বাবরের সেঞ্চুরিতে সেমিফাইনালের দৌড়ে ফিরলো পাকিস্তান

382

বার্মিংহাম, ২৭ জুন ২০১৯ (বাসস) : ব্যাটম্যান বাবর আজমের সেঞ্চুরিতে দ্বাদশ বিশ্বকাপে নিজেদের সপ্তম ম্যাচে গতকাল নিউজিল্যান্ডকে ৬ উইকেটে হারালো পাকিস্তান। এই জয়ে ৭ খেলায় ৭ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের ষষ্ঠস্থানে উঠে এলো পাকিস্তান। সেই সাথে সেমিফাইনালে খেলার দৌঁড়ে ফিরলো সরফরাজের দল। অপরদিকে, এবারের আসরে প্রথম হারের স্বাদ নেয়া নিউজিল্যান্ড ৭ খেলায় ১১ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয়স্থানেই থাকলো। তাই সেমিফাইনাল নিশ্চিতের খুব কাছে দাঁড়িয়ে কিউইরা। ব্যাট হাতে ১০১ রানে অপরাজিত থেকে পাকিস্তানের জয়ে বড় অবদান রাখেন বাবর।
বার্মিংহামে ব্যাট হাতে শুরুটা মোটেও ভালো হয়নি নিউজিল্যান্ডের। পাকিস্তানের দুই পেসার মোহাম্মদ আমির শাহিন শাহ আফ্রিদির বোলিং তোপে পড়ে নিউজিল্যান্ডের টপ-অর্ডার ব্যাটসম্যানরা। স্পিনার মোহাম্মদ হাফিজকে নিয়ে নিজেদের বোলিং ইনিংস শুরু করেন পাকিস্তানের অধিনায়ক সরফরাজ আহমেদ। প্রথম ওভারে ৫ রান দেন হাফিজ। তবে দ্বিতীয় ওভারে প্রথম বলেই পাকিস্তানকে উইকেট শিকারের আনন্দে মাতিয়ে তুলেন বাঁ-হাতি পেসার মোহাম্মদ আমির। ওপেনার মার্টিন গাপটিলকে ৫ রানে থামান তিনি।
এরপর হাফিজকে আরও ১ ওভার বল করিয়ে এই প্রান্ত দিয়ে বাঁ-হাতি পেসার আফ্রিদিকে আক্রমনে আনেন সরফরাজ। নিজের দ্বিতীয় ওভারেই সাফল্যের দেখা পান আফ্রিদি। নিউজিল্যান্ডের আরেক ওপেনার কলিন মুনরোকে ১২ রানের বেশি করতে দেননি আফ্রিদি। এরপরের ওভারেও উইকেট শিকারেও মেতে উঠেন তিনি। নিউজিল্যান্ডের মিডল-অর্ডার ব্যাটসম্যান ৩ রান করা রস টেইলরকে নিজেদের দ্বিতীয় শিকার বানান আফ্রিদি। ফলে আফ্রিদির তোপে ৩৮ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে কোনঠাসা হয়ে পড়ে নিউজিল্যান্ড। কিছুক্ষণবাদে কিউইদের এই চাপ আরও বেড়ে যায়। এবারও নিউজিল্যান্ড শিবিরে আঘাত হানেন আফ্রিদি। মিডল-অর্ডারের আরেক ব্যাটসম্যানকে টম লাথামকে নিজের তৃতীয় শিকার বানান আফ্রিদি। ১ রান করেন লাথাম।
দলীয় ৪৬ রানে লাথামের আউটের পর পরিস্থিতি সামলে উঠার চেষ্টা করেন অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন ও জেমস নিশাম। এক প্রান্ত দিয়ে দলের চার ব্যাটসম্যানের যাওয়া-আসা দেখেছেন উইলিয়ামসন। তাই আবারো বড় ইনিংস খেলে দলকে খেলায় ফেরানোর চেষ্টায় ছিলেন ছিলেন তিনি। আগের দু’ম্যাচেই সেঞ্চুরি করা উইলিয়ামসন কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে আজ নিজের ইনিংসটি বড় করছিলেন।
কিন্তু ব্যক্তিগত ৪১ রানে থেমে যেতে হয় উইলিয়ামসনকে। পাকিস্তানের লেগ-স্পিনার শাদাব খানের ঘুর্ণির সামনে আত্মসমর্পন করেন তিনি। ৪টি চারে ৬৯ বলে ৪১ রান করেন কিউই অধিনায়ক। তাই ৮৩ রানে পঞ্চম উইকেট হারিয়ে দ্রুতই গুটিয়ে যাবার শংকায় পড়ে নিউজিল্যান্ড। কারন এ সময় বোলিং-এ সেরা রুপেই ছিলো পাকিস্তানের বোলাররা।
এ অবস্থায় উইকেটে থিতু গাড়ার চেষ্টা করেন নিউজিল্যান্ডের ষষ্ঠ ও সপ্তম ব্যাটসম্যান যথাক্রমে জেমস নিশাম ও কলিন ডি গ্র্যান্ডহোম। উইকেটের সাথে দ্রুত সন্ধি করে পাকিস্তানের বোলারদের সামনে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন নিশাম-গ্র্যান্ডহোম। ফলে ধীরে ধীরে লড়াইয়ে ফিরে নিউজিল্যান্ড। দ্রুত রান তোলার জন্য প্রতিপক্ষের বোলারদের উপর আক্রমনাত্মক হন গ্র্যান্ডহোম ও নিশাম। একশ-দেড়শ ছাড়িয়ে দু’শ রানের কোটা স্পর্শ করে ফেলে নিউজিল্যান্ড। ততক্ষণে জোড়া-হাফ সেঞ্চুরির স্বাদ নিয়ে নেন দু’জন। অবশেষে ৪৮তম ওভারেই বিচ্ছিন্ন হন গ্র্যান্ডহোম-নিশাম। নিজেদের ভুলে রান আউট হয়ে দলীয় ২১৫ রানে বিচ্ছিন্ন হয় এই জুটি। ৬টি চার ও ১টি ছক্কায় ৭১ বলে ৬৪ রান করেন গ্র্যান্ডহোম। এটি তার ক্যারিয়ারের তৃতীয় হাফ-সেঞ্চুরি। ষষ্ঠ উইকেটে ১২৮ বল মোকাবেলা করে ১৩২ রান করেন তারা।
