শরীয়তপুর কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটি আশার আলো জ্বালিয়েছে বেকার যুবকদের মনে

1134

।। এস এম মজিবুর রহমান ।।
শরীয়তপুর, ২৭ জুন, ২০১৯ (বাসস) : শরীয়তপুর কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটি আশার আলো জ¦ালিয়েছে জেলার বেকার যুবক-যুবতীদের মনে। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো শরীয়তপুরসহ আশপাশের জেলার যুবশক্তিকে জনসম্পদে পরিণত করার লক্ষ্যে ২০১৭ সাল থেকে ৬টি ট্রেডে দীর্ঘ মেয়াদী ও স্বল্প মেয়াদী কোর্সে ভর্তি শুরু করে। এ যাবত বিভিন্ন কোর্সের ২৭২ জন যুবক-যুবতীর প্রশিক্ষণ সমাপ্ত করে তাদের কর্মসংস্থানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে। প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের অধ্যক্ষ মনে করেন, এ প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটি শরীয়তপুরসহ আশপাশের জেলার যুবশক্তিকে আত্মনির্ভরশীল করে দেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে। তবে প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনীয় লোকবল সংকটের কারণে স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যহত হওয়ার কথাও জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো শরীয়তপুর জেলার সদর উপজেলার রুদ্রকর ইউনিয়নের মাকসাহার গ্রামে ২০১৪ সালে দুই একর জমির উপর প্রায় ৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটি নির্মাণ কাজ শুরু করে ২০১৭ সালে সম্পন্ন করে। এর পর ২০১৭ সালের অক্টোবর মাসে বিভিন্ন কারিগরি প্রশিক্ষণের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম চালু করে। এখানে দেশের বিভিন্ন জেলার বেকার যুবকদের ছয়মাস মেয়াদি ছয়টি কোর্সে ভর্তি করা হয়। কোর্সগুলো হচ্ছে কম্পিউটার অপারেশন, গার্মেন্টস (ড্রেস মেকিং), ইলেকট্রিক্যাল হাউজওয়্যারিং, জেনারেল ইলেকট্রনিক্স, অটোমেকানিক্স ও আর্কিটেকচারাল ড্র্যাফটিং উইথ অটোক্যাড (২উ-৩উ)। এছাড়াও শরীয়তপুর জেলার বিদেশ গমনেচ্ছুদের জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রয়েছে। রয়েছে স্বল্প মেয়াদী মোটর ড্রাইভিং উইথ বেসিক মেইনটেনেন্স কোস। ইতিমধ্যে প্রশিক্ষণ গ্রহণ শেষে প্রশিক্ষণপ্রাপ্তদের প্রায় ৭০ প্রশিক্ষণ গ্রহণকারী বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত হয়ে নিজেদেরকে করেছেন স্বাবলম্বী। প্রতিষ্ঠানে ৪৩ জন শিক্ষক (প্রশিক্ষক) থাকার কথা থাকলে ও কর্মরত রয়েছেন মাত্র ৭ জন। অপরদিকে অন্যান্য সহায়ক ষ্টাফ ৪২ জন থাকার কথা থাকলে ও রয়েছে মাত্র ১ জন। যা প্রতিষ্ঠানের সাফল্যের গতিকে ব্যহত করছে বলে মনে করছেন শিক্ষাবিদসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
কম্পিউটার অপারেশন বিভাগের আর্কিটেকচারাল ড্রাফটিং উইথ অটোক্যাড ট্রেডের নকিবুর রহমান বলেন, ২০১৮ সালের ডিসেম্বর মাসে কোর্স সফলভাবে সম্পন্ন করে চাকরি খুজতে থাকি। ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ঢকার বনশ্রীস্থ টেকজান বাংলাদেশ ক্যাপিটাল লিঃ এ প্রথমে ১২ হাজার টাকা বেতনে চাকরি করি। তিন মাসের ব্যবধানে কর্র্তৃপক্ষ এখন আমাকে ১৫ হাজার টাকা বেতন দিচ্ছেন। প্রশিক্ষণ গ্রহণের আগে আমি আমার মা-বাব, বোনসহ চারজনের সংসারে অর্থ সংকটে ছিলাম। কিন্তু কারিগরি প্রশিক্ষণ গ্রহণের পর আমার চাকরি হয়ে যাওয়ায় আমাদের সংসারে অর্থনৈতিক স্বচ্ছলা আসছে। । আমি নিজেও এখন একজন অনিয়মিত ছাত্র হিসেবে অনার্স তৃতীয় বর্ষে পড়া-লেখা করছি। কারিগরি শিক্ষা গ্রহণ না করলে আমি এ চাকরিটা পেতাম না। তাই আমার কাছে মনে হয় কারিগরি শিক্ষা হতে পারে আমাদের দেশের বেকার সমস্যা সমাধানের অন্যতম হাতিয়ার। কারিগরি শিক্ষাকে প্রাধান্য দেয়ায় আমি বর্তমান সরকারকে অভিনন্দন ও সাধুবাদ জানাই। নকিবুর রহমান শরীয়তপুর সদর উপজেলার দেওভোগ গ্রামের আক্কাসুর রহমানের বড় সন্তান।
