বাসস দেশ-৯ : খাদ্য পণ্যে ভেজাল বিষয়ে অভিযোগ জানাতে ২৪ ঘন্টা হটলাইন চালুর নির্দেশ

186

বাসস দেশ-৯
হাইকোর্ট আদেশ-ভোক্তা
খাদ্য পণ্যে ভেজাল বিষয়ে অভিযোগ জানাতে ২৪ ঘন্টা হটলাইন চালুর নির্দেশ
ঢাকা, ১৬ জুন, ২০১৯ (বাসস) : পণ্য কিনে প্রতারিত ও ভেজালের বিষয়ে সারা দেশের ভোক্তাদের জরুরি সেবায় দুই মাসের মধ্যে ২৪ ঘন্টার হটলাইন চালু করতে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরকে নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি রাজিক আল জলিল সমন্বয়ে গঠিত একটি হাইকোর্ট ডিভিশন বেঞ্চ আজ এ আদেশ দেয়।
আদালত বলেন, হটলাইন চালুর আগ পর্যন্ত ভোক্তা অধিকার সংক্ষরণ অধিদপ্তরের একটি নম্বর (০১৭৭৭৭৫৩৬৬৮), প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের ৩৩৩ এবং জাতীয় হটলাইন ৯৯৯ এর মাধ্যমে ভোক্তাদের ছুটির দিনসহ ২৪ ঘণ্টা জরুরি সেবা দিতে হবে।
এচাড়াও ওই দুটি নম্বর যেন ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকে এবং ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের নম্বরটির ছুটির দিনসহ ২৪ ঘণ্টা খোলা রাখঝাসহ বিষয়টি ভোক্তাদের জানানোর জন্য ব্যবস্থা নেয়ার কথাও আদালতে বলা হয় ।
একইসঙ্গে বিএসটিআইয়ের পরীক্ষায় ওঠে আসা নিম্নমানের পণ্য বাজার থেকে সরিয়ে নেয়ার আদেশ প্রতিপালন না করায় আদালতে হাজির হওয়া নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মাহফুজুল হককে আদালত অবমাননার হাজিরা থেকে শর্ত সাপেক্ষে অব্যাহতি দিয়েছে আদালত।
আদালতের ইতোপূর্বে দেয়া আদেশ অনুযায়ি আজ আদালতে হাজির হয়ে নি:শর্ত ক্ষমা চেয়ে আবেদন করেন মাহফুজুল হক। তার পক্ষে জানানো হয় নিরাপদ খাদ্যের নিশ্চিত করতে অভিযান অব্যাহত রেখেছে কর্তৃপক্ষ। তাকে অব্যাহতির শর্তে আদালত বলেন, বিশেষ কোন উপলক্ষ্য ও মাস ঘিরে নয়, সারাবছরই ভেজাল ও মানহীন পণ্যের বিরুদ্ধে অভিযান চলমান রাখতে হবে, ভবিষ্যতে আদালতের আদেশ ভঙ্গ করবেন না। যেহেতু নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ জনবল সঙ্কটের কথা বলেছে, তাই সরকারের অন্যান্য ‘এজেন্সির’ সহযোগিতা নিয়ে ভেজালবিরোধী অভিযান তিনি অব্যাহত রাখবেন।
ভেজাল ও নিন্মমানের পন্য বাজার থেকে সরানোর আদেশ প্রতিপালন না করায় নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মাহফুজুল হককে তলব করে ব্যাখ্য দেয়ার জন্য গত ২৩ মে নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। ওইদিন আদেশে তাকে আজ ১৬ জুন হাজির হতে বলা হয়। এর প্রেক্ষিতে আজ আদালতে হাজির হন তিনি।
আদালত বলেন, বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনকে (বিএসটিআই) সারা বছরই ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করতে হবে। এছাড়া মানহীন ৫২ পণ্যের মধ্যে পুন:পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে ব্যর্থ ১৬টি পণ্যের পাশাপাশি বাজারে থাকা সকল পণ্য র‌্যান্ডম টেস্ট ও রিটেস্ট করতে হবে।
আগামী ১৯ আগস্ট এ বিষয়ে পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করে প্রতিষ্ঠানগুলোকে আদালতের আদেশ প্রতিপালনের বিষয়টি অবহিত করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
আদালতে বিএসটিআইয়ের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী সরকার এম আর হাসান। নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানের পক্ষে ছিলেন ব্যারিষ্টার কামাল উল আলম, এম আমিন উদ্দিন এবং মোহাম্মদ ফরিদুল আলম। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের পক্ষে ছিলেন কামরুজ্জামান কচি।
সম্প্রতি বিএসটিআই ৪০৬টি খাদ্যপণ্যের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করে। এর মধ্যে ৩১৩টি পণ্যের পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করা হয়। ৩১৩টির মধ্যে ৫২ পণ্য মানহীন বলে প্রতিবেদন দেয় বিএসটিআই। বিএসটিআইয়ের প্রতিবেদন অনুযায়ী ৫২ নিম্নমানের পণ্য বাজার থেকে প্রত্যাহারের জন্য গত ৬ মে আইনি নোটিশ পাঠায় কনসাস কনজ্যুমার সোসাইটি। নোটিশ অনুযায়ী বাজার থেকে প্রত্যাহার চেয়ে গত ৯ মে ওই সোসাইটির পক্ষে জনস্বার্থে আদালতে রিট দায়ের করেন হাইকোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার শিহাব উদ্দিন খান। এর প্রেক্ষিতে বিএসটিআইর পরীক্ষায় প্রমাণিত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ৫২টি ভেজাল ও নিম্নমাণের পণ্য বাজার থেকে যত দ্রুত প্রত্যাহারে গত ১২ মে নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট। একইসঙ্গে, বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ এবং জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরকে এ নির্দেশ পালন করে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলেন আদালত। পাশাপাশি পণ্যগুলোর বিষয়ে যথাযথ আইন অনুসারে তা নিষ্পত্তি করার নির্দেশ দেয়া হয়। এছাড়াও সংশ্লিষ্ট ভেজাল পণ্যের মান উন্নয়ন না হওয়া পর্যন্ত তা উৎপাদন ও বাজারজাত বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয় আদালত।
বাসস/এএসজি/ডিএ/১৭১৫/কেএমকে