দারিদ্র্য বিমোচনের অন্যতম হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে আশ্রয়ণ প্রকল্প

237

॥একেএম কামাল উদ্দিন চৌধুরী॥
ঢাকা, ২৬ জুন, ২০১৯ (বাসস) : দরিদ্র ও ভূমিহীদের পুনর্বাসন ও পেশাভিত্তিক প্রশিক্ষণ দানের মাধ্যমে তাদের জীবনমান উন্নত করে আশ্রয়ণ প্রকল্প দারিদ্র্য বিমোচনের অন্যতম হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে। এই প্রকল্পের আওতায় সারাদেশের প্রায় ২ লাখ ৭৫ হাজার ভূমিহীন ও হতদরিদ্র মানুষকে প্রশিক্ষণ প্রদান ও আয়বর্ধক কাজে যুক্ত করার মাধ্যমে আত্মনির্ভরশীল করে তোলা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৭ সালের ২০ মে কক্সবাজারে ঘুর্ণিঝড় আক্রান্ত উপকূলীয় অঞ্চল পরিদর্শনে যাওয়ার আগে ১৯ মে ঘুর্ণিঝড় আক্রান্ত গৃহহীন ও ছিন্নমূল পরিবারগুলোকে পুনর্বাসনের নির্দেশ দেন। তখন থেকেই আশ্রয়ণ প্রকল্পের সূচনা। সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় পরিচালিত এই প্রকল্প প্রধানমন্ত্রীর ১০টি বিশেষ উদ্যোগের অন্যতম।
মোট তিনটি পর্যায়ে প্রকল্পটি আওতায় ১৯৯৭ সাল থেকে এই পর্যন্ত সর্বোমোট ২ লাখ ৯৭ হাজার ৮৮৬ পরিবারকে পুনর্বাসন করেছে। পুনর্বাসিত পরিবারগুলো যাতে সহজভাবে আয়বর্ধক কর্মকান্ডে যুক্ত হতে পারে, এই জন্য প্রকল্পের আওতায় এই পর্যন্ত ১৩৬ কোটি টাকা ঋণ প্রদান করা হয়েছে।
প্রকল্প পরিচালক মো. মাহবুব হোসেন বাসাস-কে জানান, প্রকল্প এলাকায় পুনর্বাসিত জনগোষ্ঠী আয়বর্ধক কাজের মাধ্যমে আত্মনির্ভরশীল হয়ে স্বাছন্দ্যে বসবাস করছে। তাদের ছেলে-মেয়েরা বিদ্যালয়ে যাওয়ার মধ্য দিয়ে নিজেদের ভবিষ্যতের যোগ্য নাগরিক হিসেব গড়ে তুলছে।
এ ক্ষেত্রে, স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে পুনর্বাসিত পরিবারগুলো প্রশিক্ষণ পাচ্ছে এবং উপজেলার সমবায় অফিসের মাধ্যমে তারা ঋণ পাচ্ছে। উক্ত প্রশিক্ষণ ও ঋণের মাধ্যমে তারা বিভিন্ন ধরনের ছোট ব্যবসা, যেমন পশুপালন, হাসঁ-মুরগীর খামার, বনায়ন, শাকসব্জি ও ফলের চাষ করে জীবনমান উন্নত করছে।
মাহবুব জানান, প্রতিটি পরিবারকে স্বাবলম্বী করার জন্য পরিবার প্রতি দু’জন সদস্যকে পেশাভিত্তিক প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে।
আশ্রয়ণ প্রকল্প-২-এর বাস্তবায়ন অগ্রগতি সম্পর্কে মাহবুব বলেন, ২০১৯ সালের মধ্যে ৪ হাজার ৮৪০ দশমিক ২৮ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রায় আড়াই লাখ পরিবারকে আশ্রয় দেয়ার লক্ষ্যে ২০১০ সালে সরকার আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ গ্রহণ করে। ২০১০ সালের জুলাই মাস থেকে এই পর্যন্ত এই প্রকল্পের আওতায় ১ লাখ ৯১ হাজার ৯৫৩ পরিবারকে পুনর্বাসিত করা হয়েছে।
একই সময়ে প্রকল্প এলাকায় সর্বমোট ৮৬৪টি গ্রামে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়েছে এবং প্রায় ৪ লাখ ৬০ হাজার গাছের চারা রোপণ করা হয়েছে।
প্রকল্প প্রস্তাব যাচাই বাছাই ও তথ্য সংগ্রহে সময়ক্ষেপণের কারণে প্রকল্পটি তার কাঙ্খিত লক্ষ্য পূরণ করতে পারেনি উল্লেখ করে, মাহবুব জানান, সরকার এই প্রকল্প আরো দু’বছর সম্প্রসারণের পরিকল্পনা করেছে এবং এই লক্ষ্যে ডিপিপি সংশোধনের কাজ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
মাহবুব হোসেন আশাবাদ ব্যক্ত করেন, এই প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে ভিশন-২০২১ এবং ২০৩০ অর্জন প্রক্রিয়া আরো বেগবান হবে।
এই উদ্যেগের আওতায় সমাজের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী, যেমন কুষ্ঠরোগী, হিজড়া ও ভিক্ষুকদেরও পুনর্বাসন করা হচ্ছে। কুষ্ঠ রোগীদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে কমলাপুর রেল স্টেশনে বসবাসরত ৭০ জন কুষ্ঠ রোগীকে গাজিপুর বান্দাবাড়ী আশ্রয়ণ প্রকল্পে পুনর্বাসিত করা হয়েছে।
এছাড়া তৃতীয় লিঙ্গের জন্য দিনাজপুর সদর উপজেলায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে হিজড়াপল্লি এবং রাঙ্গামাটির লংগদু এবং খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা উপজেলায় ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারগুলোর জন্য ২১৪টি বিশেষ ডিজাইনের ঘর নির্মাণ করে দেয়া হয়েছে।
বিভিন্ন আশ্রয়ণ প্রকল্পের উপকারভোগীদের সঙ্গে আলাপকালে তারা প্রকল্পের পরিবেশ নিয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন এবং ক্ষুদ্রঋণের ব্যবস্থা করার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে তারা ধন্যবাদ জানান।
সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় এই প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে তারা নতুন জীবন ফিরে পেয়েছে এবং তাদের সন্তানদের উজ্জল ভবিষ্যতের স্বপ্ন পূরণ হতে চলছে বলে তারা অভিমত ব্যক্ত করেন।
প্রকল্প পরিচালক মাহবুব হোসেন আরও জানান, কক্সবাজার জেলার সদর উপজেলায় জলবায়ু উদবাস্তু ৪ হাজার ৪০০ পরিবারকে পুনর্বাসনের লক্ষ্যে ১৩৯টি ৫ তলা বিশিষ্ট বহুতল ভবন নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। ইতোমধ্যে ২০টি ভবনের নির্মাণ কাজ প্রায় শেষ।
কক্সবাজার বিমানবন্দরের কাছাকাছি, ২৫৩ দশমিক ৩৫ একর জমির উপর এই বহুতল ভবন নির্মাণ কাজ চলছে। এখানে আধুনিক পর্যটন কেন্দ্র এবং শুটকি মহাল নির্মাণ করা হবে।