মা-বাবার কাছে ফিরে গেল নাটোর শিশু পরিবারের সদস্য রুবেল

440

নাটোর, ১৮ জুন, ২০১৯ (বাসস) : অশ্রু ভেজা চোখে প্রিয় সহপাঠি রুবেলকে বিদায় দিল কাওসার, মাহিন, মুহিনসহ অন্যরা। একই সাথে একই স্কুলে পড়াশোনা, একই ছাদের নীচে বসবাস, একই খেলার মাঠের দুরন্তপনার হলো সমাপন। দুই বছর ধরে লালন করা শিশু পরিবারের মধুর এ সম্পর্কের বাঁধন ছিড়ে রুবেল ফিরে গেল তাঁর মা-বাবার কাছে।
২০১৭ সালের ১০ এপ্রিল মধ্য রাতে পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর নুরুল ইসলাম নুরু নাটোরের বনবেলঘড়িয়া বাইপাস এলাকার রাস্তায় একাকী হাঁটতে দেখেন এক শিশুকে। ক্ষুধার্ত শিশুটিকে পেট ভরে খাইয়ে নাটোর থানা পুলিশের কাছে রাতেই হস্তান্তর করেণ এ জনপ্রতিনিধি। পরে নাটোর থানার মাধ্যমে রুবেল নামের শিশুটির ঠাঁই হয় সমাজ সেবা অধিদপ্তর পরিচালিত শিশু পরিবারে। শিশু পরিবারের সম বয়সী অন্য শিশুদের সাথে দুরন্তপনায় মেতে ওঠে সাড়ে ছয় বছর বয়সী রুবেল। শিশু পরিবারের সুপরিসর খেলার মাঠে ওদের প্রিয় সময় কাটে। শুরু হয় স্থানীয় বনবেলঘড়িয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যাতায়াত।
মা-বাবার কাছ থেকে হারিয়ে যাওয়া রুবেল বড্ড দুরন্ত। আবারো শিশু পরিবার থেকে হারিয়ে যায় রুবেল। অনলাইন নিউজ পোর্টাল থেকে জানা যায়, সে এখন নরসিংদীর পলাশ থানা হেফাজতে। এ হারিয়ে যাওয়াই রুবেলের জীবনে শাপে বর হয়ে ওঠে। রুবেলের খবর আর ছবি নজরে আসে ওর মা-বাবার। উত্তরের গ্রামীণ জনপদ থেকে সেখানে ছুটে যান রুবেলের রিকশা চালক বাবা শফিকুল ইসলাম। রুবেলের বাবার উপস্থিতিতে পলাশ থানা কর্তৃপক্ষ নিয়ম অনুযায়ী নাটোর শিশু পরিবারের কর্মকর্তাদের কাছে রুবেলকে হস্তান্তর করে।
এরপর আসে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। রুবেলের মা-বাবার সাথে পারিবারিক ছবি, তার টিকা কার্ডসহ বিভিন্ন প্রমাণের ভিত্তিতে আজ মঙ্গলবার রুবেলকে তার বাবার কাছে হস্তান্তর করা হলো।
বাবাকে ফিরে পাওয়া, নীলফামারী জেলার সৈয়দপুর উপজেলার অসুরখাই গ্রামের বাড়ীতে মায়ের কাছে ফিরে যাওয়ার আনন্দে আতœহারা রুবেল। আতœহারা তার বাবা। বাবা জানান, ২০১৭ সালের ১ এপ্রিল স্কুলে যেয়ে আর বাড়ী ফিরে আসেনি আমাদের একমাত্র সন্তান রুবেল। সেই থেকে কাঁদতে কাঁদতে পাগল প্রায় ওর মা। দিনের পর দিন ছেলেকে খুঁজতে খুঁজতে এক সময় ক্লান্ত হয়ে আশা ছেড়ে দেই। থানায় একটা সাধারণ ডায়রী করা ছাড়া আর কিছুই করা হয়নি।
শিশু পরিবারে তার সহপাঠিদের কাছ থেকে বিদায় নেয়ার সময় অশ্রুসজল হয়ে পড়ে রুবেল। বেদনাবিধুর এ ক্ষণে ব্যথিত হয়ে ওঠে তার সহপাঠিরা। ওরা বলে, আবার কবে দেখা হবে? সামনের ঈদে আবার বেড়াতে আসবো, তখন আবার পটকা ফুটাবো-এ প্রত্যাশায় শিশু পরিবারকে পিছনে ফেলে বাবার হাত ধরে বাড়ী ফেরার ট্রেন ধরার জন্যে চলে গেল শিশু রুবেল।
রুবেলের দুরন্তপনার বর্ণনা দিতে গিয়ে শিশু পরিবারের উপ তত্ত্বাবধায়ক কাজী ফাহিমা মুন্না জানান, একশ’ টাকা ঈদ পরবী দিয়ে সে পটকা কিনে তার বন্ধুদের সাথে আনন্দ করেছিল।
নাটোর সমাজ সেবা অধিদপ্তরের উপ পরিচালক মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান বাসস’কে বলেন, দেশের বিদ্যমান শিশু আইন ২০১৩ অনুসারে হারিয়ে যাওয়া যে কোন শিশুর আবাস হচ্ছে সমাজ সেবা পরিচালিত শিশু পরিবার। যে কোন হারিয়ে যাওয়া শিশুর দায়িত্ব নেবে শিশু পরিবার। এক্ষেত্রে সকলের সচেতনতা ও সহযোগিতা একান্ত কাম্য।