বাসস ইউনিসেফ ফিচার-৩
সন্তান- সম্পর্ক
সন্তানদের সঙ্গে বাবা-মার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রাখা গুরুত্বপূর্ণ
ঢাকা, ৩০মে, ২০১৯ (বাসস) : সবে প্রথম সাময়িক পরীক্ষা শেষ হয়েছে আয়াতের। ক্লাস এইটে গোল্ডেন এ প্লাস পেয়ে নাইনে যখন ভর্তি হয় বাবা-মার ইচ্ছে ছেলে সাইন্স নিয়ে পড়াশোনা করুক। আয়াতও বাবা-মার ইচ্ছে মত ভর্তি হয় সাইন্সে। নাইনে উঠার পর বাবা আয়াতকে একটি মোবাইল কিনে দেয়। এতদিন ধরে মোবাইলে সে সবার সামনে কথা বললেও ইদানিং ফোন আসলেই সে উঠে গিয়ে আরেক রুমে গিয়ে কথা বলে। প্রথমে বিষয়টিকে পাত্তা না দিলেও কয়েকদিন পর নজরে আসে মায়ের। আর সেদিনই আয়াতের মা বিষয়টি জানায় তার বাবাকে। পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারে আয়াত তারই সমবয়সী এক মেয়ের সাথে কথা বলে। এমনকি বাইরেও তারা দেখা করে।
শ্রাবন্তী এবার ক্লাস টেন-এ উঠেছে। আয়াতের মত আগে সেও সবার সামনে ফোনে কথা বললেও এখন ফোন আসলেই চলে যায় আরেক রুমে। আবার মাঝে মাঝে ফোন কেটে দেয়। শ্রাবন্তীর বাবা-মা বিষয়টি বুঝতে পারলেও সরাসরি কিছু না বলে খোঁজ-খবর নিতে থাকে। পরে জানতে পারেন তাদের মেয়ে গোলাম রসুল নামে কলেজ পড়–য়া এক ছেলের সাথে কথা বলে। এমনকি প্রায় সময় তারা বিভিন্ন রেস্টুরেন্টে সময়ও কাটায়।
বিশেষজ্ঞদের মতে একজন ছেলের সাথে একজন মেয়ের অথবা একজন মেয়ের সাথে একজন ছেলের কি সম্পর্ক তা আগে বুঝতে হবে। বিশেষ করে কিশোর এবং কিশোরী বয়সে সদ্য পা দেওয়া ছেলে-মেয়েদের মধ্যে বিপরীত লিঙ্গের প্রতি একধরনের আগ্রহ তৈরী হয়। এসময় তাদের শারীরিক এবং মানসিক পরিবর্তন ঘটে। হরমোনেরও পরিবর্তন হয়। শিশু বয়সের জ্ঞানীয় বিকাশের (কগনিটিভ ডেভেলপমেন্ট) মিথস্ক্রিয়ায় তাদের মধ্যে আবেগ তৈরি হয়। আর এ কারনেই একজন আরেকজনের প্রতি বিশেষ করে বিপরীত লিঙ্গের প্রতি তাদের আকর্ষণ তৈরি হয়।
মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. মাহমুদুল্লাহ’র মতে এ সময় প্রায় সব বাবা-মা এবং অন্যান্য অভিভাবকরা ভয় পেয়ে যান। তাদের ধারনা হয় তাদের ছেলে বা মেয়ে উচ্ছন্নে গেল। আর তাকে দিয়ে কিছুই হবে না। কিন্তু আমাদের উচিত বিষয়টি নিয়ে আরো গভীরভাবে ভাবার। আর এজন্য দরকার সন্তানের সাথে কথা বলা। তার সাথে বন্ধুত্ব¡ গড়ে তোলা।
তিনি বলেন, এসব না করে যদি সন্তানের সাথে রুঢ় আচরন করা হয় তবে বিষয়টি আরো জটিল আকার ধারন করে। এবং আমাদের মত দেশগুলোতে এটাই হয়ে থাকে। প্রায় সব অভিভাবকই সন্তানের উপর চাপ তৈরী করে। আবার অনেকে তাদের সন্তানের সেই বন্ধু এমনকি তার পরিবারকে হুমকি-ধমকি পর্যন্ত দিয়ে আসে। তারা কখনোই বুঝতে চেষ্টা করেন না যে, এসব হুমকি বা সন্তানের উপর চাপ তৈরী করা কখনোই সুফল বয়ে নিয়ে আসে না। বরং সন্তানের ক্ষতি হয়।
বিশিষ্ট মনোরোগ চিকিৎসক ডা. হেলাল উদ্দিন বলেন, আমরা বড়রাই প্রায় সময়ই ভুল করে থাকি। কিন্তু আমরা ভাবি আমি যা করছি তাই ঠিক। মূলত কৈশোর বয়সে পা দেওয়া সন্তানদের চিন্তা-ভাবনাও তাই। তারা ভাবে যে, তারা যা করছে তাই ঠিক। আর এ সময় যদি কেউ বাধা দেয় তাহলে হিতে বিপরীত হওয়ার সম্ভাবনাই সবচেয়ে বেশী।
তিনি বলেন, এসব সন্তানদের বুঝতে হলে বিশেষ করে তাদের কি চাহিদা বা তারা কি করতে চায় সেটা বুঝতে তাদের সাথে আগে বন্ধু সুলভ আচরন করতে হবে। তারা যদি মনে করে যে বাবা-মা তার বন্ধু তখন সে সব বিষয় নিয়ে আলোচনা করবে। আর সে সময়ই পিতা-মাতা তাদের সন্তানদের বুঝাতে পারবেন কোন বিষয়টি ভালো আর কোনটি খারাপ। সন্তানদের বুঝাতে হবে যে, এসব দিকে মন দিলে পড়ালেখাও খারাপ হতে পারে। আর এর ফলে তার জীবনের পুরো ক্যারিয়ার ধ্বংস হয়ে যেতে পারে।
ডা. হেলাল বলেন, কোন অবস্থাতেই সন্তানদের উপর রাগ করে অথবা মারধর করা যাবে না। এর ফলে ভালোর পেয়ে মন্দই বেশী হবে। আর তাই আগে সন্তানদের বুঝতে হবে। তাকে সময় দিতে হবে।
বাসস ইউনিসেফ ফিচার/ফই/স্বব/১৭৩০/আহো/-এসএইচ
Home 0সকল সংবাদ বাসস দেশ বাসস ইউনিসেফ ফিচার-৩ : সন্তানদের সঙ্গে বাবা-মার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রাখা গুরুত্বপূর্ণ