প্রায় শেষ হয়ে এসেছে জাতীয় ঈদগাহ প্রস্তুতির কাজ

706

ঢাকা, ১ জুন, ২০১৯ (বাসস) : পবিত্র ঈদুল ফিতরের প্রধান জামাতের নামাজ আদায়ের জন্য সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে জাতীয় ঈদগাহ প্রস্তুতি কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে।
আজ শনিবার পর্যন্ত ঈদগাহ প্রস্তুতির কাজ প্রায় ৮৫ শতাংশ শেষ হয়েছে। আগামীকাল রোববারের মধ্যে ঈদগাহ পুরোপুরি প্রস্তুতের লক্ষ্য নিয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) কাজ করে যাচ্ছে।
ডিএসসিসি’র অঞ্চল-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী ড. মোহাম্মদ শফিউল্লাহ আজ শনিবার সকালে বাসস’কে এতথ্য জানিয়েছেন।
আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ঈদের দিন সকাল সাড়ে ৮টায় জাতীয় ঈদগাহে ঈদুল ফিতরের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হবে।
ডিএসসিসি মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন আগামীকাল রোববার সকাল ১১টায় ঈদগাহ ময়দান প্রস্তুতি কাজ সরেজমিন পরিদর্শন করবেন। পরে মেয়র সেখানে ঈদগাহের সার্বিক প্রস্তুতি বিষয়ে সাংবাদিকদে ব্রিফ করবেন।
সিটি করপোরেশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, ঈদগাহে এবার ৯০ হাজার থেকে এক লাখ মুসল্লির জন্য নামাজ আদায়ের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এছাড়াও পাঁচ থেকে ছয় হাজার নারী মুসল্লির জন্য আলাদাভাবে পর্দা দিয়ে নামাজ আদায়ের বিশেষ ব্যবস্থা থাকছে। তাঁদের জন্য আলাদা প্রবেশ পথেরও ব্যবস্থা থাকছে।
এবারও প্যান্ডেল তৈরির কাজ করছেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান পিয়ারু সরদার অ্যান্ড সন্স। মূলত ঈদগাহের প্যান্ডেল তৈরি, সামিয়ানা ও বৃষ্টি নিরোধক ত্রিপল টাঙানো এবং ঈদগাহ ময়দান পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার কাজটি করে ডিএসসিসি। গণপূর্ত অধিদফতরের তত্ত্বাবধানে মাটি সমান এবং গাছে রং করার কাজ করা হচ্ছে বলে জানান প্রকৌশলী ড. মোহাম্মদ শফিউল্লাহ।
পিয়ারু সরদার অ্যান্ড সন্সের ব্যাবস্থাপক মো. মোজাম্মেল হক আজ বাসস’কে বলেন, ১০ রমজান থেকে তারা ঈদগাহ ময়দান প্রস্তুতের কাজ শুরু করেছেন। প্রথম দিন থেকে গত মঙ্গলবার পর্যন্ত প্রতিদিন ১০০ জন শ্রমিক এবং বুধবার থেকে ১৭০ জন শ্রমিক দিনরাত কাজ করে যাচ্ছেন। ৪৩ হাজার বাঁশ এবং প্রায় ৩শ’ মন রশি দিয়ে ঈদগাহ ময়দানে প্যান্ডেল নির্মাণ কাজ করা হচ্ছে।
তিনি জানান, ইতোমধ্যে বাঁশ দিয়ে অস্থায়ী অবকাঠামো নির্মাণ ও ত্রিপল টাঙানোর কাজ শেষ হয়েছে। আজ শনিবারের মধ্যে সামিয়ানা টাঙানো শেষ করা সম্ভব হবে। এরপর অন্যান্য সাজসজ্জার কাজ সম্পন্ন হবে।
নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ শফিউল্লাহ আরও বলেন, ঈদের নামাজের জন্য ঈদগাহ প্রস্তুত করা এবং নামাজ শেষ হওয়া পর্যন্ত পুরো প্রক্রিয়ার কাজ বিভিন্ন সংস্থা মিলে করে। আমরা সিটি কর্পোরেশন শুধু প্যান্ডেল তৈরি, সামিয়ানা ও বৃষ্টি নিরোধক ত্রিপল, মোবাইল টয়লেট স্থাপন এবং ঈদগাহের ভেতরে ও বাইরে সার্বিক সৌন্দর্য ও পরিষ্কার-পরিচ্ছনতার কাজ করি।
তিনি আরও জানান, নিরাপত্তার বিষয়টি দেখভাল করবে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি), র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটিলিয়ান (র‌্যাব) ও অন্যান্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থা। আর মাইকিংয়ের কাজ করবে তথ্য মন্ত্রণালয়।
নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন, অজুর পানি ছাড়াও খাওয়ার পানির জন্য ওয়াসাকে বলা হয়েছে। এছাড়া কাকরাইল, মৎস্য ভবন, জাতীয় প্রেস ক্লাব, দোয়েল চত্বর ও এর আশপাশের র‌্যাব, পুলিশ ও গোয়েন্দা সদস্যরা নিরাপত্তার জন্য নিয়োজিত থাকবে। ভিআইপিদের নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করা হবে। সিটি কর্পোরেশন ছাড়াও আলাদা ক্যামেরা ও কন্ট্রোল রুম স্থাপন করবে ডিএমপি। নিরাপত্তা দেবে র‌্যাবের বোমা ডিসপোজাল ইউনিট এবং ডগ স্কোয়াড। ঈদগাহের চারপাশে সাদা পোশাকে গোয়েন্দারাও থাকবেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, শ্রমিকরা ইতোমধ্যেই জাতীয় ঈদগাহ ময়দানের ঘাস কাটার সঙ্গে বিভিন্নস্থানের উঁচু নিচু মাটি কেটে সমান কাজ সম্পন্ন করেছেন। প্যান্ডেলের জন্য বাঁশের তৈরি অবকাঠামোর কাজ ইতিমধ্যেই শেষ হয়েছে। এছাড়াও বৃষ্টি নিরোধক ত্রিপল (সামিয়ানা) টানানোর কাজও শেষ। এখন সামিয়ানা টানানোর সাথে সাথে লাইট, ফ্যান লাগানো হচ্ছে। নিরাপত্তার জন্য ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা বসানোসহ সাজসজ্জার কাজ চলছে।
জাতীয় ঈদগাহ ময়দানকে ঘিরে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের লোকজন কাজ করছেন। দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্ট সংলগ্ন জাতীয় ঈদগাহ ময়দানের অজুখানা ও আশপাশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার পাশাপাশি সব প্রস্তুতি এগিয়ে নিচ্ছে ডিএসসিসি।
জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে রাষ্ট্রপতি, মন্ত্রী, প্রধান বিচারপতি ও হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি, বিদেশি কূটনৈতিক, রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিসহ সাধারণ মুসল্লিরা ঈদের নামাজ আদায় করেন। এরই ধারাবাহিকতায় এবারও ঈদুল ফিতরে লাখো মুসল্লি জাতীয় ঈদগাহে নামাজ আদায় করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। সে লক্ষ্যে চলছে পূর্ণ প্রস্তুতি।