বাজিস-৬ : শেরপুরের ঝিনাইগাতীতে আগরবাতির শলা তৈরি করে সাবলম্বী হচ্ছেন গ্রামবাসী

188

বাজিস-৬
শেরপুর-আগরবাতি- কাঠি
শেরপুরের ঝিনাইগাতীতে আগরবাতির শলা তৈরি করে সাবলম্বী হচ্ছেন গ্রামবাসী
শেরপুর, ৮ জুন, ২০১৯ (বাসস): জেলা শহর থেকে ১২ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে ঝিনাইগাতি উপজেলার হাতিবান্ধা ইউনিয়ন। এ ইউনিয়নের ঘাগড়া কোনাপাড়া গ্রামটি এখন পরিচিত আগরবাতি’র ‘কাঠি পল্লী’ হিসেবে।
ছয়-সাত বছর আগেও এ গ্রামের অনেক পরিবারেই আর্থিক টানাপোড়েন ছিল নিত্যসঙ্গী। বাসিন্দাদের বিরাট একটি অংশকে নিত্য অভাবের সাথে লড়াই করে টিকে থাকতে হয়েছে। আজ সে গ্রামেরই চিত্র পাল্টে দিয়েছেন ইসব আলী (৫০) সহ কয়েকজন উদ্যোক্তা-ব্যবসায়ি।
সেই ইসব আলীই জানালেন তার মতো আরও অনেকের স্বনির্ভর হয়ে উঠার কাহিনী। তিনি জানান, একবার তিনি ঢাকার একটি জায়গায় গিয়ে দেখেন শতাধিক শ্রমিক আগরবাতির শলা বা কাঠি তোলার কাজ করছেন। পরে তিনি নিজের এলাকায় কাজটি শুরু করার সিদ্ধান্ত নেন। কাজটি বুঝে নেয়া ও অন্যদের শিখানোর জন্য তিনি ঢাকা থেকে কয়েকজন দক্ষ শ্রমিক এনে নিজ বাড়িতে পরীক্ষামূলকভাবে আগরবাতির বাঁশের শলা তোলার কাজ শুরু করেন। প্রায় দেড়মাসে দক্ষ শ্রমিকদের কাছে ওইগ্রামের গ্রামের আগ্িরহ অনেক বেকার যুবক-যুবতি কাজটি শিখে নেন।
এরপর আর ঘাগড়া কোনাপাড়া গ্রামের বেকার ও দরিদ্র মানুষদের আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। ধীরে ধীরে গ্রামের প্রায় পাঁচশতাধিক নারী-পুরুষ ও বেকার যুবক-যুবতির কর্মসংস্থান হয়েছে। একসময় ঘাঘরা কোনাপাড়া গ্রামটি পরিচিত হয়ে উঠে কাঠি পল্লী হিসেবে।
ইসব আলী বলেন, ‘প্রথমে আমি একা এ ব্যবসা শুরু করলেও বর্তমানে এ গ্রামের আরও পাঁচ-ছয়জন এ ব্যবসায় নেমেছেন। প্রতিমাসে দুইবার ঢাকার মীর হাজারীবাগ, যাত্রাবাড়ি ও রায়েরবাগ বাজারসমূহে আগরবাতির এ শলা বিক্রি করি।’
তিনি বলেন, ‘বাঁশ কেনা থেকে শুরু করে বাঁশ কাটা ও শলা তোলাসহ যাবতীয় ব্যয় বাবদ প্রতিকেজি শলায় ব্যয় হয় প্রায় ২৫ টাকা। আর ঢাকায় নিয়ে তা বিক্রি করি ৩৩ থেকে ৩৫ টাকা কেজি দরে।এভাবে প্রতিমাসে দু’শ থেকে ২৫০ মণ পর্যন্ত আগরবাতি’র বাঁশের শলা বা কাঠি বিক্রি করে থাকি।’
শলা বা কাঠি শ্রমিক সুফিয়া খাতুন (৪৫) জানান, তার স্বামীর মৃত্যুর পর সন্তান নিয়ে অভাবের সংসার চালাতে তিনি যখন হিমশিম খাচ্ছিলেন তথনই পেটের তাগিতে বেছে নেন আগরবাতির শলা তোলার কাজ। প্রতিকেজি শলা তোলা বা শুকানোর জন্য দশটাকা পাওয়া যায় উল্লেখ করে তিনি জানান, ১২ থেকে ১৫ কেজি শলা তুলে এবং তা রোদে শুকিয়ে চলে তার ছোট সংসার।
বাঁশকাটা শ্রমিক রফিকুল (২৮) জানান, তিনি প্রতিদিন ২০ থেকে ২২ মণ বাঁশ কাটতে পারেন। টুকরো টুকরো করে এ বাঁশ কেটে প্রতিমণ ২০ টাকা হারে দিনে প্রায় দুশ’ থেকে ২৫০ টাকা রোজগার করেন।
এ ব্যাপারে ঝিনাইগাতী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব এস.এম. ওয়ারেজ নাইম বলেন, ‘ঘাঘরা গ্রামের বেকার যুবক-যুবতীরা আগরবাতির শলা তৈরি করে নিজেদের ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়েছেন। তাদেরকে সরকারিভাবে বিভিন্ন সহযোগিতা দেওয়ার জন্য ইতিমধ্যে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।’
বাসস/সংবাদদাতা/১৭৫০/এমকে