প্রতিষ্ঠানের কম্পিউটার অপারেশনের আর্কিটেকচারাল ড্রাফটিং উইথ অটোক্যাড ট্রেডের প্রশিক্ষক সাররিমা শারমিন বলেন, বর্তমান এ তথ্য প্রযুক্তির বিশে^ প্রতিটি কর্মক্ষেত্রে এখন প্রযুক্তির ব্যাপক প্রসার লাভ করেছে। সে কারণে দেশের বেকার যুবশক্তিতে দক্ষহাতে পরিণত করতে কারিগরি শিক্ষা অতীব জরুরী। আর শরীয়তপুর কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটি যুব সম্প্রদায়কে দক্ষ হাতে পরিণত করতে বিশেষ সহায়ক ভূমিকা পালন করছে।
শরীয়তপুরের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও ভাষা সৈনিক জালাল আহমেদ বলেন, ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার এ দেশে জনসংখ্যাকে জনসম্পদে রূপান্তরিত করতে পারলেই দেশ টেকসই উন্নয়নের দিকে এগিয়ে যাবে। শরীয়তপুর কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটি জেলার যুব সমাজকে যুবসম্পদে পরিণত করতে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। শরীয়তপুর জেলার অনেক যুবক অদক্ষ শ্রমিক হিসেবে বিগত দিনে ইতালি, ফ্রান্স, জার্মান, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, বাহরাইন, কাতার, দুবাই ও সৌদি আরবসহ পৃথিবীর নানা দেশে কাজ করে দেশের জন্য অনেক বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছে। তবে বিশ^ব্যাপী শ্রম বাজারে এখন দক্ষ শ্রমিকের প্রচুর চাহিদা রয়েছে। তাই শরীয়তপুর জেলাসহ দেশের যুব শক্তিকে যদি দক্ষ জনশক্তি হিসেবে প্রেরণ করা যায় তাহলে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের পরিমানও অনেক বৃদ্ধি পাবে। দেশের ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যাকে দ্রুত জনসম্পদে রূপান্তরের অন্যতম উপায় হচ্ছে কারিগরি শিক্ষা। তাই কারিগরি শিক্ষাকে অধিক প্রাধান্য দিয়ে যুবকদেরকে দক্ষ হাতে পরিণত করতে পারলেই দেশ কাংখিত উন্নয়নের লক্ষ্যে দ্রুত সময়ে পৌছে যাবে। আর দেশ হবে উন্নত ও সমৃদ্ধ।
শরীয়তপুর কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের অধ্যক্ষ স.ম. জাহাঙ্গীর আখতার বলেন, যুবশক্তিকে আত্ম-কর্মসংস্থানে স্বনির্ভর করে দেশের অন্যতম অর্থনৈতিক সম্পদে পরিণত করতে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। কারিগরি শিক্ষা গ্রহণ করার ফলে শরীয়তপুরসহ দেশের যুবসমাজ শুধু দেশের ভেতরেই দক্ষ হাতে পরিণত হচ্ছে না, দক্ষ শ্রমিক হিসেবে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনেও রাখছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। যা আমাদের জাতীয় অর্থনীতির চেহারাকে দ্রুত পরিবর্তনে অত্যন্ত সহায়ক ভূমিকা পালন করছে। তবে এ প্রতিষ্ঠানকে আরও কার্যকর করে দেশের উন্নয়নে ভূমিকা পালনের লক্ষ্যে আমাদের লোকবল সংকট দূর করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ আশা করছি। আর এ জনবল সংকট দূর করতে পারলে এ প্রতিষ্ঠানটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভিশন ২০৪১ বাস্তবায়নে অগ্রনী ভূমিকা পালন করবে।