জয় দিয়ে হতাশার বিশ্বকাপ শেষ করতে চায় বাংলাদেশ

408

লর্ডস (লন্ডন), ৪ জুলাই, ২০১৯ (বাসস) : ২০১৫ বিশ্বকাপের কোয়ার্টারফাইনাল, ২০১৭ আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমিফাইনালে খেলার পর ২০১৯ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে খেলার স্বপ্ন দেখেছিলো বাংলাদেশ। কিন্তু সেই স্বপ্ন বাস্তবে রুপ নিলো না। গত ২ জুলাই দ্বাদশ বিশ্বকাপের লিগ পর্ব থেকেই বিদায় নিশ্চিত হয়ে গেছে বাংলাদেশের। তবে লিগ পর্বের একটি ম্যাচ এখনো বাকী রয়েছে মাশরাফির দলের। নিয়মরক্ষার সেই ম্যাচটি খেলতে নামছে কাল বাংলাদেশ। প্রতিপক্ষ পাকিস্তান। তাই হতাশার বিশ্বকাপে জয় দিয়ে শেষ করাই প্রধান লক্ষ্য টাইগারদের। সেই সাথে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজার শেষ বিশ্বকাপের শেষটা জয় দিয়ে রঙ্গিন করতে চায় দলের খেলোয়াড়রা। ক্রিকেটের মক্কা খ্যাত লর্ডসে কাল বাংলাদেশ সময় বিকেল সাড়ে তিনটায় শুরু হবে বাংলাদেশ-পাকিস্তান ম্যাচটি।
প্রথম ম্যাচ ৭ ম্যাচ শেষে ৩টি করে জয়-হার ও ১টি পরিত্যক্ত ম্যাচে ৭ পয়েন্ট সংগ্রহে রেখেছিলো বাংলাদেশ। তখনও সেমিফাইনালে খেলার প্রবল সম্ভাবনা ছিলো টাইগারদের। তবে সমীকরনটা কঠিনই ছিলো বাংলাদেশের সামনে। লিগ পর্বের শেষ দু’টি ম্যাচ তো জিততেই হবে, সেই সাথে বাংলাদেশের সাথে সেমির দৌঁড়ে থাকা অন্য দলগুলোর হারের প্রত্যাশা করা।
কিন্তু বার্মিংহামে ভারতের কাছে ২৮ রানে হেরে প্রথমবারের মত বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে খেলার আশা ধুলিসাৎ হয়ে যায় বাংলাদেশের। তাই পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচটি এখন নিয়মরক্ষার। আর এই নিয়মরক্ষার ম্যাচে জয় ছাড়া অন্য কিছুই ভাবছে না বাংলাদেশ। শেষটা ভালো করতে মুুখিয়ে আছে পুরো দল।
ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ শেষে পুরস্কার বিতরনী অনুষ্ঠানে তেমনটাই বলেছিলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা। তিনি বলেছিলেন, ‘আমরা আমাদের সেরাটা দিয়েই খেলেছি। আশা করছি শেষ ম্যাচেও আমরা সাফল্য নিয়ে টুর্নামেন্টটা শেষ করতে পারব।’
সেমিফাইনালে খেলার স্বপ্ন নিয়েই এবারের আসর শুরু করেছিলো বাংলাদেশ। আর সেই যাত্রা ছিলো দুর্দান্ত। শক্তিশালী দক্ষিণ আফ্রিকাকে ২১ রানে হারায় তারা। শুরুর ধাক্কাতে আর ঘুড়ে দাঁড়াতে পারেনি প্রোটিয়ারা। বিদায় নিতে হয়েছে তাদেরকেও। নিজেদের দ্বিতীয় ও তৃতীয় ম্যাচে যথাক্রমে নিউজিল্যান্ড-ইংল্যান্ডের কাছে হারে বাংলাদেশ। টানা দুই ম্যাচ হারের পর জয় পেতে উদগ্রীব ছিলো টাইগাররা। কিন্তু প্রকৃতি হতাশ করে বাংলাদেশকে। বৃষ্টির কারনে শ্রীলংকার সাথে পরিত্যক্ত হয় বাংলাদেশের ম্যাচ। আর এখানেই সেমির পথ কঠিন হয়ে পড়ে। তবে আশা বেঁচে ছিলো। টনটনে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দুর্দান্ত জয় আবারো সেমির পথে ফিরিয়ে নিয়ে আসে বাংলাদেশকে।
