবুল কাশেমের নাম জানতে পেরে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এই দু’জন শহীদের কবর সংরক্ষণের উদ্যোগ নেন।
মোতালেব মিয়া ছিলেন তদানিন্তন গোপালগঞ্জ মহকুমার মকসুদপুর থানার লোহাইর গ্রামের নইমুদ্দিন মিয়ার ছেলে এবং আবুল কাশেম ছিলের তদানিন্তন মুন্সিগঞ্জ মহকুমার লৌহজং উপজেলার কুমারভোগ গ্রামের আলহাজ মীর তাফিজ উদ্দিনের ছেলে।
স্থানীয় বয়স্ক ব্যক্তিরা জানান যে, মোতালেব মিয়া তার গর্ভবতী স্ত্রী ও দু’বছরের এক ছেলে নিয়ে তহসিল অফিস ভবনেই থাকতেন।
আবুল কাশেম তার ৮ ছেলে মেয়ে নিয়ে গ্রামে একটি ভাড়া বাড়িতে থাকতেন।
পিকারডাঙ্গার অধিবাসী মুক্তিযোদ্ধা আইয়ুব আলী খান বলেন, মোতালেব মিয়া ও আবুল কাশেম স্থানীয় তরুণদের ছোট ছোট গ্রুপের সঙ্গে বৈঠক করে তাদের স্বাধীনতা যুদ্ধে সংগঠিত করেন যা খুব দ্রুত স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি ও স্থানীয়দের কানে পৌঁছে যায়।
আইয়ুব আলী বলেন, প্রায় প্রতিদিন এই দুই সরকারি কর্মকর্তা তাদের স্থানীয় আবাসস্থলের কাছে তরুণদের সঙ্গে বৈঠক করতো। পিকারডাঙ্গা থেকে অচেনা দুই রাজাকার এখানে আসে তাদের খোঁজ-খবর নিতে।
আইয়ুব স্মৃতিচারণ করে বলেন, রাজাকাররা মধুমতি নদীতে টহলরত পাকিস্তানী সৈন্যদের খবর পৌঁছে দেয় এবং পিকারডাঙ্গায় প্রবেশ করে তফসিল অফিসে যাওয়ার পথে গ্রাম প্রধান সীতানাথ সরকারের ৬০ বছর বয়সী বিধবা বোনসহ অনেক নিরীহ লোকদের হত্যা করে।
ফেরার পথে পাকিস্তানী বাহিনী তাদের স্বয়ংক্রিয় রাইফেলের এলোপাথাড়ি গুলি ছুঁড়ে অনেক লোককে হত্যা ও আহত করে। তারা হিন্দুদের বাড়িঘরে আগুন ধরিয়ে দেয়, তফসিল অফিসের হিন্দু মন্দির ধ্বংস করে দেয়।
মোতালেব মিয়াকে নির্মমভাবে হত্যার পরে তার স্ত্রী মমতাজ বেগম পিকারডাঙ্গা ত্যাগ করে ছেলে সাজ্জাদ পারভেজকে নিয়ে গোপালগঞ্জ সদরে যান এবং সেখানে যুদ্ধকালে কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। কাশেমের স্ত্রী রেহানা বেগম ফরিদপুর চলে যান। সেখানে তিনি স্থানীয় লোকদের সহায়তায় তার সন্তান মীর আবুল কাইয়ুম, মরহুম নাজমা সোহেলি, মীর আবুল কায়সার, নাজনীন সোহেলি, মীর আবুল কায়েস, আইভি আহমেদ শায়লা শামীমকে শিক্ষিত করে তোলেন। তাদের অনেককেই এখন দেশে ও বিদেশে মর্যাদাপূর্ণ অবস্থানে জীবনযাপন করছেন।
তবে তাদের ছোট মেয়ে কুমকুম তার বাবার শহীদ হওয়ার দেড় বছরের মধ্যে অনাহার ও বিনা চিকিৎসায় মারা যান।
মোতাবেল মিয়ার নাম মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় গেজেটে প্রকাশ করে তবে দুঃখজনকভাবে মীর আবুল কাশেমের নাম এখনো শহীদ মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়নি।
কাশেমের পরিবার কাশেমের নাম শহীদ মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকাভুক্ত করার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করেছে।
বাসস/সংবাদদাতা/আরকিউ/এমএম/অনু-এমএসআই-এমএবি/১৬৫৫/-আসচৌ