বাসস সংসদ-৮ : এ বাজেটের মাধ্যমে গ্রাম হবে শহর প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা বাস্তবায়ন কাজ আরো এগিয়ে যাবে : সরকারি দল

365

বাসস সংসদ-৮
বাজেট-আলোচনা
এ বাজেটের মাধ্যমে গ্রাম হবে শহর প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা বাস্তবায়ন কাজ আরো এগিয়ে যাবে : সরকারি দল
সংসদ ভবন, ২৩ জুন, ২০১৯ (বাসস) : প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে সরকারি দলের সদস্যরা বলেছেন, প্রস্তাবিত বাজেটের মাধ্যমে ‘গ্রাম হবে শহর’ প্রধানমন্ত্রীর এ ঘোষণা বাস্তবায়ন কার্যক্রম আরো এগিয়ে যাবে।
স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে আজ বিকেল ৩টা ১৯ মিনিটে অধিবেশনের শুরুতে মন্ত্রীদের জন্য নির্ধারিত প্রশ্ন-জিজ্ঞাসা-উত্তর টেবিলে উপস্থাপন শেষে ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনা শুরু হয়। এক পর্যায়ে ডেপুটি স্পিকার মো. ফজলে রাব্বী মিয়া অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন।
গত ১৩ জুন অর্থমন্ত্রী আ,হ.ম মুস্তফা কামাল ২০১৯-২০ অর্থবছরের জন্য ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকার বাজেট পেশ করেন।
২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট আলোচনার ৫ম দিনে আজ পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, সরকারি দলের আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, ডা.আফসারুল আমিন, আবুল হাসান মাহমুদ আলী, ইমাজউদ্দিন প্রামানিক, আব্দুস সালাম মুর্শেদী, এ কে এম রহমতুল্লাহ, আবদুল্যাহ আল ইসলাম জ্যাকব, নুরুন্নবী চৌধুরী, মোরশেদ আলম, নজরুল ইসলাম বাবু, কাজী নাবিল আহমেদ, ইকবাল হোসেন, জয়াহেরুল ইসলাম, বেগম আদিব আনজুম মিতা, তাহমিনা বেগম, জাকিয়া তাবাসুম, জাতীয় পার্টির আবু হোসেন বাবলা, বেগম রওশন আরা মান্নান, গণফোরামের সুলতান মোহাম্মদ মুনসুর, আলোচনায় অংশ নেন।
আলোচনায় অংশ নিয়ে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম প্রস্তাবিত বাজেটের ব্যাপারে বিএনপিসহ বিভিন্ন মহলের সমালোচনার জবাবে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার ক্রমাগত উচ্চাভিলাশী বাজেট দিয়ে তা সফলভাবে বাস্তবায়ন করছে বলেই আজ বাংলাদেশ খাদ্য, কৃষি শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিদ্যুৎ, অবকাঠামোসহ সব ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নয়ন করা সম্ভব হয়েছে। ধারাবাহিকভাবে উচ্চতর প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব হয়েছে। আর এ জন্যই আজ বাংলাদেশে বিশ্বের কাছে উন্নয়নের এক অনন্য উদাহরণ।
তিনি বলেন, যারা বাজেটকে উচ্চাভিলাষী ও বাস্তবায়নযোগ্য নয়সহ বিভিন্ন সমালোচনা করছেন, গত দশ বছরের বাংলাদেশের উন্নয়ন চিত্র তাদের চোখে পড়ে না। দশ বছরে সব খাতে অভূতপূর্ব উন্নয়নের ফলে দেশ আজ নিন্ম মধ্যম আয়ের দেশ থেকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হতে যাচ্ছে। আর উন্নয়নে উচ্চাভিলাষ ছিল বলেই এটা সম্ভব হয়েছে। আর উচ্চাভিলাষ কেবল বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার পক্ষেই করা সম্ভব হয়েছে। আর উচ্চাভিলাষী বাজেট দিয়ে তা বাস্তবায়নও সম্ভব হয়েছে।
শাহরিয়ার আলম বলেন, আজ বাংলাদেশ যে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশে পরিণত হবার অপার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে তার সব নীতি-কাঠামো জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দিয়ে গেছেন। তার করা সেই নীতি কাঠামো অনুযায়ি তাঁর সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনা দেশ পরিচালনা করে দেশকে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশে পরিনত করার দিকে সফলভাবে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন।
তিনি বলেন, স্বাধনিতার ৪৮ বছরে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এ পর্যন্ত ১৫ বছর দেশ পরিচালনা করছে। আরো ৯ বছর দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পালনের পর আওয়ামীলীগ শাসন আমল সম্পর্কে মূল্যায়ন করা যাবে।
