বাসস ক্রীড়া-৭ : ভারত বনাম পাকিস্তান : বিশ্বকাপের একপেশে ইতিহাস

123

বাসস ক্রীড়া-৭
ক্রিকেট-বিশ্বকাপ
ভারত বনাম পাকিস্তান : বিশ্বকাপের একপেশে ইতিহাস
ম্যানচেস্টার, ১৫ জুন ২০১৯ (বাসস) : ভারত-পাকিস্তান ক্রিকেট ম্যাচ মানেই স্টেডিয়ামে একটি সিটও খালি না থাকা, সব টিকিট বিক্রির নিশ্চয়তা, সর্বোচ্চ টিভি রেটিং, পুরো ক্রিকেটর বিশ্বের দৃষ্টি ঐ সময়ের জন্য শুধুমাত্র ২২ গজের লড়াইয়ে সীমাবদ্ধ। এবারের বিশ্বকাপে আগামীকাল ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে চির প্রতিদ্বন্দী দুই দেশের হাই ভোল্টেজ লড়াইয়ে নিশ্চিতভাবেই এই বিষয়গুলোর কোনটাই ব্যতিক্রম হবে না।
দীর্ঘদিনের চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা ও পাকিস্তানের বিপক্ষে দ্বিপাক্ষিক সিরিজে ভারতের খেলতে অস্বীকৃতিতে শুধুমাত্র বিশ্বকাপ কিংবা চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির মত টুর্নামেন্টগুলোতে এই দুই দেশের দ্বৈরথ দেখার সুযোগ পায় ক্রিকেট বিশ্ব। যে কারনে বিশ্বকাপে অন্যান্য ম্যাচগুলোর তুলনায় এই একটি ম্যাচের উত্তেজনা যেমন থাকে তুঙ্গে, তেমনি খেলোয়াড়রাও স্বাভাবিক ভাবেই একটু বেশী চাপ অনুভব করে।
যদিও উপমহাদেশীয় এই দুই ক্রিকেটীয় জায়ান্টের বিশ্বকাপে মুখোমুখি পরিসংখ্যান অনেকটাই একপেশে। বিশ্বকাপে এ পর্যন্ত খেলা দুই দলের মোকাবেলায় ছয়টি ম্যাচেই পাকিস্তানকে পরাজিত করেছে ভারত।
বিশ্বকাপে ভারত বনাম পাকিস্তানের মধ্যকার ম্যাচের ইতিহাস :
১৯৯২ : ভারত ২১৬/৭ (৪৯ ওভার)-পাকিস্তান ১৭৩ (৪৮.১ ওভার)। সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডে ভারত ৪৩ রানে জয়ী।
পাকিস্তানের বিপক্ষে ভারতের ওয়ানডে প্রতিদ্বন্দ্বীতাটা ১৯৭৮ সালে শুরু হলেও ১৯৯২ সালের আগে এই দুই দেশের মধ্যে বিশ্বকাপের কোন ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়নি। ম্যাচটিতে ভারত সহজে জয়ী হলেও পাকিস্তানী কিংবদন্তী জাভেদ মিয়াঁদাদ ম্যাচ চলাকালীন তার অদ্ভূত অঙ্গ ভঙ্গীর জন্য সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন। পাকিস্তানী ইনিংসে উইকেটের পিছনে দাঁড়ানো ভারতীয় উইকেটরক্ষক কিরন মোরে প্রতিনিয়ত আপীল ও পিছনে থেকে স্লেজিংয়ে ব্যস্ত ছিলেন। এক পর্যায়ে বিরক্ত হয়ে মিয়াঁদাদ মোরেকে উদ্দেশ্য করে ক্যাঙ্গারুর মত করে লাফিয়ে উঠেন। বিষয়টি সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডে উপস্থিতি দর্শকদের দারুন হাসির খোরাক যুগিয়েছিল। ইমরান খানের নেতৃত্বে পাকিস্তান ম্যাচটিতে পরাজিত হলেও শেষ পর্যন্ত বিশ্বকাপের শিরোপা ঘরে তুলেছিল।
১৯৯৬ : ভারত ২৮৭/৬ (৫০ ওভার)-পাকিস্তান ২৪৮/৯ (৪৯ ওভার)। চিন্নস্বামী স্টেডিয়ামে ভারত ৩৯ রানে জয়ী।
পাকিস্তানী গতি তারকা ওয়াকার ইউনিসকে ব্যাঙ্গালোরে ১৯৯৬ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে ভারতীয় ব্যাটসম্যান অজয় জাদেজা নাস্তানাবুদ করে ছেড়েছিলেন। ওয়াকার তার শেষ দুই ওভারে ৪০ রান দিয়েছিলেন। এর মধ্যে জাদেজার ২৫ বলে ঝড়ো গতির ৪৫ রানে ভারত ৮ উইকেটে ২৮৭ রান সংগ্রহ করে। এই রান অতিক্রম করা পাকিস্তানী ব্যাটসম্যানদের পক্ষে সম্ভব হয়নি।
