বাসস ক্রীড়া-৪
ক্রিকেট-বাংলাদেশ
শেষ ১০ ওভারে আমাদের বড় ক্ষতি হয়েছে : মাশরাফি
নটিংহাম, ২১ জুন, ২০১৯ (বাসস) : দ্বাদশ বিশ্বকাপে গতকাল নিজেদের ষষ্ঠ ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার কাছে দুর্দান্ত লড়াইয়ের পরও হার মানতে হয় বাংলাদেশকে। ডেভিড ওয়ার্নারের ১৬৬ রানের বিধ্বংসী ইনিংসের সুবাদে ৫০ ওভারে ৫ উইকেটে ৩৮১ রান করে অস্ট্রেলিয়া। জবাবে মুশফিকুর রহিমের অনবদ্য ১০২, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের ৬৯ ও তামিম ইকবালের ৬২ রানের পরও পুরো ওভার খেলে ৮ উইকেটে ৩৩৩ রানের বেশি করতে পারেনি বাংলাদেশ। তাই ৪৮ রানে ম্যাচ হারে টাইগাররা। এমন লড়াইয়ে সর্বত্রই প্রশংসিত বাংলাদেশ। কিন্তু ম্যাচ হারের জন্য অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিং-এর শেষ দশ ওভারকে দায়ি করছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা।
ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে মাশরাফি বলেন, ‘উইকেট প্রয়োজন ছিলো। অবশ্যই এই ধরনের দলের বিপক্ষে খেলতে গেলে অর্ধেক সুযোগুলো পুর্নাঙ্গ করা প্রয়োজন হয়। আমার কাছে মনে হয় ৪০ ওভার পর্যন্ত তারা ৬ করে রানে যাচ্ছিলো। ওরা ৩৫ ওভার থেকে টেক অফ করা শুরু করে। ঐ সময় যদি ওয়ার্নারের উইকেটটি পড়তো, তবে আরেকটা নতুন ব্যাটসম্যান এসে কিছুটা সময় নিতো। ওরা শট যেভাবেই খেলেছে প্রত্যক ওভারেই রান হচ্ছিলো। ওটাই টার্নিং পয়েন্ট। আমি মনে করি ওেরা যে শট খেলেছে রান পেয়েছে এবং প্রত্যক ওভারেই বড় বড় করে রান পাচ্ছিলো। শেষ ১০ ওভারের ১৩১ রানই টার্নিং পয়েন্ট। ওখানেই ম্যাচের গতিবিধি ঠিক করে দিয়েছে। আমরা যদি প্রথম কিংবা শেষদিকেও উইকেট ফেলতে পারতাম, তাহলে এতো রান উঠতো না।’
গতকাল দু’টি পরিবর্তন নিয়ে খেলতে নেমেছিলো বাংলাদেশ। ইনজুরির কারনে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেলতে পারেননি মোসাদ্দেক হোসেন ও মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। তাই অস্ট্রেলিয়া যেখানে বাংলাদেশকে ম্যাচ থেকে ছিটকে দিয়েছে, সেখানে দুই বোলারকে মিস করেছেন মাশরাফি, ‘সাকিবের কথা চিন্তা করে ওরা পরিকল্পনা করে খাজাকে নামিয়েছে। সেখানে স্মিথ নামে। কিন্তু নামলো খাজা। বাঁ-হাতি দু’জন তখন ব্যাটিং করছিলো। ওয়ার্নার চার্জ করছিলো সাকিবকে। খাজা সিঙ্গেল নিচ্ছিলো। এখানে একটু কঠিন হয়েছে, মোসাদ্দেক থাকলে ভালো হতো, তবে আমার মনে হয় সৌম্য অনেক কভার করেছে। মোসাদ্দেক থাকলে আরেক প্রান্তে অফ-স্পিনার চালাতে পারলে রান তোলার গতিটা কম হতো। কিন্তু তারপরও এখানে সৌম্য কাভার করেছে। আমার কাছে মনে হয় যে সবকিছু ঠিকÑঠাক ছিলো না। বলবো না সব ভালো ছিলো। তবে শেষ দিকে বড় ক্ষতি হয়েছে আমাদের।’