গ্র্যান্ডহোম যখন ফিরেন তখন নিউজিল্যান্ডের ইনিংসের ১৪ বল বাকী ছিলো। বাকী ১৪ বল থেকে ২২ রান যোগ করেন নিশাম ও মিচেল স্যান্টনার। ষষ্ঠ হাফ-সেঞ্চুরির স্বাদ নিয়ে ৫টি চার ও ৩টি ছক্কায় ১১২ বলে ৯৭ রান তুলে অপরাজিত থাকেন নিশাম। ৫৫ ম্যাচের ওয়ানডে ক্যারিয়ারে এটিই তার সেরা ইনিংস। ৫ রানে অপরাজিত ছিলেন স্যান্টনার। পাকিস্তানের আফ্রিদি ২৮ রানে ৩ উইকেট নেন।
২৩৮ রানের সহজ টার্গেটে দলীয় ১৯ রানে প্রথম উইকেট হারায় পাকিস্তান। বাঁ-হাতি ওপেনার ফখর জামান ৯ রান করে নিউজিল্যান্ডের পেসার ট্রেন্ট বোল্টের শিকার হন।যার মাধ্যমে বল হাতে শুরুটা দারুন করে নিউজিল্যান্ড। এই ধারাটা অব্যাহত রাখতে পাকিস্তানের আরেক ওপেনার ইমাম-উল-হককেও বড় ইনিংস খেলতে দেননি লোকি ফার্গুসন। ১৯ রানে ইমামকে থামান ইনফর্ম ফার্গুসন। ফলে ৪৪ রানে দ্বিতীয় উইকেট হারাতে হয় পাকিস্তাকে।
শুরুর ধাক্কা থেকে দলকে লড়াইয়ে ফেরানোর চেষ্টা করে সফল হয়েছেন পাকিস্তানের দুই মিডল-অর্ডার ব্যাটসম্যান বাবর আজম ও মোহাম্মদ হাফিজ। তৃতীয় উইকেটে জুটিতে ৬৬ রান করেন তারা। ছয় বোলার ব্যবহারের পর অকেশনাল বোলার হিসেবে ২৫তম ওভারে আক্রমনে এসেই উইকেট তুলে নেন নিউজিল্যান্ডের অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন। ৫টি চারে ৫০ বলে ৩২ রান করা হাফিজ শিকার হন উইলিয়ামসনের।
তবে অন্যপ্রান্তে ব্যাট হাতে অবিচল ছিলেন বাবর। চতুর্থ উইকেটে তাকে ভালোই সঙ্গ দেন হারিস সোহেল। হাফিজের আউটের পরই ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ১৫তম হাফ-সেঞ্চুরি তুলে নেন বাবর। এরপর সোহেলকে নিয়ে দলের জয়ের পথ সহজ করেছেন বাবর।
আগের ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ৫৯ বলে ৮৯ রান করা সোহেল আজও হাফ-সেঞ্চুরির স্বাদ নিয়েছেন। তবে ৬৩তম বলে। তাতে কোন সমস্যা হয়নি পাকিস্তানের। কারন বাবর-সোহেলের এমন ব্যাটিং-এ জয়ের পথ পেয়েই যায় পাকিস্তান।
জয়ের বন্দরে পৌঁছানোর আগে ৪৮তম ওভারের তৃতীয় ও নিজের ১২৪তম বলে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের নিজের দশম ও এবারের আসরে প্রথম সেঞ্চুরির স্বাদ নেন বাবর। তবে চলমান আসরে এটি ১৯তম সেঞ্চুরি।
দলের জয় নিশ্চিতের খুব কাছে গিয়ে রান আউট হন সোহেল। এসময় পাকিস্তানের দরকার ছিলো ২ রান। ৫টি চার ও ২টি ছক্কায় ৭৬ বলে ৬৮ রান করেন সোহেল। চতুর্থ উইকেটে বাবরের সাথে ১৪২ বলে ১২৬ রান যোগ করেন সোহেল।
এরপর ৫ বল বাকী রেখে দলের জয় নিশ্চিত করেন বাবর ও অধিনায়ক সরফরাজ। বাবর ১১টি চারে ১২৭ বলে অপরাজিত ১০১ রান ও সরফরাজ অপরাজিত ৫ রান করেন। নিউজিল্যান্ডের বোল্ট-ফার্গুসন ১টি করে উইকেট নেন। ম্যাচ সেরা হয়েছেন পাকিস্তানের বাবর।
সংক্ষিপ্ত স্কোর : (টস-নিউজিল্যান্ড)
নিউজিল্যান্ড : ২৩৭/৬, ৫০ ওভার (নিশাম ৯৭*, গ্র্যান্ডহোম ৬৪, উইলিয়ামসন ৪১, আফ্রিদি ৩/২৮)।
পাকিস্তান : ২৪১/৪, ৪৯.১ ওভার (বাবর ১০১*, সোহেল ৬৮, হাফিজ ৩২, বোল্ট ১/৪৮)।
ফল : পাকিস্তান ৬ উইকেটে জয়ী।
ম্যাচ সেরা : বাবর আজম (পাকিস্তান)।