ম্যাথুজ-মালিঙ্গা নৈপুণ্যে ইংল্যান্ডকে হারালো শ্রীলংকা

412

লীডস, ২১ জুন, ২০১৯(বাসস) : স্বাগতিক ইংল্যান্ডকে হারিয়ে সেমিফাইনালের আশা ভালোভাবেই বাচিয়ে রাখল শ্রীলংকা। শ্রীলংকা আজ ২০ রানে হারিয়েছে ইংল্যান্ডকে। মাত্র ২৩৩ রানের টার্গেট দিয়েও ম্যাথুজের ব্যাটিং ও পরে মালিঙ্গার বোলিং নৈপুণ্যে জয় নিয়ে মাঠ ছেড়েছে লংকানরা। টুর্নামেন্টে এটা শ্রীলংকার দ্বিতীয় জয়। আর ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় পরাজয়। এই জয়ের ফলে পয়েন্টে পিছিয়ে পরা শ্রীলংকা আবার নিজেদের ফিরে পেল দারুণভাবে। বাংলাদেশকে টপকিয়ে ৬ পয়েন্ট নিয়ে পয়েন্ট টেবিলের ৫ নম্বরে উঠে এলো দলটি। আর শ্রীলংকার কাছে হেরে ৮ পয়েন্ট নিয়ে পয়েন্টের তিন নম্বরেই থাকল ইংল্যান্ড। অবশ্য এই ম্যাচে জিতলে অস্ট্রেলিয়াকে পিছনে ফেলে পয়েন্টের শীর্ষে উঠত স্বাগতিকরা। কিন্তু সেটা আর হয়নি ম্যাচ হেরে। টস জিতে আগে ব্যাট করে ৯ উইকেটে শ্রীলংকা করেছিল ২৩২ রান। জয়ের জন্য ইংল্যান্ডের সামনে টার্গেট ছিল ২৩৩ রান। এই সহজ টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে লংকান বোলিং তোপে ৪৭ ওভারে ২১২ রানে ইংল্যান্ড অলআউট হয়। শ্রীলংকা জয় পায় ২০ রানে। কম রানের টার্গেট দিয়েও আগুন বোলিং করে দলকে জয় এনে দেয়া লাথিস মালিঙ্গা ম্যান অব দ্য ম্যাচ নির্বাচিত হন।
জয়ের জন্য ইংল্যান্ডের সামনে ২৩৩ রানের টার্গেটা সহজই ছিল। আর ম্যাচে নিশ্চিত জয় ভেবেছিল ইংল্যান্ড। এটাই ছিল দলটির বড় ভুল। কারণ মালিঙ্গার কথা হয়তো দলটি ভুলেই গিয়েছিল। ব্যাট করতে নেমে সেই মালিঙ্গার কারনেই শুরুটা ভালো করতে পারেনি স্বাগতিকরা। ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই ওপেনার জনি বেয়ারস্টোর উইকেট হারায় ইংল্যান্ড। দলীয় ১ রানে রানের খাতা খোলার আগেই এলবি আউট করে বেয়ারস্টোর উইকেট তুলে নেন লাসিথ মালিঙ্গা। দলীয় ২৬ রানে দলটি হারায় অপর ওপেনারকে। এবারও মালিঙ্গার আঘাত। ওপেনার জেমস ভিন্সকে মেন্ডিসের হাতে ক্যাচ বানিয়ে পরপর দুই উইকেট নিয়ে মালিঙ্গা শুরুতেই আতঙ্ক ছড়ান ইংলিশ শিবিরে। আউট হওয়ার আগে ১৮ বলে ২ চারে ১৪ রান করেন ভিন্স। দলীয় ২৬ রানে প্রথম দুই উইকেট হারানো দলকে এগিয়ে নিতে জুটি বাধেন জো রুট ও অধিনায়ক ইয়ন মরগান। এই জুটি দলকে ভালোই এগিয়ে নেয়ার চেস্টা করেন। কিন্তু জুটিটি বড় হতে দেননি ইসরু উদানা। দলীয় ৭২ রানে অধিনায়ক মরগানকে ফিরিয়ে এই জুটি ভাঙ্গেন ধরান তিনি। মাঠ ছাড়ার আগে ইংলিশ অধিনায়ক মরগান ৩৫ বলে ২ চারে করেন ২১ রান। দলের শতরানের আগে অধিনায়ক বিদায় হলেও বেন স্টোককে নিয়ে দলকে শতরারেন কোটা পার করেন জো রুট। তবে এই ব্যাটসম্যানকেও বড় স্কোর গড়তে দেননি মালিঙ্গা। দলের পক্ষে প্রথম ফিফটি করার পরই তাকে মাঠ ছাড়তে হয়। দলীয় ১২৭ রানে মালিঙ্গার বলে আউট হওয়ার আগে তিনি করেন ৫৭ রান। ৮৯ বলে ৩ চারে সাজানো ছিল তার ৫৭ রানের ইনিংসটি। ব্যাট করতে নেমে বাটলারও হলেন মালিঙ্গার শিকার। ফলে মালিঙ্গার আগুন বোলিংয়ে ১৪৪ রানে প্রথম ৫ উইকেট হারিয়ে ম্যাচটি কঠিন করে ফেলে স্বাগতিকরা। কারণ মালিঙ্গার সামনে একের পর এক উইকেট হারিয়ে দলটি ক্রমেই পিছিয়ে পড়ে। তবে বেন স্টোক আর মঈন আলী মিলে সাবধানি ব্যাট করে দলকে টার্গেট রানের দিকে এগিয়ে নেয়ার চেস্টা করে। এই জুটি ভাংগার আগেই দলটি পৌঁছে যায় ১৭০ রানে। মঈন আলীকে বিদায় করে এই জুটি ভাংগেন ডি সিলভা। উদানাকে ক্যাচ দিয়ে মাঠ ছাড়ার আগে মঈন ২০ বলে এক ছক্কায় করেন ১৬ রান। ব্যাট করতে নেমে ওকস আর আদিল দ্রুত ডি সিলভার শিকার হয়ে মাঠ ছাড়লে ১৭৮ রানে ৮ উইকেট হারিয়ে ম্যাচ থেকে প্রায় ছিটকে পড়ে ইংল্যান্ড। আর্চার নেমেও স্টোকের সাথে বেশি সময় টিকতে পারেননি। তিন রান করার পর তাকে ফিরান উদানা। তবে শেষ পর্যন্ত টিকে থেকে উডকে নিয়ে শেষ জুটিতে দলকে জয় এনে দিতে প্রানপন চেস্টা করেছেন বেন স্টোক। জয়ের খুব কাছেও গিয়েছিল দলটি। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি ইংল্যান্ডের। কারণ বেন স্টোক অপরাজিত থাকলেও উডকে শুন্য রানে ফিরিয়ে ইংল্যান্ডকে ২১২ রানে অলআউট করে শ্রীলংকা। ইংল্যান্ড খেলতে পারেনি পুরো ৫০ ওভার। তিন ওভার বাকি থাকতেই মাঠ ছেড়েছে ইংল্যান্ড। বেন স্টোক ৮২ রানে অপরাজিত ছিলেন। তার ৮২ রানে ইনিংসটি সাজানো ছিল ৮৯ বলে ৭ চার আর ৪ ছক্কায়। শ্রীলংকার পক্ষে লাথিস মালিঙ্গা চারটি, ডি সিলভা তিনটি আর উদানা নেন দুটি করে উইকেট।
এর আগে আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপের ২৭তম ম্যাচে লিডসে টসে জিতে আগে ব্যাট করতে নেমে ৯ উইকেট হারিয়ে শ্রীলংকা ২৩২ রান করে। ফলে জয়ের জন্য ইংল্যান্ডের সামনে টার্গেট মাত্র ২৩৩ রান। আগে ব্যাট করে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বড় স্কোর গড়ার প্রত্যাশা ছিল পয়েন্টে পিছিয়ে থাকা লংকানদের । কিন্তু ব্যাট করতে নেমে ইংল্যান্ডের দুই পেসার জোফরা আর্চার ও মার্ক উডের বোলিং মুখ থুবরে পড়ে লংকানরা। একের পর এক উইকেট পতনে অনেকটাই দিশেহারা হয়ে পড়ে শ্রীলংকা। শেষ পর্যন্ত অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুজের ৮৫ রানের অপরাজিত ইনিংসের উপর ভর করে লংকানরা ৫০ ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে ২৩২ রান করতে পারে। ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে দলটি। কারণ দলীয় ১ রানে প্রথম উইকেট হারানো দলটি ৩ রানে হারায় দ্বিতীয় উইকেট। জোফরা আর্চার প্রথম ওভারে অধিনায়ক দিমুথ করুনারতেœকে ফিরিয়ে প্রথম উইকেট নেন। মাত্র ১ রান করে এই অধিনায়ক ক্যাচ আউট হন উইকেটরক্ষক জস বাটলারের হাতে। দলীয় ৩ রানে দ্বিতীয় উইকেট হারায় লংকারনা। এবার অপর ওপর ওপেনার কুশল পেরেরাকে ২ রানে ফেরান ক্রিস ওকস। দলীয় ৩ রানে প্রথম দুই উইকেট হারিয়ে শুরুতে বিপদে পড়া শ্রীলংকাকে শুরুর ধাক্কাটা সামলে দলকে এগিয়ে নেন অভিষেক ফার্নান্দো। দলকে ৬২ রানে নিয়ে আউট হন ফার্নান্দো। আউট হওয়ার আগে এই ব্যাটম্যান করেন ৪৯ রান। মাত্র এক রানের জন্য ফিফটি করতে পারেননি বিশ্বকাপে প্রথম ম্যাচ খেলতে নামা এই ব্যাটসম্যান। মার্ক উডের বলে আদিল রশিদকে ক্যাচ দিয়ে মাঠ ছাড়ার আগে ৩৯ বলে ৬ চার আর ২ ছক্কায় ৪৯ রান করেন তিনি। ফার্নান্দো আউট হলেও কুশল মেন্ডিস ও ম্যাথুজ মিলে জুটি করে দলকে ভালোই এগিয়ে নেয়। এই দুই ব্যাটসম্যান ৭১ রানের পার্টনারশীপ গড়ে দলকে শতরানের স্কোর পেরিয়ে ১৩৩ রানে নিয়ে বিচ্ছিন্ন হন। আদিল রশিদ বল করতে এসে নিজের পঞ্চম ওভার জোড়া আঘাতে আবার শ্রীলংকাকে চাপে ফেলে দেয়। দলীয় ১৩৩ রানে কুশল মেন্ডিসকে ৪৬ রানে মঈন আলীর হাতে ক্যাচ বানান আদিল। ৬৮ রানে ২ চারে সাজানো ছিল মেন্ডিসের ইনিংসটি। পরের বলেই তিনি জীবন মেন্ডিসকে রানের খাতা খোলার আগেই বিদায় করেন। হ্যাটট্রিক চান্স ছিল আদিলের সামনে। তবে শেষ পর্যন্ত সেটা হয়নি। ব্যাট করতে নেমে টিকে থেকে দলকে এগিয়ে নিতে চেয়েছিলেন ধননঞ্জয়া ডি সিলভা। কিন্তু দলীয় দলীয় ১৯০ রানে আর্চারের বলে সাজঘরে ফিরেন তিনি। আউট হওয়ার আগে ৪৭ বলে এক চারে ২৯ রান করেন তিনি। ব্যাট করতে নেমে অলরাউন্ডার থিসার পেরেরা ২ রান করে আর্চারের বলে আউট হওয়ার পর ইশুরু উদানা ৬ রানে ও লাসিথ মালিঙ্গাকে ১রানে আউট করেন মার্ক উড। ফলে বড় স্কোর গড়ার স্বপ্ন শেষ হয় লংকানদের। শেষ পর্যন্ত টিকে থেকে নুয়ান প্রদীপকে নিয়ে দলকে ২৩২ রানের স্কোরে নিয়ে যান ম্যাথুজ। ১১৫ বল খেলে ৮৫ পাঁচ চার ও এক ছক্কায় ৮৫ রানে অপরাজিত থাকেন অভিজ্ঞ অলরাউন্ডার ম্যাথুজ। ইংল্যান্ডের পক্ষে তিনটি করে উইকেট নিয়েছেন আর্চার ও উড। আদিল রশিদ নেন ২ উইকেট।