প্রতিমন্ত্রী পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিভিন্ন দিক তুলে ধরে বলেন, চলতি অর্থবছরের এ পর্যন্ত বিদেশে ৮টি নিজস্ব দুতাবাস ভবন স্থাপন করা হয়েছে। আরো ১০টি দেশে দুতাবাস ভবন স্থাপন করা হবে।
বিদ্যুৎ, জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, তারেক, মামুন ও খালেদা জিয়া অর্থ আত্মসাৎ এবং দুর্নীতির মাধ্যমে নাইকো নামক একটি কোম্পানীকে দেশের গ্যাসফিল্ডগুলো দিয়ে ৫শ’ এমএমসি গ্যাস এবং আশপাশের পরিবেশসহ প্রায় ১শ’ বিলিয়ন ডলারের ক্ষতি করেছে। এই মামলা এখন চলমান রয়েছে।
এফবিআইয়ের তদন্ত রিপোর্টের উদ্বৃতি দিয়ে তিনি বলেন, তারেক জিয়ার বন্ধু ও বিজনেস পার্টনার মামুন প্রকাশ্য স্বীকার করেছে তখন গ্যাস পাইপ লাইন ও গ্যাস সাপ্লাইয়ের যত অর্থ আসতো তার সবকিছুই তিনি গ্রহণ করেছেন। ঢাকায় নিযুক্ত আমেরিকার সাবেক রাষ্ট্রদূত মরিয়ার্টি তার রিপোর্টে তারেকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির বিনিময়ে দেশের মন্ত্রীত্ব বিক্রির অভিযোগও করেছেন। মরিয়ার্টির রিপোর্টে তারেক রহমান সম্পর্কে বলা হয়, ‘২০০১ সালের নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে জোট গঠন এবং নির্বাচনে জয় লাভ কৌশলগত বুদ্ধি প্রয়োগের কৃতিত্ব তার রয়েছে। ৬০ সদস্যের মন্ত্রিপরিষদের এক তৃতীয়াংশ তিনি বিক্রি করেছেন। তিনি খুবই নির্দয়, দুর্নীতিগ্রস্ত, একাডেমিক পড়াশুনার অবস্থাও খুব ভাল নয়। রাজনীতিতে অপরিপক্ক, হাওয়া ভবন নামে একটি বাসা থেকে তিনি মূলতঃ সরকারের বিভিন্ন বিষয় নিয়ন্ত্রণ করতেন। এই ভবনকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছিল তার ছায়া সরকার। সরকারি ক্রয় এবং রাজনৈতিক নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রায়শই তারেক ঘুষ গ্রহণ করতেন।’
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ইশতেহারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা করেছিলেন প্রতিটি ঘর তিনি আলোকিত করবেন। এরই ধারাবাহিকতায় ৩ হাজার মেগাওয়াট থেকে প্রায় ২২ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়েছে। আমরা দেশে শতভাগ বিদ্যুতায়নের দিকে অগ্রসর হচ্ছি। এ বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রতিটি গ্রাম শতভাগ বিদ্যুতায়ন হবে।
তিনি বলেন, গ্যাসের সমস্যা ধীরে ধীরে দুর হচ্ছে। এখন প্রায় ৮২ শতাংশ বাড়িতে এলপিজি গ্যাস ব্যবহার করা হচ্ছে। এই বছরের মধ্যে দেশের প্রতিটি শিল্প প্রতিষ্ঠান এবং প্রতিটি জেলায় ইন্ডাষ্ট্রিয়াল জোনে পাইপ লাইনের মাধ্যমে গ্যাস পৌঁছে দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
তিনি ৫শ’ ইউনিটের নিচে বিদ্যুৎ ব্যবহারকারীদের বিদ্যুৎ বিল কালেকশনের জন্য টিআইএন বাধ্যতামূলক না করার প্রস্তাব করেন।
আলোচনায় অংশ নিয়ে অন্য সদস্যরা বলেন, বর্তমান সরকার বিগত ১০ বছরে দেশকে অনেক দূর এগিয়ে নিয়েছে। বাংলাদেশ উন্নয়নে বিশ্বে এখন অনন্য বিস্ময় হিসাবে আর্বিভূত হয়েছে। বিশ্বের অনেক দেশকে পিছনে ফেলে বাংলাদেশ এমডিজি বাস্তবায়ন করে এক অনন্য নজীর স্থাপন করেছে।
তারা বলেন, আর এ জন্য এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক অতি সম্প্রতি বলেছে এশিয়া প্যাসিফিক এলাকার ৪৫টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ প্রবৃদ্ধি অর্জনের দিক থেকে অনেক এগিয়ে রয়েছে, যা আগামী দিনেও এটা অব্যাহত থাকবে।
তারা বলেন, খেলাপী ঋণের সংস্কৃতি চালু হয়েছে বিএনপির আমলে। ২০০৩ সালে খেলাপী ঋণ ছিল ২৮ শতাংশ। বর্তমানে এর পরিমান ১০ দশমিক ৮ শতাংশ। বর্তমান সরকার খেলাপী ঋণ আদায়ে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। আশা করা যায় খেলাপী ঋণের পরিমান কমে আসবে।
তারা প্রস্তাবিত মোবাইল ফোনের কলে আরোপিত অতিরিক্ত কর এবং সঞ্চয় পত্রে আরোপিত উৎসে কর প্রস্তাব প্রত্যাহারের দাবি জানান।
বাসস/এমআর/এমএসএইচ/২১৩০/-আমি