কিন্তু নটিংহামে অস্ট্রেলিয়ার কাছে হার বাংলাদেশের লক্ষ্য পূরণকে কঠিন করে তোলে। তাই আফগানিস্তানের বিপক্ষে জয়টি অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে পড়ে বাংলাদেশের। সেই কাজটি যথাযথভাবেই পালন করে মাশরাফির দল। তবে ভারতের বিপক্ষে ইংল্যান্ডের জয় ও ভারতের কাছে বাংলাদেশের হার, টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে দেয় মাশরাফি-সাকিব-তামিমদের।
হতাশায় নিমজ্জিত বাংলাদেশ দল। এ অবস্থায় বাধ্য হয়েই খেলতে হবে পাকিস্তানের বিপক্ষে এবারের বিশ্বকাপের নিজেদের শেষ ম্যাচ। সেই ম্যাচকে সামনে রেখে আজ অনুশীলন করেছে বাংলাদেশ দল। শেষটা ভালো করতে সর্বাত্মক চেষ্টা করবে তারা। এছাড়া বিশ্বকাপে মাশরাফির শেষ ম্যাচটি এটি। মাশরাফিকে জয় দিয়ে বিশ্বকাপ শেষ করার পরিকল্পনাও রয়েছে বাংলাদেশের।
৮ খেলায় ৭ পয়েন্ট নিয়ে বাংলাদেশের বিশ্বকাপ শেষ হয়ে গেলেও, পাকিস্তানের আশা এখনও টিকে আছে। তবে সেটি অসম্ভব এক পরীক্ষায়। ৮ খেলায় ৯ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের পঞ্চমস্থানে পাকিস্তান। চতুর্থ ও শেষ দল হিসেবে সেমিফাইনালে যাবার দৌঁড়ে রয়েছে পাকিস্তান ও নিউজিল্যান্ড। ৯ খেলায় ১১ পয়েন্ট নিয়ে চতুর্থস্থানে কিউইরা। তবে সেমিফাইনালে খেলতে হলে বাংলাদেশের বিপক্ষে কঠিন সমীকরনের সামনে দাড়িয়ে পাকিস্তান। জিততে তো হবেই, সেই সাথে রান রেট বাড়িয়ে জিততে হবে পাকিস্তানকে। কারন নিউজিল্যান্ডের রান রেট ০.১৭৫। পাকিস্তানের রান রেট -০.৭৯২।
আশা বাচিঁয়ে রাখতে হলে টস জিতে প্রথমে অবশ্যই ব্যাট করতে হবে পাকিস্তানকে। এরপর যদি পাকিস্তান ৩৫০ রান করে, তবে বাংলাদেশের বিপক্ষে ৩১১ রানের বড় ব্যবধানে জিততে হবে তাদের। অর্থাৎ বাংলাদেশকে ৩৯ রানে গুটিয়ে দিতে হবে পাকিস্তানকে।
আবার প্রথমে ব্যাট করে ৪০০ রান করলে ৩১৬ রানের ব্যবধানে জিততে হবে পাকিস্তানকে। বাংলাদেশকে ৮৪ রানে গুটিয়ে দিতে হবে পাকিস্তানের বোলারদের।
আবার যদি প্রথমে ব্যাট করে ৪৫০ রান করে পাকিস্তান, তবে বাংলাদেশের ইনিংস ১২৯ রানে শেষ করতে হবে। তখন ৩২১ রানের ব্যবধানে বাংলাদেশকে হারাতে হবে পাকিস্তানকে। তাই বলা যায়, অসম্ভব এক সমীকরনের সামনে দাড়িয়ে পাকিস্তান।
এখন পর্যন্ত ৩৬বার মুখোমুখি হয়েছে বাংলাদেশ-পাকিস্তান। এরমধ্যে ৫বার জয় পায় বাংলাদেশ। ৩১টিতে জয় পায় পাকিস্তান। বিশ্বকাপের মঞ্চে পাকিস্তানকে হারানোর রেকর্ড রয়েছে বাংলাদেশের। ১৯৯৯ সালে প্রথমবার বিশ্বকাপ খেলতে নেমেই পাকিস্তানকে ৬২ রানে হারিয়ে দেয় বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ দল : মাশরাফি বিন মর্তুজা (অধিনায়ক), সাকিব আল হাসান (সহ-অধিনায়ক), মুশফিকুর রহিম, লিটন দাস, মোহাম্মদ মিঠুন, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, মেহেদি হাসান মিরাজ, মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন, মোসাদ্দেক হোসেন, আবু জায়েদ রাহি, রুবেল হোসেন, মুস্তাফিজুর রহমান, তামিম ইকবাল, সৌম্য সরকার ও সাব্বির রহমান।
পাকিস্তান দল : পাকিস্তান দল : সরফরাজ আহমেদ (অধিনায়ক), আসিফ আলি, বাবর আজম, ফখর জামান, হারিস সোহেল, হাসান আলী, ইমাদ ওয়াসিম, ইমাম উল হক, মোহাম্মদ আমির, মোহাম্মদ হাফিজ, মোহাম্মদ হাসনাইন, শাদাব খান, শাহিন আফ্রিদি, শোয়েব মালিক ও ওয়াহাব রিয়াজ।