বাসস ক্রীড়া-৮ : তারপরও মাশরাফি-তামিমদের নিয়ে গর্বিত রোডস

172

বাসস ক্রীড়া-৮
ক্রিকেট-বাংলাদেশ-রোডস
তারপরও মাশরাফি-তামিমদের নিয়ে গর্বিত রোডস
বার্মিংহাম, ৩ জুলাই, ২০১৯ (বাসস) : লক্ষ্য ছিলো দ্বাদশ বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল খেলা। গতকাল ভারতের কাছে ২৮ রানে হেরে লিগ পর্বের এক ম্যাচ বাকী থাকতেই বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে খেলার আশা শেষ হয়ে গেল টাইগারদের। ভারাক্রান্ত মন-হতাশা ঘিরে ধরেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে। তবে এর মাঝেও ইতিবাচক থাকার চেষ্টা করছেন বাংলাদেশ প্রধান কোচ স্টিভ রোডস। না থেকে উপায়ও নেই। দলের খেলোয়াড়দের আগলে রাখাটাও তার দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। হতাশা থাকলেও মাশরাফি-সাকিব-তামিমদের নিয়ে গর্ব বোধ তিনি। সেমিফাইনালে উঠতে না পারলেও বিশ্বকাপের বাংলাদেশ দলকে নিয়ে গর্বিত রোডস।
গতকাল ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে এসেছিলেন রোডস। ভারতের বিপক্ষে হার ও বিশ্ববকাপের সেমিফাইনালে উঠতে না পারা নিয়ে কথা বলেছেন তিনি। রোডস বলেন, ‘আমি হতাশ নই। আমরা তিনটি ম্যাচ জিতেছি। বড় বড় দু’টি দলকে হারিয়েছি। সেটাও অনেক কৃতিত্বের, গর্বের। আমি আমার দলকে নিয়ে সন্তুষ্ট, গর্বিত। ছেলেরা ভালো করেছে। ভালো পারফরমেন্স করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করেছে। ’
ম্যাচের শুরুতেই বাংলাদেশ পিছিয়ে পড়ে বলে মনে করেন রোডস। কারন টস খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিলো বলে মনে করেন তিনি। রোডস বলেন, ‘আমার কাছে মনে হয়, এই উইকেটে টস খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিলো। ম্যাচ যত গড়িয়েছে উইকেট তত স্লো হয়েছে। পরের দিকে আমরা ভালো বোলিং করেছি। ভারতের বোলাররাও ভালো বল করেছে। তাদের কৃতিত্ব দিতে হবে। তারা ভালোভাবে উইকেট ব্যবহার করেছে।’
বাংলাদেশ বোলারদের প্রশংসাও করেছেন রোডস। কারন ভারত যেভাবে রান তুলছিলো তাতে মনে হচ্ছিলো, ৩৮০ থেকে ৪০০ রান করে ফেলবে। কিন্তু শেষ ১৫ ওভারে বাংলাদেশের বোলারদের দুর্দান্ত বোলিং, ভারতের ছুড়ে দেয়া টার্গেট হাতের নাগালে রাখতে পারে। তাই বাংলাদেশ বোলারদের নিয়ে রোডস বলেন, ‘ভারত যেভাবে শুরু করেছিলো, তাতে মনে হয়েছিলো ৩৮০ থেকে ৪০০ রান করে ফেলবে তারা। কিন্তু বাংলাদেশের বোলাররা সেটি হতে দেয়নি। অসাধারনভাবে ঘুড়ে দাঁড়ায়, ভারতের রানের লাগাম টেনে ধরে। আমাদের শুরুটা ভালো হয়নি। তারপরও ছেলেরা ভালো করেছে। ভাগ্য সহায় হলে হয়তো অন্য কিছু হতে পারতো।’
