বাসস ক্রীড়া-১ : ভারতের বিপক্ষে জয় খরা কাটাতে পারল না পাকিস্তান

218

বাসস ক্রীড়া-১
ক্রিকেট-বিশ্বকাপ
ভারতের বিপক্ষে জয় খরা কাটাতে পারল না পাকিস্তান
ওভাল, ১৭জুন, ২০১৯ (বাসস) : ক্রিকেট বিশ্বেকাপে ভারতের বিপক্ষে জয় খরা কাটাতে পারল না পাকিস্তান। চিরপ্রতিদ্বন্দী পাকিস্তানের বিপক্ষে বৃষ্টি আইনে বড় জয় পেল ভারত। গতকাল ভারতের বড় জয়ের পথে ব্যাটে-বলে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি পাকিস্তান। আগে ব্যাট করে রোহিত শর্মার সেঞ্চুরিতে ভারত ৫ উইকেটে করে ৩৩৬ রানের বিশাল স্কোর। ফলে জয়ের জন্য পাকিস্তানের সামনে টার্গেট ছিল ৩৩৭ রান। এই রান টপকে জিততে হলে পাকিস্তানকে বিশ্বকাপের রেকর্ড গড়েই জিততে হতো। কারণ ৩২৭ রানের বেশি রান টপকে বিশ্বকাপে এখনো কোন দল জিতেনি। তবে ব্যাট করতে নেমে পাকিস্তান ৩৫ ওভার শেষে ৬ উইকেটে ১৬৬ রান করার পর বৃষ্টিতে খেলা বন্ধ হয়ে যায়। তখন ২২ রানে ইমাদ ও ১ রানে শাদাব খান ব্যাটিংয়ে ছিলেন। বৃষ্টি থামলে পাকিস্তানের সামনে নতুন টার্গেট দাঁড়ায় ৪০ ওভারে ৩০২ রান। কিন্তু পাকিস্তান ৪০ ওভারে ৬ উইকেটে ২১২ রান করলে ভারত বৃষ্টি আইনে ম্যাচ জিতে ৮৯ রানে। ফলে বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে পাকিস্তানের জয় পাওয়া অধরাই থেকে গেল। ভারতের এটা তৃতীয় জয়। আর পাকিস্তানের তৃতীয় পরাজয়।
জয়ের জন্য পাকিস্তানের সামনে ৩৩৭ রানের টার্গেটটা কঠিনই ছিল। তারপরও ভারতের বিপক্ষে জয়ের প্রত্যাশা নিয়ে ব্যাট করতে নামে পাকিস্তান। ব্যাট করতে নেমে শুরুটা ভালো করতে চেয়েছিলেন দু-ওপেনার ইমাম উল হক-ফখর জামান। কিন্তু সেটা হয়নি দ্রুত ইমামের বিদায়ে। দলীয় ১৩ রানে প্রথম উইকেট হারায় পাকিস্তান। বোলিং করতে গিয়ে ভুবেনশ্বর কুমার চার বল করে ইনজুরিতে পড়েন। তার পরিবর্তে শেষ দুই বল করতে আসেন বিজয় শঙ্কর। আর এসেই প্রথম উইকেট তুলে বাজিমাত করেন। এলবির ফাঁদে ফেলে বিদায় করেন ইমাম-উল-হককে। ইমাম ১৪ বলে করেন মাত্র ৭ রান। ১৩ রানে প্রথম উইকেট হারালেও দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে ফখর জামান আর বাবর আজম মিলে দলকে এগিয়ে নেয়ার চেস্টা করেন। এই জুটির উপর ভর করে ভালো কিছু করার স্বপ্ন ছিল পাকিস্তানের সামনে। এই জুটি ভাংগার আগেই পাকিস্তান পৌছে যায় ১১৭ রানে। বাবর আজমকে বোল্ড করে কুলদ্বীপ যাদব ভয়ংকর হয়ে উঠা এই জুটির ভাঙ্গন ধরান। আউট হওয়ার আগে ৫৭ বলে তিন চার আর এক ছক্কায় ৪৮ রান করেন বাবর। বাবরের বিদায়ের পর বেশি সময় টিকতে পারেননি ওপেনার ফখর