বাসস ইউনিসেফ ফিচার-১ : মায়ের দুধই শিশুর শ্রেষ্ঠ খাবার

227

বাসস ইউনিসেফ ফিচার-১
শিশু স্বাস্থ্য-মাতৃদুগ্ধ
মায়ের দুধই শিশুর শ্রেষ্ঠ খাবার
ঢাকা, ৩ জুন, ২০১৯ (বাসস) : তিন মাস আগেই মা হয়েছেন সালমা। ভালোই আছে শিশু রাইয়ান। এই তিন মাসে শুধু বুকের দুধই পান করছিল সে। কিন্তু হঠাৎ করেই বেঁকে বসেন সালমা। স্বামীকে জানান, বুকের দুধের পাশাপাশি ফিডার দিয়ে বাইরের প্যাকেটজাত দুধও খাওয়াতে হবে রাইয়ানকে। পাশের বাসার ভাবী বলেছেন- বাইরের দুধ পান করালে ছেলের স্বাস্থ্য আরো ভালো হবে। আর সালমার শরীরও ঠিক থাকবে।
ভাবীর কথা শোনার পর থেকেই গোঁ ধরে বসে আছেন সালমা। তাকে যতই বুঝানো হচ্ছে তিনি ততই বিগড়ে যাচ্ছেন। তার এক কথা- বুকের দুধের পাশাপাশি ফিডার ধরাতে হবে বাচ্চাকে। অগত্যা স্বামী বাজার থেকে কিনে আনলেন বেশ কয়েকটি ফিডার আর প্যাকেটজাত দুধ।
প্রথম কয়েকদিন ভালোভাবে চললেও মাত্র দুই সপ্তাহের মাথায় পেট খারাপ হয় রাইয়ানের। দেখা দেয় ডায়রিয়া। এরপর চলে ঔষুধ। দু’দিন পর ঠিক হয়। এভাবে কয়েকদিন পরপরই অসুস্থ হতে থাকে রাইয়ান।
আট মাস বয়সী সেলিম হঠাৎ করে একদিন খুব অসুস্থ হয়ে যায়। মূলত রাতে খিধে পেলে সেলিমের মা মুখে ফিডার গুঁজে দিত। এতদিন ধরে ভালোই ফিডার খাচ্ছিল সেলিম। কিন্তু সেদিন হঠাৎ ঘুমন্ত অবস্থায় ফিডার খাওয়ার সময় দুধ শ্বাসনালীতে আটকে যায়। আর তাতেই শুরু হয় বিপত্তি। শেষ পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি করাতে হয় সেলিমকে।
শিশু বিশেষজ্ঞদের মতে, মায়ের দুধ যথেষ্ঠ পাচ্ছে না অথবা প্যাকেটজাত দুধের পুষ্টিগুণ অনেক বেশি এমন কিছু ভুল ধারনা থেকেই প্রথমে শিশুদের ফিডার খাওয়ানো শুরু হয়। কিন্তু শুধুমাত্র ফিডার খাওয়ানোর কারণেই শিশুরা অনেক ধরনের মারাত্মক রোগে আক্রান্ত হয়।
ঢাকা শিশু হাসপাতালের ডা. সাইদুর রহমান বলেন, শিশুদের জন্য মায়ের বুকের দুধই হচ্ছে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ খাবার। জন্মের প্রথম ছয় মাস শিশুকে বুকের দুধ ছাড়া আর কিছুই খাওয়ানো যায় না। ছয় মাস পর বুকের দুধের পাশাপাশি অন্যান্য খাবার অল্প অল্প দেওয়া যায়।
তিনি বলেন, আমার জানা মতে কোন ডাক্তারই বাচ্চাদের ফিডার খাওয়ানোর কথা বলেন না। কারণ, ফিডার খাওয়ানোর ফলে অনেক ধরনের রোগ দেখা দেয়। তার মধ্যে নিউমোনিয়া, অ্যাজমা, কানাপাকা, অতিরিক্ত ওজনসহ বিভিন্ন ধরনের রোগে আক্রান্ত হতে পারে। এছাড়াও শিশুদের মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
কিন্তু অনেক শিক্ষিত মা-বাবাই দেখা যায় শিশুকে ফিডার খাওয়াচ্ছেন। এর মূল কারণ হচ্ছে তারা শিক্ষিত হলেও সচেতন নন। আর শিশুরা যখন ফিডারের মাধ্যমে দেওয়া প্যাকেটজাত দুধের স্বাদ পেয়ে যায় তখন তারা আর মায়ের দুধের প্রতি আকৃষ্ট হতে চায় না।
শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. দেবাশীষ তালুকদার বলেন, ফিডারের নিপলের সাহায্যে শিশুর ছোট মুখে দুধের ধারা কখনো সরু, কখনো জোওে নেমে আসে। শিশু যদি তাল মিলিয়ে তা গিলতে না পারে, তবে হঠাৎ গলায় আটকে যায়। এতে দুধ শ্বাসনালি বা ফুসফুসে ঢুকে মারাত্মক সমস্যা তৈরি করে।
এছাড়াও ঘুমন্ত অবস্থায় শিশু দুধ পান করলে তা অনেক সময় মুখে জমা করে রাখে। এরফলেও দুধ শ্বাসনালীতে আটকে গিয়ে মারাত্মক সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে।
তিনি বলেন, ফিডার খাওয়ানোর ফলে এসব ছাড়াও শিশুর শরীরে আরো বিভিন্ন ধরনের রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিতে পারে। যার মধ্যে কানপাকা রোগ অন্যতম। এছাড়াও অ্যাজমা, নিউমোনিয়াসহ আরো জটিল রোগে আক্রান্ত হতে পারে শিশুরা।
ডা. তালুকদার বলেন, ফিডারে খাওয়ানোর সময় নিপলের ছিদ্রপথে শিশুর পেটে বাতাস ঢোকে, তাতে শিশুর পেটব্যথা উপসর্গ তৈরি হয়। শিশুর অন্ত্রে নানা রকম জীবাণুর প্রবেশ ঘটে, ফলে সে দুধের অ্যালার্জি-জনিত অসুখ ছাড়াও উদরাময় রোগে ভোগে। সঙ্গে দেখা দেয় কোষ্ঠকাঠিন্য।
এছাড়াও ফিডারে খাওয়া শুরু করলে শিশুরা আর মায়ের দুধ পান করতে চায় না। কারণ, বাজারের প্যাকেটজাত দুধ কিছুটা মিষ্টি হয়ে থাকে। ফলে, শিশুরা মায়ের দুধের যেসব উপকারিতা রয়েছে তা থেকে বঞ্চিত হয়। আর তাই, ফিডার কোনভাবেই শিশুদের জন্য মঙ্গল বয়ে আনে না।
বাসস/ইউনিসেফ ফিচার/কেটিকে/আরজি/আহো/১৭২০/এসএইচ