অস্ট্রেলিয়ার ছুড়ে দেয়া ৩৮২ রান বাংলাদেশের জন্য অনেক বড় বলে জানান মাশরাফি। তাদের পরিকল্পনায় ছিলো অসিদের ২৮০ থেকে ৩০০ বা ৩২০ রানের মধ্যে আটকে রাখা। এ ব্যাপারে মাশরাফি বলেন, ‘আসলে আমাদের জন্য ৩৮২ অনেক। টার্গেটটা বেশি বড়। আমার মনে হয় আমরা এখন ৩২০ থেকে ৩৩০ রান তাড়া করে জেতার সামর্থ্য রাখি। মনের দিক থেকেও ঐ স্কোর অতিক্রমের একটা বিশ্বাস জন্মেছে। কিন্তু সাড়ে তিনশর ওপরে বিশেষ করে ৩৮২ রান অনেক বেশি। আসলে সেই বড়সড় স্কোর টপকে যাওয়ার মত দল এখনো হইনি আমরা। আমাদের পরিকল্পনা ছিলো ২৮০ থেকে ৩০০ রানের মধ্যে আটকে রাখা। জানি অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিং অনেক সমৃদ্ধ ও লম্বা। তবে আমরা চেয়েছিলাম ৩০০’র মধ্যে ধরে রাখতে।’
নিজেদের বোলিং-এ ৪০-৫০ রান বেশি দেয়া হয়েছে বলে জানান মাশরাফি। পাশাপাশি ওয়ার্নার ও অস্ট্রেলিয়ার প্রশংসা করেছেন তিনি, ‘ভালো একটা শুরু পেলে কি হতে পারে আপনি জানেন না। আমার মনে হয় আমরা ফিল্ডিংয়ে ৪০ থেকে ৫০ রান বেশি দিয়েছি, বিশেষ করে ৪০ ওভারের পর। তা না হলে লক্ষ্য তাড়াটা অন্যরকম হতো, ব্যাটসম্যানদের মাইন্ড সেটআপ অন্য রকম হতো। তবে ডেভিড ওয়ার্নার ও অস্ট্রেলিয়ার অন্য ব্যাটসম্যানদের কৃতিত্ব দিতে হবে।’
বড় টার্গেট পেয়েও দলের ব্যাটসম্যানরা লড়াই করার মানসিকতা দেখানোয় বেশ খুশী মাশরাফি, ‘আমরা যখন ব্যাটিং করি, তখন মুশফিক-সাকিব-তামিম খুব ভালো করেছে। শেষের দিকে রিয়াদ খুব ভালো ছিল। সৌম্যর রান আউটের পর সাকিব-তামিম দলকে এগিয়ে নেয়। ৩৮১ রান তাড়া করে জেতা অনেক কঠিন।’
৬ খেলা শেষে ২টি জয়, ৩টি হার ও ১টি পরিত্যক্ত ম্যাচে ৫ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের পঞ্চমস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। সেমিফাইনালে যাবার পথ কিছুটা কঠিন হলো বটে। তারপরও বাকী তিন ম্যাচ জিততেই হবে পাশাপাশি টেবিলের উপরে থাকা অন্য দলগুলোর হারের অপেক্ষাও করতে হবে টাইগারদের। তবে এখনই আশা ছাড়তে চান না মাশরাফি, ‘আমি এখনও মনে করি… কে জানে কত কী হতে পারে! এখনও আমরা পারি, তিন ম্যাচ বাকি আছে। অন্য ম্যাচের ফলের জন্য হয়তো অপেক্ষা করতে হবে। আমাদের দারুন ক্রিকেট খেলতে হবে এবং এরপর দেখব। তবে কাজটি কঠিন হবে। তিনটি ম্যাচ যদি জিততে পারি, এরপর দেখা যাবে কী অবস্থা। আমাদের জন্য আপাতত গুরুত্বপূর্ণ হলো বাকি তিনটি ম্যাচ। একটি একটি করে এগোনো এবং জেতা।’
বাসস/এএসজি/এএমটি/১৬৫০/স্বব