সংসদ উপ-নির্বাচনকে ঘিরে উলিপুরে সম্ভাব্য প্রার্থীরা ব্যস্ত

238

কুড়িগ্রাম, ১৮ জুন, ২০১৮ (বাসস) : কুড়িগ্রাম-৩ সংসদীয় আসনের উপনির্বাচন আগামী ২৫ জুলাই অনুষ্ঠিত হবে। ১০ জুন নির্বাচন কমিশন এ আসনের উপনির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে। তফসিল ঘোষণার সাথে সাথে সম্ভাব্য প্রার্থীরা তাদের জনসংযোগ বাড়িয়ে দিয়েছেন। মনোনয়ন প্রত্যাশীদের দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়েছে। দলীয় প্রধানের ছবি সম্বলিত ব্যানার, ফেস্টুন, পোস্টার ও বিলবোর্ডে ছেয়ে গেছে পুরো নির্বাচনী এলাকা। এ ছাড়াও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজ পছন্দের প্রার্থীর গুণকীর্তনসমৃদ্ধ স্ট্যাটাস দিয়ে চালানো হচ্ছে প্রচার প্রচারণা। মনোনয়ন পেতে নির্বাচনী এলাকাসহ দলীয় হাইকমান্ডের সঙ্গেও প্রার্থীরা যোগাযোগ করছেন বলেও জানা গেছে। অনেকে নির্বাচনী প্রচারনা হিসেবে গত রমজানে ইফতার মাহফিলের আয়োজনও করেছিলেন। ঈদের পর চলছে বিভিন্ন স্থানে শুভেচ্ছা বিনিময় ও ভোজন। বর্তমানে উপজেলার সর্বত্রই চলছে নির্বাচনী আমেজ। চায়ের দোকান থেকে শুরু করে সবখানে চলছে পছন্দের প্রার্থীর গুণগান।
জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে উলিপুর উপজেলার বুড়াবুড়ি ইউনিয়নের বাসিন্দা ও রংপুরের প্রাইম মেডিকেল কলেজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. আক্কাছ আলী সরকারের নাম অনেকে আগেই ঘোষণা করেছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ। নিজ দলের প্রার্থীকে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্য ১০ জুন উলিপুর সফরও করেন এরশাদ। ওইদিন আয়োজিত জনসভায় জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় প্রায় সকল শীর্ষ নেতা উপস্থিত ছিলেন। তীব্র গরম উপেক্ষা করে হাজারো মানুষের ঢল নামে জনসভায়। তবে আক্কাস আলীকে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করায় জাতীয় পার্টির একটি অংশসহ সুধীমহলে রয়েছে বিরূপ প্রতিক্রিয়া। এর আগে জাপা চেয়ারম্যান এরশাদ ও তাঁর ছোট ভাই মোজাম্মেল হক লালু এবং মাওলানা মতিউর রহমান জাপার টিকিটে নির্বাচনে জিতলেও তেমন কোন উন্নয়ন করতে না পারায় জাপা প্রার্থীদের প্রতি অনীহা রয়েছে অনেক ভোটারের। তবে দীর্ঘদিন ধরে এলাকার মসজিদ, মন্দির, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজে ব্যক্তিগভাবে সহযোগিতা করে আসছেন ডা. আক্কাস আলী সরকার। তাই তাঁর ব্যাপারে ভোটারদের আগ্রহ রয়েছে।
ডা. আক্কাছ আলী সরকার বলেন, ‘উলিপুরে লাঙ্গলের দুর্গকে কেউ ভাঙতে পারবে না। আমি নির্বাচিত হলে উলিপুর উপজেলাকে একটি স্মার্ট উপজেলায় পরিণত করার চেষ্টা করবো। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নসহ মানুষের সার্বিক উন্নয়নে কাজ করবো। যাতে এলাকার প্রতিটি মানুষ চিকিৎসা সেবা পান। সেইসাথে মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে শহরকে সিসি ক্যামেরার আওতায় আনতে চেষ্টা করবো। পার্টির চেয়ারম্যান আলহাজ¦ হুসাইন মুহাম্মদ এরশাদকে এ এলাকার মানুষ খুব ভালবাসেন। আমার বিশ^াস এ ভালবাসার প্রতিদান আমি দিতে পারবো ইনশাল্লাহ।’
