বাসস ইউনিসেফ ফিচার-১ : সংক্রামক ব্যাধি জলবসন্ত রোধে শিশুদের সময়মত টিকা দিতে হবে

251

বাসস ইউনিসেফ ফিচার-১
জলবস্ত-ভ্যাকসিন
সংক্রামক ব্যাধি জলবসন্ত রোধে শিশুদের সময়মত টিকা দিতে হবে
ঢাকা, ২ জুন, ২০১৯ (বাসস) : রাত তখন প্রায় সাড়ে তিনটা। কিন্তু চোখে ঘুম নেই গোলাম রসুল আর তার স্ত্রী সুমাইয়ার। দু’জনের চেহারায় ক্লান্তির ছাপ। কিন্তু তারপরও জেগে আছেন দু’জনেই। কারণ তাদের মাত্র আট বছর বয়সী রাইয়ান আর পাঁচ বছর বয়সী রাইফা অসহ্য যন্ত্রণায় ছটফট করছে। তাদের জলবসন্ত (চিকেন পক্স) হয়েছে। প্রথমে রাইয়ান এ রোগে আক্রান্ত হয়। তার একদিন পরেই আক্রান্ত হয় রাইফা।
বিশেষজ্ঞের মতে জলবসন্ত একটি সংক্রামক ব্যাধি। পরিবারের কারো এক জনের হলে তা অন্যদের বিশেষ করে শিশুদের মাঝেও সংক্রমিত হয়। ছোট-বড় সবাই এ রোগে আক্রান্ত হতে পারে। তবে দশ বছরের কম বয়সী শিশুরা আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
ঢাকা শিশু হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. সাইদুর রহমান সোহাগ বলেন, ‘ছোট কিংবা বড় সবাই এই জলবসন্ত বা চিকেন পক্সে আক্রান্ত হতে পারে। তবে শিশুদের আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি। এটি একটি সংক্রামক ব্যাধি। পরিবারের একজনের হলে অন্যদেরও হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। বিশেষ করে শিশুদের। মূলত ভেরিসেলা জোস্টার নামক এক ভাইরাসের কারণে এই জলবসন্ত হয়।’
মূলত গরমের শুরুতে এ রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি দেখা যায়। কারণ এসময় আবহওয়া বেশ শুষ্ক থাকে। ফলে শিশুরা এই ভাইরাসে বেশি আক্রান্ত হয় বলে উল্লেখ করেন তিনি।
ডা: সোহাগ বলেন, ‘শুরুতে সামান্য জ্বর হতে পারে। পরে শরীরে এক ধরনের ফোসকা পড়ে। এ সময় রোগীর প্রচন্ড জ্বর হতে পারে এবং সারা শরীর চুলকায়। কিন্তু আঙ্গুলের নখ দিয়ে চুলকানো কোনভাবেই উচিত নয়। কারণ এরফলে ফোসকা গলে যেতে পারে এবং তা শুকানোর পর অনেকটা চামড়ার ভিতরে ঢুকে যায় এবং গর্ত হয়ে যায়। এসময় না চুলকিয়ে কোন গাছের পাতা বিশেষ করে নিম গাছের পাতা রোগীর শরীরে বুলিয়ে দিলে রোগীর চুলকানি অনেকটা লাঘব হয়।’
তিনি আরো বলেন , ‘এ রোগ বাতাসের মাধ্যমে দ্রুত একে অপরকে আক্রমণ করে। এছাড়াও আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি, কাশি থেকেও এ রোগ সংক্রমিত হতে পারে।’
ঢাকা মেডিকেল কলেজ এন্ড হাসপাতালের রেজিষ্ট্রার ডা. মনোয়ারা হক বলেন, জলবসন্ত হওয়ার পূর্বে শরীরে বেশ কিছু লক্ষণ দেখা দেয় যেমন শরীর ম্যাজম্যাজ করা, গা-হাত-পা ব্যথা করা এবং মাথাব্যথা করা। এর পাশাপাশি একটু সর্দি-কাশিও হতে পারে। এসময় রোগীর গাঁয়ে সামান্য জ্বর আসতে পারে। এরপর শরীরে ছোট ছোট বিচি অথবা ঘামাচির মতো কিছু উঠতে দেখা যায়। তারপর সেটা একটু পর বড় হতে থাকে এবং ভেতরে পানি জমতে থাকে।
তিনি বলেন, চিকেন জলবসন্ত হওয়ার পর রোগীর জ্বর অস্বাভাবিক রকমের বেড়ে যেতে পারে এবং শরীর খুব দুর্বল হয়ে যায়। এতে ভয় পেয়ে যাওয়ার কিছু নেই। এসময় ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবন করলে জ্বর অনেকটা নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। তবে শিশুদের জলবসন্ত কোনো বিশেষ ওষুধের প্রয়োজন হয় না। এটি প্রতিরোধে ভ্যাকসিন বা টিকা পাওয়া যায়। সময়মত শিশুকে ভ্যাকসিন বা টিকা দিয়ে রাখাটাই সবচেয়ে ভাল প্রতিরোধক।
তারপরও কোন অভিভাবক ভয় পেয়ে গেলে তারা ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে শিশুদের ওষুধ সেবন করাতে পারেন বলে তিনি মন্তব্য করেন।
ডা. মনোয়ারা বলেন, ‘চিকেন জলবসন্ত হলে খাওয়ার ব্যাপারে সতর্ক থাকা দরকার। কারণ এ সময় রোগীর খাওয়ার রুচি থাকে না বললেই চলে। তবে এসময় রোগীকে প্রচুর পরিমাণ পানি পান করাতে হবে। এছাড়াও ডাবের পানি খাওয়ানো যায়। এর পাশাপাশি রোগীকে বিভিন্ন ধরনের পুষ্টিকর খাবার দিতে হবে।’
এছাড়াও রোগীর কাপড়, ব্যবহৃত বিছানাসহ অন্যান্য কাপড় ভালো করে ধুঁয়ে ফেলতে হবে। কারন জলবসন্ত একটি সংক্রামক ব্যাধি।
বাসস ফিচার/কেটিকে/স্বব/১৬০৫/আহো/-এসএইচ