বাসস ক্রীড়া-২২ : দক্ষিণ আফ্রিকাকে বিদায় করে নিজেদের আশা বাঁচিয়ে রাখল পাকিস্তান

662

বাসস ক্রীড়া-২২
ক্রিকেট-বিশ্বকাপ
দক্ষিণ আফ্রিকাকে বিদায় করে নিজেদের আশা বাঁচিয়ে রাখল পাকিস্তান
লর্ডস, ২৩ জুন, ২০১৯ (বাসস) : টিকে থাকার ম্যাচে ঠিকই জ্বলে উঠল পাকিস্তান। বিশ্বকাপে আজ নিজেদের গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ৪৯ রানে হারিয়েছে পাকিস্তান। আর এই জয়ে বিশ্বকাপের সেমিতে উঠার একটা সম্ভাবনা টিকিয়ে রাখল পাকিস্তান। তবে এই ম্যাচ হেরে সেমিতে উঠার সব পথই বন্ধ হয়ে গেলে দক্ষিণ আফ্রিকার। ট স জিতে ব্যাট করে ৭ উইকেটে ৩০৮ রান সংগ্রহ করে পাকিস্তান। ফলে জয়ের জন্য দক্ষিণ আফ্রিকার সামনে টার্গেট ছিল ৩০৯ রান। ব্যাট করতে নেমে দক্ষিণ আফ্রিকা ৯ উইকেটে ২৫৯ রান করলে পাকিস্তান জয় পায় ৪৯ রানে। ব্যাটে-বলে পাকিস্তানের সামনে পাত্তাই পায়নি দক্ষিণ আফ্রিকা। ব্যাট হাতে হারিস সোহেল আর বাবর আজম অসাধারণ ব্যাটিং করে পাকিস্তানকে বড় স্কোর এন দেন। এরপর বল হাতে মোহাম্মদ আমির, শাদাব খান আর ওয়াহাব রিয়াজ দক্ষিণ আফ্রিকাকে ২৫৯ রানে আটকে দেন য় জয়। এটি পাকিস্তানের দ্বিতীয় জয়। আর এই জয়ে ৫ পয়েন্ট নিয়ে সাত নম্বরে উঠে সেমিফাইনালের আশা টিকিয়ে রাখল দলটি।
জয়ের জন্য দক্ষিণ আফ্রিকার সামনে ৩০৯ রানের টার্গেটটা কঠিনই ছিল। এই কঠিন টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে শুরুতে উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে দলটি। দলীয় মাত্র ৪ রানে দক্ষিণ আফ্রিকা হারায় ওপেনার হাশিম আমলার উইকেট। মাত্র ২ রানে আমলার উইকেট তুলে নিয়ে পাকিস্তানের বোলিংয়ের চমকটা দেন মোহাম্মদ আমির। দলীয় ৪ রানের প্রথম উইকেট হারানো দলকে এগিয়ে নিতে ওয়ানডাউনে ব্যাট করতে নামা অধিনায়ককে নিয়ে জুটি করেন ওপেনার কুইন্টন ডি কক। এই জুটিই দলকে এগিয়ে নেয় সামনের দিকে। এই জুটি ভাঙ্গার আগেই দক্ষিণ আফ্রিকা পৌছে যায় ৯১ রানে। ওপেনার ডি ককের বিদায়ে ভাংগে এই জুটি। এই জুটির সংগ্রহ ৮৭ রান। শাদাব খানের বলে ইমাম উল হককে ক্যাচ দেয়ার আগে ডি কক করেন ৪৭ রান। ৬০ বলে ৩ চার আর ২ ছক্কায় সাজানো ছিল তার ইনিংসটি। তবে ব্যাট করতে নেমে ভালো করতে পারেননি মার্করাম। মাত্র ৭ রান করে শাদাব খানেব বলে বোল্ড হলে ১০৩ রানে দক্ষিণ আফ্রিকা হারায় তিন উইকেট। দলীয় ১৩৬ রানে দলটি হারায় অধিনায়ক ডু প্লেসিস এর গুরুত্বপূর্ন উইকেট। মোহাম্মদ আমিরের বলেই ফিরতে হয় এই অধিনায়ককে। তবে আউট হওয়ার আগে তিনি খেলেন গুরুত্বপূর্ণ ৬৩ রানের ইনিংস। ৭৯ রানের ৫ চারে সাজানো ছিল তার ইনিংটি। আমির আর শাদব খানের বোলিংয়ে ১৩৬ রানে প্রথম চার উইকেট হারিয়ে চাপেই পড়ে দলটি। তবে রাসি ভ্যান ডরি ডুসেন আর ডেভিড মিলার মিলে জুটি করে দলকে এগিয়ে নেয়ার চেস্টা করেন। কিন্তু দলীয় ১৮৯ রানে হয় এই জুটির পতন। হাফিজের হাতে ডুসেনকে ক্যাচ বানিয়ে বিদায় করেন শাদাব খানই। আউট হওয়ার আগে ডুসেন ৪৭ বলে এক চার আর এক ছক্কায় করেন ৩৬ রান। ডুসেনের বিদায়ে বেশি সময় টিকতে পারেননি মিলারও। দলীয় ১৯২ রানে শাহীন শাহ আফ্রিদির বলে বোল্ড হয়ে মাঠ ছাড়ার আগে তিনি করেন ৩৭ বলে ৩১ রান। ফলে দলীয় দুইশত রানের কোটা পার করার আগেই ৬ উইকেট হারিয়ে ম্যাচ থেকে অনেকটাই ছিটকে যায় দক্ষিণ আফ্রিকা। ব্যাট করতে নেমে ক্রিস মরিস, রাবাদা আর এনগিদি ভালো করতে পারেননি। এই তিন জনকেই ফিরতে হয়েছে ওয়াহাব রিয়াজের বলে। মরিস ১৬ রান, রাবাদা ৩ রান আর এনগিডি আউট হন ১ রান করে। ফলে ৯ উইেেকটে ২৫৯ রানেরই আটকে যায় দক্ষিণ আফ্রিকা। পাকিস্তান জয় পায় ৪৯ রানে। ফেলুকুয়াও চেস্টা করেও দলকে এগিয়ে নিতে পারেননি। তিনি ৩২ বলে ৬ চারে ৪৬ রানে অপরাজিত ছিলেন। পাকিস্তানের পক্ষে শাদাব খান আর ওয়াহাব রিয়াজ নেন তিনটি করে উইকেট। মোহাম্মদ আমির নেন দুটি উইকেট।
লর্ডসে টস জিতে আগে ব্যাট করতে নেমে পাকিস্তান ৭ উইকেটে করেছে ৩০৮ রান। ফলে জিততে হলে দক্ষিণ আফ্রিকাকে করতে হবে ৩০৯ রান। এই ম্যাচে হারলেই বিদায় নিশ্চিত হয়ে যাবে যে কোন দলের। তবে বাচা-মরার ম্যাচে আগে ব্যাট করে দক্ষিণ আফ্রিকাকে টার্গেটা ঠিকই বড় দিতে পেরেছে পাকিস্তান। হারিস সোহেল আর বাবর আজমের অসাধারণ ব্যাটিংয়ের ওপর ভর করেই স্কোরটা বড় করেল দলটি। লর্ডসে আগে ব্যাট করতে নেমে প্রথম থেকেই দক্ষিণ আফ্রিকান বোলারদের ভালো ভাবেই সামলেছেন দু-ওপেনার ইমাম উল হক-ফখর জামান জুটি। এই জুটি বিচ্ছিন্ন হওয়ার আগেই পাকিস্তান পৌছে যায় ৮১ রানে। ছয়টি চার ও একটি ছক্কার সাহায্যে ৫০ বল মোকাবেলায় ব্যক্তিগত ৪৪ রান করে ইমরান তাহিরের শিকার হন ফখর জামান। বিদায়ে ভাংগে ওপেনিং জুটি। ওয়ানডাউনে ব্যাট করতে নেমে বাবর আজম প্রথম থেকেই দলকে এগিয়ে নেয়ার চেস্টা করেছেন। সফলও হয়েছেন। অবশ্য দলীয় ৯৮ রানে পাকিস্তান হারায় দ্বিতীয় উইকেট। এবার অপর ওপেনার ইমাম উল হককেও বিদায় করেন ইমরান তাহির। ইমরান তাহিরের বলে তার হাতেই ক্যাচ দিয়ে মাঠ ছাড়েন এই ওপেনার। ইমাম ৫০ বলে ৬ বাউন্ডারিতে করেন ৪৪ রান। ইমামকে বিদায় করতে দুর্দান্ত এক ক্যাচ ধরলেন ইমরান তাহির নিজেই। নিজের বলেই ঝাঁপিয়ে