মুক্তিযুদ্ধকালে রণদা প্রসাদ সাহা হত্যা : মাহবুবুর রহমানের মৃত্যুদন্ড

313

ঢাকা, ২৭ জুন, ২০১৯ (বাসস) : মুক্তিযদ্ধের সময় দানবীর রণদা প্রসাদ সাহা (আর পি সাহা) ও তার ছেলে ভবনী প্রসাদ সাহা হত্যাকান্ডসহ তিনটি গণহত্যার অভিযোগে টাঙ্গাইলের মির্জাপুরের মাহবুবুর রহমানকে মৃত্যুদন্ড দিয়ে আজ রায় দিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল আজ এ রায় দেয় । এটি মুক্তিযদ্ধের সময় সংগঠিত মানবতাবিরোধী অপরাধ বিচারে গঠিত ট্রাইব্যুনালের ৩৮তম রায়।
প্রসিকিউটর রানা দাশগুপ্ত রায়ের প্রতিক্রিয়ায় বলেন, আনীত অভিযোগ প্রমাণে সক্ষম হয়েছে প্রসিকিউশন। রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে তিনি বলেন, এ রায় একটি মাইলফলক এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।
আসামি মাহবুবুর রহমানের পক্ষে আইনজীবী ছিলেন গাজী এম এইচ তামিম।
উভয়পক্ষের যুক্তিতর্ক শেষে গত ২৪ এপ্রিল মামলায় রায় ঘোষণার জন্য অপেক্ষমান (সিএভি) রেখে আদেশ দিয়েছিল ট্রাইব্যুনাল। পরে গতকাল ২৬ জুন রায় ঘোষণার জন্য আজ ২৭ জুন দিন ঠিক করে ট্রাইব্যুনাল।
গত বছরের ১১ ফেব্রুয়ারি ট্রাইব্যুনাল মাহবুবুর রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে নেয়। পরে ২৮ মার্চ অভিযোগ গঠন করেন ট্রাইব্যুনাল। ২০১৭ সালের ২ নভেম্বর তদন্ত সংস্থার কার্যালয়ে মামলার প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।
আসামি মাহবুবুর রহমান ১৯৭১ সালের ৭ মে মধ্যরাতে নারায়ণগঞ্জের স্থানীয় রাজাকারদের সহায়তায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর ২০-২৫ জন সদস্যকে নিয়ে রণদা প্রসাদ সাহার বাসায় অভিযান চালায়। এ আসামি এক সময় জামায়াতের সমর্থক ছিলেন। তিনি তিন তিনবার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্ধিতা করে পরাজিত হন। আসামী মাহবুব মুক্তিযুদ্ধের সময় টাঙ্গাইলের মির্জাপুরের ভারতেশ্বরী হোমসের আশপাশের এলাকা, নারায়ণগঞ্জের খানপুরের কুমুদিনী ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট ও তার আশপাশের এবং টাঙ্গাইল সার্কিট হাউজ এলাকায় অপরাধ সংঘটিত করে।
রণদা প্রসাদ সাহা বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা। মানবসেবায় অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ স্বাধীনতার পর সরকার আর পি সাহাকে মরণোত্তর স্বাধীনতা পদক দেয়। মানবহিতৈষী কাজের জন্য ব্রিটিশ সরকার রায় বাহাদুর খেতাব দিয়েছিল রণদা প্রসাদ সাহাকে। রণদা প্রসাদ সাহার বাবার বাড়ি ছিল টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে। সেখানে তিনি একাধিক শিক্ষা ও দাতব্য প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। এক সময় নারায়ণগঞ্জে পাটের ব্যবসায় নামেন রণদা প্রসাদ সাহা, থাকতেন নারায়ণগঞ্জের খানপুরের সিরাজদিখানে। সে বাড়ি থেকেই তাকে, তার ছেলে ও অন্যান্যদের ধরে নিয়ে যায় আসামি মাহবুবুর রহমান ও তার সহযোগীরা।
আসামির আইনজীবী গাজী এম এইচ তামিম বলেন, এই রায়ে তারা সংক্ষুব্ধ, তারা আপিল করবেন। নিয়ম অনুযায়ী, রায়ের এক মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ আদালতে আপিল করার সুযোগ পাবেন আসামি মাহবুবুর রহমান।
এ পর্যন্ত রায় আসা ৩৮টি মামলার ৯৬ আসামির মধ্যে ছয়জন বিচারাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। মোট ৮৮ জনের সাজা হয়েছে, তাদের মধ্যে ৬১ যুদ্ধাপরাধীর সর্বোচ্চ সাজার রায় এসেছে।
ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে আনা আপিল ও আপিল রায়ের রিভিউতে সাতটি মামলা নিস্পত্তি হয়েছে। এর মধ্যে ছয়টি রায়ের পর জামায়াতের প্রাক্তন আমীর মতিউর রহমান নিজামী ও সেক্রেটারী জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, প্রাক্তন দুই সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লা ও মুহাম্মদ কামারুজ্জামান, জামায়াতের প্রাক্তন নির্বাহী পরিষদ সদস্য মীর কাসেম আলী এবং বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীর ফাঁসি কার্যকর হয়েছে। আপিল ও আপিল রায়ের রিভিউতেও জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর আমৃত্যু কারাদন্ড দেয়া হয়েছে। এর আগে ট্রাইব্যুনাল তাকে মৃত্যুদন্ড দিয়েছিল। আরো বেশকটি মামলা আপিলে নিস্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে। পর্যায়ক্রমে এসব মামলা নিস্পত্তি হবে বলে জানায় এটর্নি জেনারেল কার্যালয়।