বোলাররা ভালো করার পরও ভারত ৩০ রান বেশি করতে পেরেছে বলে মনে করেন রোডস, ‘উইকেট সহজ ছিল বলেই ভারতীয়রা ৩০ রান বেশি করতে পেরেছে। একই উইকেট পরের সেশনে স্লো হয়ে পড়েছিল। তাই স্বচ্ছন্দ্য ও সাবলীল ব্যাটিং করা সম্ভব হয়নি। আমরা ৩০ রান বেশি দিয়েছি, আর হেরেছি ২৮ রানে।’
গতকাল ভারতের জয়ের নায়ক ওপেনার রোহিত শর্মা। ৯২ বলে ১০৪ রানের দারুন ইনিংস খেলেন তিনি। তবে এই ইনিংসটি ব্যক্তিগত ৯ রানেই থেমে যেতে পারতো। যদি না বাংলাদেশের ড্যাশিং ওপেনার তামিম ইকবাল ক্যাচ ফেলে না দিতেন। ৯ রানে তামিমের কাছে জীবন পেয়ে এবারের বিশ্বকাপে চতুর্থ সেঞ্চুরি করলেন তামিম। তবে তামিমের এই ক্যাচ ড্রপ বা তার বড় ইনিংস খেলতে না পারায় হতাশ নন রোডস। বরং তামিমের পাশেই দাড়ালেন তিনি, ‘আসলে তামিমের ভাগ্য সহায় ছিল না। সে সর্বাত্মক চেষ্টা করেছে ভালো করতে। অনুশীলনে প্রচুর পরিশ্রম ও বাড়তি ঘাম ঝরিয়েছে। অনেক মন দিয়ে ব্যাটিং অনুশীলন করেছে। কিন্তু ভাগ্য সহায় না থাকায় রান পায়নি। আসলে কখনো কখনো এমন হয়, অনেক চেষ্টা করেও সাফল্য পাওয়া যায় না। তামিমের ক্ষেত্রেও হয়ত তাই হয়েছে। ভুলে গেলে চলবে না, তামিম দলের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান। অনেক ম্যাচের জয়ের নায়কও তিনি। অতীতে তার হাত ধরেই অনেক ম্যাচ জিতেছে বাংলাদেশ। আমাদের দলের ক্যাচ ধরায় সেরাদের একজজন তামিম। ক্রিকেটে এমন হতে পারে। ঐ ক্যাচে মাশুল আমরা দিয়েছি। তবে এটি নিয়ে সমালোচনা করার পক্ষে আমি নই।’
প্রশ্ন উঠছে বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফির ফর্ম নিয়েও। এখানেও মাশরাফির পাশে দাড়ালেন রোডস। করলেন অধিনায়কের প্রশংসা, ‘মাশরাফি অনেক চেষ্টা করেছে। সে সাহসী যোদ্ধা। আজ একটা সময় নিজেকে দলের প্রয়োজনে বোলিং থেকে সরিয়ে নিয়েছে। এমন সিদ্বান্ত সব অধিনায়ক নিতে পারে না। সাহস প্রয়োজন হয়। বাংলাদেশের ক্রিকেটের এক সফল সেনাপতি মাশরাফি। এছাড়া দারুন এক মানুষ মাশরাফি। দলের জন্য তার অবদান অস্বীকার করা যাবে না।’
যতভাবেই কথা বলা হোক না কেন, বিশ্বকাপ থেকে বিদায় এটিই মেনে নেয় কঠিনই বটে। পুরো টুর্নামেন্ট জুড়ে ভালো খেলা। ৩শ’র উপর রান করে ম্যাচ জয়, বা পাহাড় সমান রান টার্গেট পেয়ে সেখানে হাল ছেড়ে না দেয়া- এগুলোর জন্য প্রশংসা পেতেই পারে বাংলাদেশ। তাই আগামী ৫ জুলাই লর্ডসে পাকিস্তানের বিপক্ষে জয় দিয়ে এবারের বিশ্বকাপ শেষ করতে উদগ্রীব রোডস, ‘অবশ্যই চেষ্টা করবো, সাফল্য দিয়েই যেন বিশ্বকাপের ইতি টানতে পারি।’
বাসস/এএসজি/এএমটি/১৭৪০/স্বব