পড়ে উইকেটের ওপর এক হাতে বলটি তালুবন্দী করেন এই স্পিনার। ইমামকে ফিরিয়ে একটি রেকর্ড গড়েছেন তাহির। বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি এখন তিনি। ৩৯ উইকেট নিয়ে পেছনে ফেলেছেন অ্যালান ডোনাল্ডকে। পাকিস্তানের বিপক্ষে মাঠে নামার আগে ৩৭ উইকেট ছিল তাহিরের। ইংল্যান্ড ও ওয়েলস বিশ্বকাপে ৭ ম্যাচ ও ৬ ইনিংসে ১০ উইকেট নিয়ে সপ্তম স্থানে আছেন তিনি। দক্ষিণ আফ্রিকার সেবা বোলাররা যখন উইকেট নিতে ব্যর্থ ছিলেন সেখানে ইমরান তাহিরকে দিয়েই প্রথম সফল হন দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক ফ্যাফ ডু প্লেসিস। কারণ ইমরান তাহির বল করতে এসেই ফেরালেন দুই ওপেনারকে। দলের শতরানের আগে দুই ওপেনারকে হারালেও মোহাম্মদ হাফিজকে নিয়ে দলকে এগিয়ে নেয়ার চেস্টা করেন বাবর আজম। অবশ্য হাফিজ তার ইনিংসটি বড় করতে পারেননি। পারেননি বেশি সময় টিকে থেকে দলকে এগিয়ে নিতে। দলীয় ১৪৩ রানে আইডেন মার্করামের বলে এলবি আউট হন হাফিজ। আউট হওয়ার আগে ৩৩ বলে এক ছক্কায় তিনি করেন ২০ রান। হাফিজের বিদায়ের পর বাবর আজমের সাথে ব্যাট করতে নেমে দলকে ঠিকই এগিয়ে নেন হারিস সোহেল। এই জুটিই পাকিস্তানকে বড় স্কোরের পথে নিয়ে যায়। জুটিতে ৮১ রান আসার পর দলীয় ২২৪ রানে ভাঙ্গে জুটি। বাবর আজমকে লুঙ্গি এনগিডির ক্যাচ বানিয়ে ভয়ংকর হয়ে উঠা এই জুটি বিচ্ছিন্ন করেন ফেলুকুয়াও। আউট হওয়ার আগে ৬৯ রানের ইনিংস খেলেন বাবর। ৮০ বলে ৭ বাউন্ডারিতে সাজানো ছিল তার ইনিংসটি। বিশ্বকাপে বাবরের এটা দ্বিতীয় ফিফটি। বাবর আজমের বিদায়ে ব্যাট করতে নেমে ইমাদ ওয়াসিম শুরুটা করেছিলেন ঝড়ের বেগেই। কিন্তু টিকতে পারলেননা বেশি সময়। মাত্র ১৫ বলে খেলে ৩ চারে ২৩ রান করার পর এনগিডির বলে আউট হয়ে মাঠ ছাড়েন। ফলে তিন শত রানের আগেই পাকিস্তান হারায় ৫ উইকেট। তবে ওয়াহাব রিয়াজকে নিয়ে দলের স্কোরটা তিনশত রানের কোটায় নিয়ে যান হারিস সোহেল। দলীয় ৩০৪ রানে মাত্র ৪ রান করে এনগিডির বলে বোল্ড হন ওয়াহাব রিয়াদ। আর দলকে ৩০৭ রানে পৌছে আউট হন দলের পক্ষে সর্বোচ্চ রান করা হারিস সোহেল। হারিস সোহেলকেও বিদায় করেন এনগিডি। তবে আউট হওয়ার আগে ৮৯ রানের এক অসাধারন ইনিংস খেলেন হারিস। বিশ্বকাপে দ্বিতীয় ম্যাচ খেলতে নেমে তিনি তুলে নেন প্রথম ফিফটি। মাত্র ১১ রানের জন্য সেঞ্চুরি পাননি তিনি। তার ব্যাটে ভর করে তিনশ পেরোনো সংগ্রহ পায় পাকিস্তান। দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে এনগিডি তিনটি আর ইমরান তাহির নেন দুটি উইকেট।
বাসস/২৩৫৭/স্বব