১৯৯৯ : ভারত ২২৭/৬ (৫০ ওভার)-পাকিস্তান ১৮০ (৪৫.৩ ওভার)। ওল্ড ট্রাফোর্ডে ভারত ৪৭ রানে জয়ী।
ভারতীয় পেসার ভেঙ্কটেশ প্রসাদ ছিলেন এই ম্যাচে জয়ের নায়ক। কানায় কানায় পূর্ণ ওল্ড ট্রাফোর্ড স্টেডিয়ামে প্রসাদের বিধ্বংসী বোলিংয়ে পাকিস্তানের শক্তিশালী ব্যাটিং লাইন-আপ ধ্বসে পড়ে। প্রসাদ মাত্র ২৭ রানে ৫ উইকেট দখল করেছিলেন। কারগিল যুদ্ধের কারনে দুই দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি মোটেই শান্ত ছিলনা। যে কারনে সুপার সিক্সের এই ম্যাচটিকে ঘিড়ে নেয়া হয়েছিল বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা। যদিও কোন অঘটন ছাড়াই ম্যাচটি শেষ হয়েছিল।
২০০৩ : পাকিস্তান ২৭৩/৭ (৫০ ওভার)-ভারত ২৭৬/৪ (৪৫.৪ ওভার)। সেঞ্চুরিয়ানে ভারত ৬ উইকেট জয়ী।
পাকিস্তানী ওপেনার সাঈদ আনোয়ারের অনবদ্য সেঞ্চুরি সত্তেও শেষ পর্যন্ত ভারতীয় ব্যাটিং লিজেন্ড শচীন টেন্ডুলকারের কাছে নতি স্বীকার করতে হয়েছে রশিদ লতিফের দলকে। তারকা পেসার শোয়েব আখতারকে হতাশ করে টেন্ডুলকার ৯৮ রানের ইনিংস উপহার দেন। পাকিস্তানের করা ২৭৩ রানের জবাবে মাত্র ৪ উইকেট হারিয়ে ভারত জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায়।
ম্যাচ শেষে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের তৎকালীন সভাপতি শাহরিয়ার খান বলেছিলেন, ‘ভারত আজ মূলত তাদের প্রতিভাবান ব্যাটসম্যান টেন্ডুলকারের কারনে আমাদের ছাড়িয়ে গেছে। কিন্তু এই ধরনের ম্যাচে পরাজয়ের কোন ক্ষমা নেই।’
‘লিটল মাস্টার’ খ্যাত টেন্ডুলকার নিজেও ম্যাচ শেষে বলেছিলেন পুরো ইনিংসে আমি নিজেকে শুধু একটি কথাই বলেছি, ‘যে বলটা আমি দেখবো সেটা হিট করবোই’।
২০১১ : ভারত ২৬০/৯ (৫০ ওভার)-পাকিস্তান ২৩১ (৪৯.৫ ওভার)। মোহালিতে ভারত ২৯ রানে জয়ী।
শচীন টেন্ডুলকারকে চারবার জীবন ফিরিয়ে দেবার খেসারত বেশ ভালভাবেই গুনতে হয়েছিল পাকিস্তানী ফিল্ডারদের। সেমিফাইনালে পাকিস্তানের বাজে ফিল্ডিংয়ের সুযোগে টেন্ডুলকার ২৭, ৪৫, ৭০ ও ৮১ রানে জীবন ফিরে পান। এর মধ্যে পাকিস্তানী অধিনায়ক শহীদ আফ্রিদীর বলে তিনবার টেন্ডুলকারের ক্যাচ ফেলেছেন ফিল্ডাররা। ম্যাচ শেষে পরাজয়ের কারনে জাতির কাছে ক্ষমা চেয়েছিলেন আফ্রিদী। টেন্ডুলকারের সর্বোচ্চ ৮৫ রানে ভর করে ভারত ফাইনালে জায়গা করে নেয়। মুম্বাইয়ের ওয়ানখেড়ে স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ফাইনালে শ্রীলংকাকে হারিয়ে বিশ্বকাপের দ্বিতীয় শিরোপা জয় করে ভারতীয়রা।
২০১৫ : ভারত ৩০০/৭ (৫০ ওভার)-পাকিস্তান ২২৪ (৪৭ ওভার)। এডিলেড ওভালে ভারত ৭৬ রানে জয়ী।
টেন্ডুলকারের অবসরের কারনে দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পাওয়া বিরাট কোহলির উপর দলকে এগিয়ে নিয়ে যাবার যে চাপ ছিল সেটা তিনি দারুনভাবে সামলে উঠেছিলেন। ১২৬ বলে তার করা ১০৭ রানের ইনিংসে মোহাম্মদ ইরফানের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তানী পেস আক্রমন ধ্বসে পড়ে। ম্যাচ সেরা পারফরমেন্সের পর কোহলি বলেছিলেন, ‘আমি শুধুমাত্র তাদের বিরুদ্ধে নিজেকে এগিয়ে নিয়ে যাবার লক্ষ্যস্থির করেছিলাম। কারন আমি হারকে ঘৃণা করি।’
বাসস/নীহা/১৭০০/স্বব