জামানও। দলীয় ১২৬ রানে ফিরতে হয় তাকে। কুলদ্বীপ যাদবের বলে চাহালকে ক্যাচ দিয়ে ফেরার আগে ৬২ রান করেন তিনি। ৭৫ বলে ৭ চার আর এক ছক্কায় সাজানো ছিল তার ইনিংসটি। ফখর জামানের বিদায়ে হটাৎ করেই তাসের ঘরের মত ভেঙে পড়ে পাকিস্তানের ব্যাটিং লাইনআপ। ব্যাট করতে নেমে মোহাম্মদ হাফিজ আর শোয়েব মালিক দ্রুত আউট হলে ম্যাচ থেকে ছিটকে পড়ে পাকিস্তান। কারণ ১২৯ রানেই দলটি হারায় প্রথম ৫ উইকেট। আর শেষের ৪ উইকেট হারিয়েছে মাত্র ১২ রানের ব্যবধানে। ব্যাট করতে নেমে হাফিজ ৯ রান করলেও রানের খাতা খোলার আগেই মাঠ ছাড়েন শোয়েব মালিক। পরপর দুই বলে দুজনকেই বিদায় করে হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনাও জাগিয়েছেন হার্ডিক পান্ডিয়া। ১২৯ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে ধুকতে থাকা দলকে এগিয়ে নেয়ার শেষ চেস্টা করেন অধিনায়ক সরফরাজ আহমেদ-ইমাদ ওয়াসিম। এই জুটি দলকে নিয়ে যান ১৫৫ রানে। সরফরাজকে ১২ রানে বোল্ড করে বিদায় করেন শঙ্কর। তবে দলকে এগিয়ে নিতে ইমাদ ওয়াসিম টিকে থাকতে চেয়েছিলেন। পাকিস্তানের ইনিংসে ৩৫ ওভার শেষে বৃষ্টিতে খেলা বন্ধ হয়ে যায়। তখন ৬ উইকেটে ১৬৬ নিয়ে ব্যাট করছিল পাকিস্তান। ২২ রানে ইমাদ ও ১ রানে শাদাব খান ব্যাটিংয়ে ছিলেন। বৃষ্টি থামলে পাকিস্তানের সামনে নতুন টার্গেট দাড়ায় ৪০ ওভারে ৩০২ রান। কিন্তু পাকিস্তান ৪০ ওভারে ৬ উইকেটে ২১২ রান করলে ভারত বৃষ্টি আইনে ম্যাচ জিতে ৮৯ রানে। ৪৬ রানে ইমাদ ও ২০ রানে শাদাব খান অপরাজিত থাকেন । ভারতের পক্ষে হার্ডিক পিন্ডিয়া আর কুলদ্বীপ যাদব নেন দুটি করে উইকেট।
এর আগে রোহিত শর্মা সেঞ্চুরি, অধিনায়ক বিরাট কোহলি ও আরেক ওপেনার কেএল রাহুল হাফসেঞ্চুরি করেই ভারতকে বিশাল স্কোরে নিয়ে যায়। মোহাম্মদ আমির ছাড়া পাকিস্তানের পক্ষে কোন বোলারই ভালো করতে পারেনি। টস হেরে আগে ব্যাট করার সুযোগ পেয়ে ভারতের শুরুটা ছিল অসাধারন। ব্যাট করতে নেমে দু-ওপেনার রোহিত শর্মা আর লোকেশ রাহুল মিলে ওপেনিং জুটিতেই দলকে বড় স্কোর গড়ার সুযোগ করে দেয়। মোহাম্মদ আমিরের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ের পরও ওপোনিং জুটিতে ১৩৬ রান করেন এই দু-ওপেনার। যা বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে যে কোনো উইকেটে জুটিতে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড। দলীয় ১৩৬ রানে রাহুলকে বিদায় করে ওপেনিং জুটির ভাংগন ধরান ওয়াহাব রিয়াজ। রাহুল ৫৭ রান করে ওয়াহাব রিয়াজের বলে বাবর আজমের হাতে সহজ ক্যাচ হন। ৭৮ বলে ৩ চার ও ২ ছয়ে সাজানো ছিল তার ৫৭ রানের ইনিংস। ওপেনার রাহুল ফিফটি করে আউট হলেও দলের পক্ষে সেঞ্চুরিসহ ১৪০ রান করে মাঠ ছাড়েন ওপেনার রোহিত শর্মা। রাহুলের বিদায়ে অধিনায়ক কোহলিকে নিয়ে দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে ৯৮ রানের পার্টনারশীপ গড়েন এই ওপেনার। আর এতেই পাকিস্তানের বিপক্ষে বিশাল সংগ্রহের পথ তৈরী হয় ভারতের। এই জুটি ভাংগার আগেই ভারত পৌঁছে যায় ২৩৪ রানে। রোহিতের বিদায়ে ভাংগে এই জুটি। হাসান আলীর বলে ওয়াহাব রিয়াজ ক্যাচ নিয়ে বিদায় করেন এই সেঞ্চুরিয়ানকে। পাকিস্তানের বিপক্ষে ৮৫ বলে সেঞ্চুরি করেন এই ওপেনার। আর আউট হওয়ার আগে ১১৩ বলে ১৪ চার আর ৩ ছক্কায় সেঞ্চুরিসহ ১৪০ রান করেন রোহিত শর্মা। অথচ রোহিতকে ব্যাক্তিগত ৩২ রানে রান আউটের সুযোগ পেয়েও কাজে লাগাতে পারেনি পাকিস্তান। এই বিশ্বকাপে রোহিতের এটি দ্বিতীয় সেঞ্চুরি। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ১২২ রানের হার না মানা ইনিংস খেলেন তিনি। প্রথম ভারতীয় হিসেবে পাকিস্তানের বিপক্ষে টানা দ্বিতীয় সেঞ্চুরি করেছেন রোহিত। ২০১৮ সালে দুবাইয়ে এশিয়া কাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে অপরাজিত ১১১ রান করেছিলেন তিনি। রোহিতের বিদায়ে দলকে একাই টেনে নিয়ে গেছেন অধিনায়ক কোহলি। যদিও তাকে ভালো সঙ্গ দিতে পারেনি অন্য ব্যাটসম্যানরা। না হলে ভারতের স্কোরটা আরো বড় হতে পারত। শেষের দিকে মোহাম্মদ আমির তার টানা দুই ওভারে হার্ডিক পান্ডিয়াকে ২৬ রানে ও মহেন্দ্র সিং ধোনিকে ১ রনে বিদায় করে রানের গতিটা টেনে ধরেন। ব্যাট করতে নেমে বিজয় শঙ্কর ভালোই সঙ্গ দেয়ার চেস্টা করেন কোহলিকে। দলীয় ৪৬.৪ ওভারে বৃষ্টির কারণে খেলা বন্ধ থাকে প্রায় এক ঘণ্টা। বৃষ্টির পর খেলা শুরু হলে পরের ওভারে আমিরের তৃতীয় শিকার হন কোহলি। তবে এর আগেই দলকে তিনশত রানের উপরে নিয়ে যান এই অধিনায়ক। দলীয় ৩১৪ রানে আউট হন কোহলি। আউট হওয়ার আগে ৬৫ বলে ৭ চারে ৭৭ রান করেন তিনি। এ ম্যাচে ৬৫ রান করে কোহলি ভেঙে দিয়েছেন কিংবদন্তি ক্রিকেটার শচীন টেন্ডুলকারের একটি রেকর্ড। ওয়ানডেতে দ্রুততম সময়ে ১১ হাজার রানের মালিক এখন তিনি। পাকিস্তানের বিপক্ষে মাঠে নামার আগে এই মাইলফলক থেকে ৫৭ রান দূরে ছিলেন কোহলি। ওয়ানডেতে ৫১তম হাফ সেঞ্চুরি করে পরে রেকর্ডটি গড়েন তিনি। শেষ পর্যন্ত ভারত ৫ উইকেটে করে ৩৩৬ রান। বিজয় শঙ্কর ১৫ রানে আর কেদাব যাদর ৯ রাঅেপরাজিত ছিলেন। পাকিস্তানের পক্ষে আমির ৩টি উইকেট নেন। একটি করে উইকেট পান হাসান ও ওয়াহাব।
বাসস/১২১৫/স্বব