তবে ৯১’র পর থেকে আওয়ামী লীগ আসনটি পুনরুদ্ধার করতে না পারায় হতাশা রয়েছে দলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে। সেই নির্বাচনে আমজাদ হোসেন তালুকদার বৃহত্তর রংপুরের ২২টি আসনের একমাত্র বিজয়ী ছিলেন আওয়ামীলীগ থেকে। তবে আগের মতো আর তার জনপ্রিয়তা নেই। তার পুত্র সাজেদুর রহমান তালুকদার উঠতি নেতা হিসেবে কিছুটা জনপ্রিয়তা রয়েছে। দলের অন্যান্য মনোনয়ন প্রার্থীর মধ্যে রয়েছেন, অধ্যাপক এমএ মতিন। যিনি মতিন কারিগরি কলেজের প্রতিষ্ঠাতা ও দলের সাবেক নেত্রী প্রয়াত অধ্যক্ষ নাসিমা বানুর স্বামী। বেশ কিছুদিন ধরে তিনি জনসংযোগ করছেন। এ ব্যাপারে অধ্যাপক মতিন বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে উলিপুরের মানুষ উন্নয়ন বঞ্চিত ছিলেন। তারা চান স্থানীয় একজন পছন্দের মানুষ। যিনি সুখে দু:খে মানুষের পাশে থাকবেন। আমাকে মনোনয়ন দিলে একগুচ্ছ উন্নয়ন পরিকল্পনা নিয়ে উলিপুরের মানুষের ভাগ্য বদলের চেষ্টা করবো।’
২০১৪ সালের ১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন পেয়েছিলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মতি শিউলী। তবে মহাজোটের কারণে আসনটি ছেড়ে দিতে হয়। এবার তিনি মনোনয়ন চাইছেন। নানা কারণে আগের মতো তাঁর জনপ্রিয়তা না থাকলেও তিনিও একজন শক্ত মনোনয়ন প্রার্থী। মনোনয়নের ব্যাপারে উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মতি শিউলি বলেন, ‘মাঠপর্যায়ে জরিপ করে মনোনয়ন প্রদান করলে লাঙ্গলের দুর্গ ভেঙে জননেত্রী শেখ হাসিনাকে এ আসন উপহার দিতে পারবো।’ এছাড়াও উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম হোসেন মনটু, পৌর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আবু সাঈদ সরকার ও অধ্যক্ষ আহসান হাবীব রানা পোষ্টার ও বিলবোর্ড টাঙ্গিয়ে প্রচারণা চালাচ্ছেন। তবে চিলমারী থেকে কেউ মনোনয়ন চাইবেন না বলে দলীয় সুত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
শেষ পর্যন্ত আসনটি উন্মুক্ত থাকবে নাকি জাপাকে ছেড়ে দেয়া হবে তা পরিষ্কার না হলেও যার যার অবস্থান থেকে জনসংযোগ এবং লবিং চালিয়ে যাচ্ছেন। এদিকে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাইফুর রহমান রানা জানিয়েছেন, আসন্ন উপ-নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেবে না।
জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা জানান, ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী ২৪ জুন মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ তারিখ। ২৬ জুন মনোনয়নপত্র বাছাই ও ৩ জুলাই প্রত্যাহারের শেষ দিন। আগামী ২৫ জুলাই ওই আসনের উপ-নির্বাচনে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।
জেলা নির্বাচন অফিস সূত্র জানিয়েছে, কুড়িগ্রাম-৩ সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্বিন্যাস করা হলেও এই উপনির্বাচন ১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্বাচনী সীমানা অনুযায়ী অনুষ্ঠিত হবে। পূর্ববর্তী সীমানা অনুযায়ী কুড়িগ্রাম-৩ আসনের বর্তমান ভোটার সংখ্যা প্রায় ৩ লাখ ৬৬ হাজার ৮১১ জন। আসনটিতে উলিপুর উপজেলার সাহেবের আলগা ইউনিয়ন ব্যতীত বাকি অংশ এবং চিলমারী উপজেলার রমনা, থানাহাট, চিলমারী ও রাণীগঞ্জ ইউনিয়ন অন্তর্ভুক্ত। গত ১১ মে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য একেএম মাইদুল ইসলামের মৃত্যুতে আসনটি শূন্য হয়ে পড়ে।