আমার বাড়ি আমার খামার প্রকল্পের আওতায় ১৩ লাখ খামার

546

॥ একেএম কামাল উদ্দিন চৌধুরী ॥
ঢাকা, ১৫ জুন, ২০১৯ (বাসস) : আমার বাড়ি আমার খামার প্রকল্পের আওতায় সরকার সারাদেশে প্রায় ১৩ লাখ পারিবারিক খামার গড়ে তুলেছে। এর মাধ্যমে গ্রামীণ হতদরিদ্র জনগোষ্ঠীর জীবনমানের উন্নয়ন হচ্ছে এবং দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ১০টি বিশেষ উদ্যোগের একটি হলো-আমার বাড়ি আমার খামার প্রকল্প। এই প্রকল্পের মাধ্যমে সরকার ২০২০ সালের জুন মাসের মধ্যে সারাদেশে অন্তত ২০ লাখ পারিবারিক খামার করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে।
এ প্রসঙ্গে আমার বাড়ি আমার খামার প্রকল্পের পরিচালক আকবর হোসেন বাসসকে জানান ‘সরকার এই প্রকল্পের আওতায় তহবিল সংগ্রহ ও খামার গড়ে তোলার মাধ্যমে দারিদ্র্য নিরসন এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের দিকে ধাবিত হচ্ছে। প্রকল্পটি দরিদ্র মানুষের আত্মনির্ভরশীল হওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।’
তিনি জানান, এ পর্যন্ত মোট ৯৭ হাজার ১৯৪ টি গ্রাম উন্নয়ন সমিতি গঠন করা হয়েছে। এর মাধ্যমে ২ কোটি ১৫ লাখ দরিদ্র ও হতদরিদ্র মানুষ প্রকল্পের বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা নিয়ে তাদের জীবন মান উন্নত করছে। তবে ২০২০ সালের মধ্যে ৯১ হাজার ৯২ টির বেশি গ্রাম উন্নয়ন সমিতি গঠন করে অন্তত ২ কোটি ৭৩ লাখ দরিদ্র মানুষের জীবন মান উন্নয়নের পরিকল্পনা রয়েছে বলে তিনি জানান।
তিনি বলেন, প্রায় ৪৩ লাখ ১৬ হাজার পরিবার এখন সুবিধা পাচ্ছে যা ২০২০ সালের জুন মাস নাগাদ ৫৪ লাখ ৬০ হাজারে উন্নীত হবে।
প্রকল্পের সুবিধাভোগীরা ২০১৯ সালের এপ্রিল মাস পর্যন্ত মোট ১৫৮০ কোটি ৩৯ লাখ টাকা সঞ্চয় করেছে এবং সরকার এই সঞ্চয়ের সঙ্গে ১৩৮০ কোটি ১৪ লাখ টাকা অনুদান দিয়েছে।
এ প্রসঙ্গে প্রকল্প পরিচালক বলেন, প্রকল্পের মাধ্যমে সরকার দরিদ্র পরিবারগুলোকে পুঁজি গঠনে সহায়তা করছে, প্রশিক্ষণ ও উদ্বুদ্ধকরণের মাধ্যমে তাদের দক্ষতা বাড়িয়ে তুলছে এবং উঠোন বৈঠকের মাধ্যমে তাদেরকে একত্রে বসার সুযোগ করে দিচ্ছে। এতে তারা স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম হচ্ছে এবং সেই সাথে চাহিদা ভিত্তিক ছোট-ছোট পরিবারিক খামার গড়ে তুলছে। প্রকল্পের আওতায় এসব খামারে উৎপাদিত পণ্য বিপণনের সুবিধা নিশ্চিত করা হয়েছে।
তিনি বলেন, বর্তমানে সমিতির সদস্যরা আত্মনির্ভরশীল হয়ে উঠেছে এবং তারা স্বাধীনভাবে ব্যবসাগুলো চালাতে সক্ষম হয়েছে।
আমার বাড়ি আমার খামার প্রকল্পে সরকার নারীর ক্ষমতায়নে বিশেষ জোর দিচ্ছে। একেকটি গ্রাম উন্নয়ন সমিতির ৬০ সদস্যের ৪০ জন সদস্যই নারী।
গ্রাম উন্নয়ন সমিতির প্রতিটি সদস্য প্রতি মাসে ২০০ টাকা করে সঞ্চয় করে এবং সরকার তাদের সমপরিমাণ টাকা বোনাস দেয়। এসব টাকা প্রকল্পাধীন পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক-এর অ্যাকাউন্টে জমা রাখা হয়।
আকবর হোসেন জানান, সংশ্লিষ্ট সমিতির মাধ্যমে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক থেকে ঋণের টাকা পাওয়ার পর প্রতিটি গরীব পরিবারের সদস্যরা মৎস্য, গবাদি পশু, হাঁস-মুরগির খামার, নার্সারি ও উদ্ভিজ্জ বাগান হিসাবে ছোট খামার গড়ে তোলে। ফলে নিম্ন আয়ের মানুষের প্রতি ইঞ্চি ভূমি কৃষি উৎপাদনের জন্য দক্ষতার সাথে ব্যবহার করা হচ্ছে।
তাদের খামারের উৎপাদিত পণ্য বিক্রি করে সেই আয় থেকে প্রতিটি সদস্য সমিতির ঋণ পরিশোধ করে। এভাবে এই দরিদ্রদের দ্বারা গড়ে তোলা তহবিল স্থায়ীভাবে দারিদ্র্য বিমোচনের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে।
ড. হোসেন বলেন, এভাবেই দারিদ্র্য বিমোচনের চক্র হিসাবে এটি দারিদ্র্যের চির অবসান ঘটায়।
তিনি বলেন, গ্রামের দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে আরও আয়বর্ধক কর্মকান্ডে যুক্ত করার মাধ্যমে তাদের জীবন মান উন্নত করার জন্য আগামী বছর থেকে ঋণদানের সর্বোচ্চ সীমা ৫০ হাজার টাকা থেকে ১ লাখ টাকা করার পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার।
বর্তমানে গ্রামের লোকজনকে পারিবারিক খামার তৈরি করার মাধ্যমে নিজেদের সাবলম্বী করার জন্য সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত ঋণ দিয়ে থাকে। যা বর্তমান অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে পর্যাপ্ত নয় বলে তিনি মন্তব্য করেন।