বাজিস-৪ : শেরপুরে সিডলেস লেবু চাষের জনপ্রিয়তা বাড়ছে

216

বাজিস-৪
শেরপুর লেবু চাষ
শেরপুরে সিডলেস লেবু চাষের জনপ্রিয়তা বাড়ছে
শেরপুর, ১৭ জুন, ২০১৯ (বাসস) : জেলার নকলায় কম শ্রমে ও কম উৎপাদন খরচ বেশি লাভ বেশি পাওয়ায় সর্বত্রই লেবুর আবাদ দিন দিন বাড়ছে। বিশেষ করে উজেলার বানেশ্বরদী, পাঠাকাটা, টালকী, অষ্টধর ও চন্দ্রকোনা ইউনিয়নের উঁচু ও মাঝারি উঁচু জমিতে বেলে-দোআঁশ মাটিতে লেবু চাষ করে কৃষকরা আর্থিক ভাবে লাভবান হচ্ছেন। খরচের তুলনায় কয়েক গুণলাভ পাওয়ায় লেবু চাষে কৃষকদের আগ্রহ বেড়েছে। লেবুর আয়ে তারা করেছেন বাড়ি গাড়ী।
দেশে অনেক জাতের লেবু চাষ হচ্ছে। এর মধ্যে কাগজি লেবু, পাতি লেবু, এলাচি লেবু, বাতাবি লেবু ও হাইব্রিড নতুন জাতের বীজহীন (সিডলেস) লেবু ব্যাপকহারে চাষ হচ্ছে। সিডলেস লেবুতে লাভ বেশি হওয়ায় কৃষক অন্য আবাদ ছেড়ে এ লেবু চাষে ঝুঁকছেন। সিডলেস লেবু চাষ করে মাত্র ৪ বছরেই অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হয়েছেন শেরপুরের নকলা উপজেলার চন্দ্রকোনা ইউনিয়নের উত্তর বাছুরআলগা গ্রামের লুৎফর রহমান, তার ছোট ভাই মোস্তাক আহমেদ ও ভগ্নিপতি আবদুল হাসেমসহ উপজেলার অনেকে।
লেবু চাষি লুৎফর রহমান জানান, ২০১৬ সালে ৭৫ শতাংশ জমি বন্ধক নিয়ে ওই জমিতে ৩০৬টি সিডলেস লেবুর কলম করা চারা রোপণ করেন। বৃদ্ধি পেয়ে বর্তমানে তার বাগান দেড় একর জমিতে হয়েছে। চারা কেনা, রোপণ, জমি বন্ধক নেওয়া, জমি তৈরি, সেচ ও সারসহ অন্যান্য খরচ মিলে প্রথম বছর তার লক্ষাধিক টাকা ব্যয় হয়। পরের বছর ওইসব গাছে ফলন আসা শুরু হয়। রোপণের পরের বছর ২০১৭ সালে তিনি দুই লাখ টাকার লেবু বিক্রি করেন। ২০১৮ সালে তিনি প্রায় আড়াই লাখ টাকার লেবু বিক্রি করেছেন। এ বছর রোজার প্রথম দিকে লেবুর দাম ভালো থাকায় ৩ লাখ টাকার লেবু বিক্রি হয়েছে। তবে এখন দাম কমে যাওয়ার পরেও আরো অন্তত লাখ টাকার লেবু বিক্রি করা সম্ভব। তিনি আরো জানান, লেবুর আয়ে তিনি জমি, বাড়ি তৈরি করেছেন। তাছাড়া লেবুতেই ছেলে মেয়েদের পড়া লেখা ও সংসার খরচ চলে তার। তার এমন সফলতা দেখে ছোট ভাই সিডলেস লেবুর বাগান করে সফল হয়েছেন।
অন্য এক চাষি আবদুল হাসেম জানান, তার ৭০ শতাংশ জমির লেবু বাগান থেকে তার মাসিক আয় হচ্ছে ৩০ হাজার থেকে ৪০ হাজার টাকা। এ হিসাব মতে তার বছরে আয় হয় ৩ লাখ থেকে ৪ লাখ টাকা, যা অন্য কোনো আবাদে অসম্ভব। তাদের সফলতা দেখে উপজেলার অন্য কৃষকও লেবু চাষে আগ্রহী হয়েছেন। এলাকার অনেকে সিডলেস লেবুর বাগান করে সফল হয়েছেন। গড়ে তুলছে নতুন নতুন বাগান। ফলে উপজেলাজুড়ে গড়ে উঠেছে অসংখ্য লেবুর বাগান। তাই স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে নকলার লেবু দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হচ্ছে।
লেবু চাষি লুৎফর রহমান বলেন, বর্তমানে প্রতি হাজার লেবু ৯০০ টাকা থেকে এক হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে রোজার প্রথম দিকে দাম ভালো থাকায় প্রতি হাজার লেবু ৩ হাজার থেকে ৪ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে।
লেবুর বাগান পরিচর্যায় স্ত্রী ও সন্তানরা সহযোগিতা করায় শ্রমিক ব্যয় কম হয়। চাষিরা জানান, লেবু বাগানের আয় দিয়েই তাদের সংসারের সব খরচ চলে। ভালোভাবেই চলছে তাদের সংসার, তারা প্রত্যেকেই হয়েছেন অর্থনৈতিকভাবে লাভবান। করেছেন উন্নত বাড়ি। রোপণের বছর বাদে প্রতি বছর একবার ডালপালা ছাটা, মাটি কোপানো, প্রতি ৩ মাসে একবার নিড়ানি ও ২ থেকে ৩ মাস অন্তর সেচ ও সামান্য জৈব সার দিতে হয়। ফলে একরে বার্ষিক খরচ হয় মাত্র ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা। আর এক একর জমির লেবুতে আয় হয় কমপক্ষে ৩ লাখ থেকে ৪ লাখ টাকা। তাছাড়া নিজের উৎপাদিত কলম চারা দিয়ে ফিবছর নতুন বাগান তৈরি করা ছাড়াও প্রতিটি কলম করা চারা ৩০ থেকে ৫০ টাকা করে বিক্রি করতে পারেন। বর্তমানে লুৎফরের বাগানে অন্তত হাজার খানেক কলম কাট আছে। এ কলম করা চারা বিক্রি থেকে তার আয় হবে অন্তত অর্ধলাখ টাকা।
নকলা উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের কর্মকর্তা পরেশ চন্দ্র মোদক জানান, ১২ মাস ফলন দেওয়া বীজবিহীন অধিক ভিটামিন-সি সমৃদ্ধ প্রচুর রস ও সুঘ্রণযুক্ত হাইব্রিড জাতের এ সিডলেস লেবুর ব্যাপক চাহিদা থাকায় নকলার লেবু চাষিরা আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন। তিনি আরও জানান, সঠিকভাবে পরিচর্যা করলে একবার চারা রোপণের পর একাধারে অন্তত ২০ বছর পর্যন্ত ফলন পাওয়া যায়।
বাসস/সংবাদদাতা/১৪০৫/নূসী