বাসস সংসদ-৮ : প্রস্তাবিত বাজেট গ্রাম-শহরের সুষম উন্নয়ন নিশ্চিত করবে : সরকারি দল

549

বাসস সংসদ-৮
বাজেট-আলোচনা
প্রস্তাবিত বাজেট গ্রাম-শহরের সুষম উন্নয়ন নিশ্চিত করবে : সরকারি দল
সংসদ ভবন, ২৬ জুন, ২০১৯ (বাসস) : প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে সরকারি দলের সদস্যরা বলেছেন, প্রস্তাবিত বাজেটে গ্রাম-শহরের সুষম উন্নয়ন নিশ্চিত করতে সব খাতে পর্যাপ্ত বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
তারা বলেন, কোনো বাড়তি কর না চাপানোর কারণে জনগণ প্রস্তাবিত বাজেটকে স্বাগত জানিয়েছে।
স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে আজ বিকেল ৩টা ১২ মিনিটে অধিবেশনের শুরুতে মন্ত্রীদের জন্য নির্ধারিত প্রশ্ন-জিজ্ঞাসা-উত্তর টেবিলে উপস্থাপন শেষে ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনা শুরু হয়। এক পর্যায়ে ডেপুটি স্পিকার মো. ফজলে রাব্বী মিয়া অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন।
গত ১৩ জুন অর্থমন্ত্রী আ,হ.ম মুস্তফা কামাল ২০১৯-২০ অর্থবছরের জন্য ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকার বাজেট পেশ করেন।
২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট আলোচনার ৮ম দিনে আজ স্থানীয় সরকার. পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী তাজুল ইসলাম, পাট ও বস্ত্র মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক, ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপমন্ত্রী বেগম হাবিবুন্নাহার, পানি সম্পদ উপমন্ত্রী এ.কে.এম এনামুল হক শামীম, সরকারি দলের আবুল কালাম আজাদ, শাজাহান খান, রমেশ চন্দ্র সেন, এবি তাজুল ইসলাম, নাজিমউদ্দিন আহমেদ, মুহিবুর রহমান মানিক,বদরুদ্দোজা মো. ফরহাদ হোসেন, বি এম কবিরুল হক, আসলাম হোসেন সওদাগর, কাজিম উদ্দিন আহমেদ, জাফর আলম, আয়েন উদ্দিন, মো. আক্তারুজ্জামান, এস. এম শাহজাদা, আয়েশা ফেরদৌস,বেগম শিরীন আহমেদ, কানিজ সুলতানা,জাতীয় পার্টির ফখরুল ইমাম, নূরুল ইসলাম তালুকদার, পনির উদ্দিন আহমেদ, নাজমা আকতার, বেগম খোদেজা নাসরিন আখতার হোসাইন, বিএনপির আমিনুল ইসলাম ও তরিকত ফেডারেশনের আনোয়ার হোসেন খান আলোচনায় অংশ নেন।
আলোচনায় অংশ নিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, অভ্যন্তরিন খাতে সম্পদ আহরণের জন্যে করের বোঝা না বাড়িয়ে করের আওতা বাড়ানোই সরকারের লক্ষ্য।
তিনি বলেন, এবারের বাজেটের স্বাস্থ্য খাতে ২৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। যা মোট বাজেটের ৪ দশমিক ৯ শতাংশ।
স্বাস্থ্যসেবার অভূতপূর্ব উন্নয়ন হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশ পোলিও, টিটানেস মুক্ত হয়েছে, দেশে এখন ম্যালেরিয়া নাই বললেই চলে। ১৪ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক গ্রামেগঞ্জে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ এমডিজির লক্ষ্য অর্জন করেছে। দেশের ১শ’টি মেডিকেল হয়েছে, ৪টি মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে, হাসপাতালগুলোর বেড দ্বিগুণ হয়েছে, গড় আয়ু ৭২ বছর, প্রায় আড়াই কোটি শিশুকে ভিটামিন এ ক্যাপসুল দেয়া হয় এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজকে ৫ হাজার বেডে উন্নীত করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। সকল বিষয়ে স্বাস্থসেবার ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে।
স্বাস্থমন্ত্রী বলেন, শিগগিরই ৪ হাজার ৭শ’ ডাক্তার নিয়োগ হবে। এই নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে জনবল সংকট অনেকটা দূর হবে। প্রতিটি উপজেলায় ৮ থেকে ১০ জন ডাক্তার নিয়োগ দেয়া যাবে। এতে স্বাস্থ্যসেবার আরো উন্নয়ন ঘটবে।
তিনি বলেন, আমাদের দেশে ক্যান্সার, কিডনি রোগ বৃদ্ধি পাচ্ছে, তাই প্রতিটি বিভাগে একটি করে ক্যান্সার ও একটি করে কিডনি হাসপাতাল স্থাপন করা হবে। এছাড়া এ বছর দেশে ৫শ’ আইসিইউ ইউনিট ও এবং ১১০টি ডায়ালাসিস ইউনিট স্থাপন করা হবে এবং প্রায় ৪শ’ এ্যাম্বুলেন্স ও জিপ দেয়া হবে।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক বলেন, ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগে ১ হাজার ৯৩০ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। এরমধ্যে উন্নয়ন খাতে ১ হাজার ৬৪৫ কোটি টাকা এবং পরিচালন খাতে ৩৮৫ কোটি টাকা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১০ বছর আগে যখন ডিজিটাল বাংলাদেশের ঘোষণা দেন তখন এটা দেশের মানুষের কাছে ছিল একটি অলিক কল্পনা। অথচ ১০ বছর পর এটি সারা বিশ্বের মানুষের কাছে এটি একটি ‘বিপ্লবের বা উন্নয়নের দর্শন’ হিসেবে বিবেচিত।
তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় তথ্য বিষয়ক উপদেষ্টা সজিব ওয়াজেদ জয়ের প্রত্যক্ষ নেতৃত্বে ও নির্দেশনায় ৪টি পিলারকে শক্তিশালী করে গড়ে তুলতে চেয়েছি-প্রথমত মানবসম্পদ উন্নয়ন, দ্বিতীয়ত প্রতিটি নাগরিকের জন্য ইন্টারনেটে সংযোক্ত করা, তৃতীয়ত সরকারের সেবাগুলো জনগণের দোড়গোড়ায় পৌঁছে দেয়া এবং তথ্য প্রযুক্তি শিল্পে উন্নয়ন ঘটানো। এই ৪টি স্তম্ভকে শক্তিশালী করার জন্য ১০ বছর আগে নির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিলাম। তা হলো-২০২১ সাল নাগাদ ৯০ শতাংশ নাগরিক সেবা অনলাইনে নিয়ে আসা, আইটি পেশাজীবী হবে ২০ লাখ এবং তথ্য প্রযুক্তি খাতে রপ্তানী আয় হবে ৫ বিলিয়ন ডলার। এই লক্ষ্যগুলো পূরণের জন্য কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করে ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে এগিয়ে যাচ্ছি।’
ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে দেশের উন্নয়নের প্রতিটি সূচক উধ্বমুখী। এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের জিডিপির গ্রোথ সবচেয়ে বেশি। একটি ভিশনারী লিডারশীপ থাকলে একটি দেশ কতদূর যেতে পারে তার একটি উজ্জল দৃষ্টান্ত হচ্ছে শেখ হাসিনা।
স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী তাজুল ইসলাম বলেন, বঙ্গবন্ধুর সমবায় দর্শনকে কাজে লাগিয়ে সমবায়ের ভিত্তিতে চাষাবাদ করলে কৃষকরা ৪ গুন লাভবান হবেন এবং শ্রমিক সংকটেরও সমাধান হবে। পরীক্ষামূলকভাবে নিজের নির্বাচনী এলাকায় তা চালু করতে যাচ্ছেন বলে তিনি জানান।
টেকসই অবকাঠামোর জন্য প্রশিক্ষিত নির্মাণ শ্রমিক প্রয়োজন উল্লেখ করে তিনি জানান, স্থানীয় সরকারের আওতাধীন রাস্তাগুলোর রক্ষণাবেক্ষণের লক্ষ্যে একটি সফটওয়্যার নিয়ে কাজ চলছে। এই সফটওয়্যারের মাধ্যমে রাস্তাগুলোর অটো ডায়াগনস্টিক হবে এবং সে অনুযায়ী প্রকৌশলীরা এগুলোর সংস্কার ও সংরক্ষণ করতে পারবেন।
সিটি কর্পোরেশন ও পৌর এলাকার ড্রেনেজ ব্যবস্থা এবং বর্জ ব্যবস্থাপনা উন্নয়নে সরকার কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করছে বলে মন্ত্রী জানান।
বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী বলেন, পাট খাতের বিদ্যমান সমস্যা চিহ্নিত করে, তা সমাধানের লক্ষ্যে পাট আইন’ ২০১৭ এবং পাট নীতি ২০১৮ গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়েছে। সরকারের সহযোগিতায় বিজ্ঞানীরা পাটের জন্মরহস্য উন্মোচনসহ পলিথিনের বিকল্প পাটের তৈরি সোনালী ব্যাগ উদ্ভাবন করেছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ পাটকল কর্পোরেশন (বিজেএমসি) পরিবেশ বান্ধব পাটের বহুমুখী ব্যবহার এবং পাটজাত পণ্যের বাজারজাতকরণে নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। বিজেএমসি পাট পাতা থেকে উৎপাদিত অর্গানিক পানীয় ‘জোট টি’ উৎপাদন করে এবং পাট পাতা জার্মানিতে রপ্তানী করে গত ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৩৬ হাজার ডলার বৈদেশিক মূদ্রা অর্জন করেছে।
মন্ত্রী বলেন, বর্তমানে সরকারি খাতে ২৫টি এবং বেসরকারি খাতে ১৩৬টি পাটকল ও ৭০টি স্পিনিং মিল রয়েছে। তাঁতশিল্পের উন্নয়নে সরকার তাঁতীদের জন্য ক্ষুদ্র ঋণ কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।
পানি সম্পদ উপমন্ত্রী একেএম এনামুল হক শামীম বলেন, অর্থমন্ত্রীর প্রস্তাবিত বাজেট বাস্তবসম্মত ও বাস্তবায়নযোগ্য। বিএনপি আমলের ২০০৫-০৬ অর্থবছরের বাজেট থেকে ৮ গুন বড় হলেও এই বাজেটে দেশের জনসাধারণের উপর কোন অতিরিক্ত বোঝা চাপিয়ে দেয়া হয়নি। দেশের মানুষ বাজেটকে স্বাগত জানিয়েছে। কারণ এদেশের মানুষ মনেপ্রাণ বিশ্বাস করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতেই এদেশ নিরাপদ, অন্য কারো হাতেই নিরাপদ নয়। তাঁর মাধ্যমেই দেশের মানুষের ভাগ্যোন্নয়ন সম্ভব।
সরকারি দলের সদস্য শাজাহান খান বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন অনেক বেশি সমৃদ্ধ। পাকিস্তানের অর্থনীতিবিদরা বলেছেন, আগামী ৫ বছরের মধ্যে ওই দেশকে সুইজারল্যান্ড বানানো হবে। তখন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী বলেন, সুইজারল্যান্ডের মতো করতে হবে না, বাংলাদেশ বানিয়ে দাও।’
বাসস/এমআর/এমএসএইচ/২১৪৫/-আমি