আমার বাড়ি আমার খামারে যুক্ত হয়ে ভাগ্য ফিরেছে শ্যামলী বেগমের

253

নওগাঁ, ১ জুলাই, ২০১৯ (বাসস) : জেলায় একটি বাড়ি একটি খামার কার্যক্রমের সাথে যুক্ত হয়ে শ্যামলী বেগম স্বাবলম্বী হয়েছেন। অভাবের সাথে পাল্লা দিয়ে একদিন যে পরিবার প্রতিদিন হিমশিম খেয়েছে। সেই সংসারেই আজ এসেছে সুখ আর স্বাচ্ছন্দ।
নওগাঁ সদর উপজেলার শৈলগাছি ইউনিয়নের মকরমপুর গ্রামের মোঃ সানোয়ার হোসেন দর্জির কাজ করতেন। গৃহবধূ স্ত্রী শ্যামলী বেগম ঘরকন্যার কাজে ব্যস্ত ছিলেন। গ্রামাঞ্চলে দর্জির কাজের তেমন কোন প্রসার ছিলনা। তাই আয় ছিল খুবই সামান্য। এ সামান্য আয়ে সংসার চালানো ছিল দুরুহ। কাজেই অভাব অনটন, অনাহার অর্ধাহার ছিল সংসারের প্রাত্যহিক চিত্র।
এক পর্যায়ে শ্যামলী বেগম ২০১৪ সালে যুক্ত হন একটি বাড়ি একটি খামার কার্যক্রমের সাথে। সদস্যভুক্তি হয়ে প্রথমে ১০ হাজার টাকা ঋণ গ্রহণ করে ক্ষুদ্র ব্যবসা শুরু করেন। ছোট আকারে মুরগীর খামার গড়ে তোলেন। এ ভাবে পরবর্তীতে ২০ হাজার টাকা ঋণ গ্রহণ করেন। যথাসময়ে ঋণ পরিশোধ ও করেন। তাঁর উপর কর্মসূচির কর্মকর্তাদের আস্থা বেড়ে যায়।
আমার বাড়ি আমার খামার কর্মসূচির জেলা সমন্বয়কারী পল্লব কুমার সাহা জানিয়েছেন শ্যামলী বেগম অত্যন্ত পরিশ্রমী এবং নিষ্ঠাবান একজন সদস্য। তাকে ঋণ দেয়া কোন সংশয়ের কারণ নয়। কাজেই পরবর্তীতে তাঁকে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা হিসেবে মাত্র শতকরা ৫ টাকা সুদে ৫০ হাজার টাকা ঋণ দেয়া হয়। বড় আকারে গড়ে তোলেন মুরগীর খামার। গৃহিত ৫০ হাজার টাকা ও পরিশোধ করেন শ্যামলী বেগম। এখন তাঁর পুরোটাই নিজস্ব পুঁজি। তবে বর্তমানে পঞ্চম বারের মত ঋণ হিসেবে ১ লক্ষ টাকা প্রদানের প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয়েছে।
শ্যামলী বেগম জানান বর্তমানে তার মুরগীর খামারে ৫শ মুরগী আছে। তিনি তার খামারে ১ দিন বয়সের বাচ্চা নিয়ে এসে বড় করে ৩২ দিন বয়সে বিক্রি করেন। প্রতিটি ২০ টাকা হিসেবে ১ দিনের ৫শ বাচ্চা নিয়ে আসেন ১০ হাজার টাকায়। এ ৩২ দিনে অন্যান্য খরচের মধ্যে ২৩ বস্তা খাদ্য ৫২ হাজার ৯শ টাকা, তুষ ২ হাজার টাকা, পরিবহন খরচ ১ হাজার টাকা, ওষুধপত্র চিকিৎসা বাবদ ৭ হাজার টাকা, বিদ্যুৎ খরচ ২ হাজার টাকা অন্যান্য ১০ হাজার টাকাসহ মোট খরচ হয় ৭৪ হাজার ৯শ টাকা।
৩২ দিনের প্রতিটি মুরগীর ওজন হয় কমপক্ষে ২ কে জি করে। ৫শ মুৃরগীর মোট ওজন হয় ১ হাজার কেজি। পাইকারী মূুল্য ১৩০ টাকা কেজি হিসেবে এ ৫শ মুরগী বিক্রি হয় ১ লাখ ৩০ হাজার টাকায়। সব খরচ বাদ দিয়ে নীট মুনাফা অর্জিত হয় ৫৫ হাজার টাকা। এ আয় ৩২ দিনে বা এক মাসে। সেই হিসেবে এক বছরে শ্যামলী বেগম মোট আয় করেন প্রায় ৬ লাখ টাকা।
সংসার থেকে অভাব অনটন দূর হয়েছে। কেবলই স্বচ্ছলতা। সুখ আর সুখ। তাদের তিন মেয়ে। বড় মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে। মেজ মেয়ে নওগাঁ নার্সিং ইনষ্টিটিউটে পড়াশুনা করছে আর সবচেয়ে ছোট মেয়েটি এ বছর জিপিএ-৫ গ্রেডে এসএসসি পাস করে নওগাঁ সরকারী কলেজে ভর্তি হয়েছে। আমার বাড়ি আমার খামার কর্মসূচীর সাথে যুক্ত না হলে অভাবের কারণে মেয়েদের পড়াশুনা করানোর কথা স্বপ্নেও ভাবতে পারতেন না।