বাজিস-৩ : মেহেরপুরের তালপাতার পাখা

229

বাজিস-৩
মেহেরপুর-পাখা
মেহেরপুরের তালপাতার পাখা
॥ দিলরুবা খাতুন ॥
মেহেরপুর, ২৩ জুন, ২০১৯ (বাসস) : বৈদ্যুতিক পাখাগুলো বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের কারণে যখন বন্ধ হয়ে যায় মানুষের ক্লান্তি আর গরমের উষ্ণতা মেটাতে মেহেরপুরের কোলা গ্রামের মানুষের তৈরি তালপাতার পাখার ঠান্ডা বাতাসে মানুষের শরীর জুড়িয়ে দেয়। তাপদাহ থেকে শরীর জুড়াতে এলাকার মানুষ ওই কোলা গ্রামের মানুষের ওপরই ভরসা করে। মেহেরপুর জেলা শহর থেকে মাত্র আট কিলোমিটার দূরের ছায়া ঢাকা, পাখি ডাকা গ্রামের নারী পুরুষ শিশু সকলেই ব্যস্ত সময় পার করছে। কোমল হাতের ছোঁয়ায় তৈরি তালপাতার পাখাগুলোকে আরও আকর্ষণীয় করতে লাল, নীল, সবুজ রং দিয়ে বিভিন্ন রকম নকশা করা হয়েছে। তালপাতা ও পাখা তৈরির বাঁশের দু®প্রাপ্যতা এবং মূল্যবৃদ্ধির পরেও বংশ পরম্পরা পাখা তৈরির মাণুষগুলোকে এখন আর কষ্টে দিনাতিপাত করতে হয় না। সরেজমিনে কোলাগ্রামে গিয়ে পাখা তেরির পরিবারগুলোর সাথে কথা বলে এমনটাই মনে হয়েছে।
মেহেরপুর জেলা শহর থেকে মাত্র আট কিলোমিটার দূরে গ্রাম কোলা। গ্রামটি জেলার পুরাতন একটি গ্রাম। গ্রামে প্রায় ৩শ’ পরিবারের বসবাস। অধিকাংশ ঘরবাড়িই কাঁচা। আধাপাকা, পাকা কিছু ঘরবাড়ি ইদানিং তৈরি হয়েছে। প্রতিটি বাড়ির লোকজনই অবসরে পাখা তৈরির কাজে সময় ব্যয় করে। তবে ২৮টি পরিবার নিয়মিত পাখা তৈরি করে কেউ ফেরি করে, কেউ হাটে বাজারে গিয়ে পাইকারি বিক্রি করে থাকে। গ্রামবাসী জানান, ইটভাটায় জ্বালানি হিসেবে তালগাছ ব্যবহারের কারণে এখন আর সহজে তালপাতা পাওয়া যায় না। দাম বেড়ে গেছে বাঁশের। সেই তুলনায় তালপাতার পাখার দাম একটু কম হলেও যা আয় হয় তাই দিয়েই তাদের জীবনযাপন করেও ছেলে মেয়েদের লেখাপড়ার খরচ চলে যায় ।
গ্রামের বয়োবৃদ্ধা ফিরোজা বেগম জানান, বছরের ছয়মাস তারা তালপাখা তৈরি করে। আগে শ্রমিক দিয়ে তালপাখা বানানো হতো। এখন শ্রমিক দিয়ে পাখা তৈরি করলে খরচ বেড়ে যায়। এজন্য পরিবারের ছেলে-মেযে, গৃহবধূ মিলে পাখা তৈরি করতে হয়। ফলে পাখার লাভ কম হলেও শ্রমের দামটা পাওয়া যায়। আগে একটি তালপাতা পাওয়া যেত ১০ টাকায়, বাঁশ পাওয়া যেত ১০০ টাকায়। এখন একটি তালপাতা কিনতে হয় ৩৫-৪০ টাকায়। একটি বাঁশ কিনতে হয় ২শ’ টাকায়। সেই তুলনায় পাখার দাম বাড়েনি। আগে একটি পাখা বিক্রি হতো পাঁচ টাকায়। বর্তমানে প্রতিটি পাখা বিক্রি করে ২৫-৩০ টাকা দরে ।
গ্রামের বিশারত আলী জানান, তার দাদার দাদারাও পাখা তৈরি করতো। বংশ পরম্পরা তারা পাখা তৈরি করে আসছেন। বাড়ির ছেলে-মেয়ে অবসরে পাখা তৈরিতে সহযোগিতা করে বলেই ২৫-৩০ টাকায় পাখা বিক্রি করে সংসারের সব অভাব অভিযোগ দূর করা সম্ভব হয়। একই গ্রামের রাহেলা খাতুন জানান, সারাদিনে তিনি ৪০টি পাখা তৈরি করতে পারেন। সপ্তাহে একদিন তার স্বামী শহরে কিম্বা হাটে গিয়ে পাইকারি দরে পাখা বিক্রি করেন। যা লাভ হয় তা দিয়েই তিনি সংসারে ছেলে-মেয়ের লেখা পড়ার খরচ জোগান দেন। তিনি আরও জানান, জুলাই-আগস্টে তারা তালপাতা সংগ্রহ করে রাখেন। ফেব্রুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত চারমাস তারা পাখা তৈরি করে বিক্রি করেন। পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থী আবু আক্তার জানায়, স্কুল ছুটির পর সে বাবা-মাকে পাখা তৈরিতে সহযোগিতা করেন। অন্য সময় নিজেদের অথবা অন্যের জমিতে শ্রম দেন। একটি তালের পাতায় সাত থেকে আটটি পাখা তৈরি করা যায়।
বাসস/সংবাদদাতা/১৩২৫/নূসী