চাঁদপুরের ৪৪ গ্রাম আদালতে ১০ টাকা ফি তে ১১৩৬টি মামলা নিষ্পত্তি

782

চাঁদপুর, ১৪ জুন ২০১৮ (বাসস) : জেলার ৪৪ গ্রাম আদালতে ১০ টাকা ফি তে ১১৩৬টি মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। গ্রামের নারী, দরিদ্র ও বিপদাপন্ন জনগোষ্ঠী নিজেদের মধ্যকার বিরোধ স্থানীয় পর্যায়ে দ্রুততম সময়ে, স্বল্প খরচে ও স্বচ্ছতার সাথে নিষ্পত্তি করার লক্ষ্যে চাঁদপুরের ৫ উপজেলার ৪৪ ইউনিয়নে চলছে গ্রাম আদালতের কার্যক্রম।
মাত্র ১০ টাকা ফি দিয়ে আবেদনকারী (বাদী) ও প্রতিবাদী (বিবাদী) এ আদালতে চুরি, ঝগড়া বিবাদ, কলহ মারামারি, প্রতারণা, হুমকি, নারীর শ্ল¬ীলতাহানী, বল প্রয়োগে কাউকে জখম, ইভটিজিং, পাওনা টাকা আদায় সংক্রান্ত, অবৈধ দখল থেকে সম্পত্তি উদ্ধার, গবাদি পশু চুরি কিংবা মেরে ফেলা, গবাদি পশু কর্তৃক ফসল বিনষ্ট, কৃষক-শ্রমিকদের প্রাপ্য মজুরি আদায় সংক্রান্ত ইত্যাদি মামলা ৩ মাসের মধ্যে গ্রাম আদালতের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করা যাবে।
এসব ফৌজদারী ও দেওয়ানী মামলার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৭৫ হাজার টাকা পর্যন্ত মূল্যের বিরোধীয় যে ইউনিয়নে মামলা হবে, সে ইউনিয়নের গ্রাম আদালতে নিষ্পত্তি করতে পারবে। গ্রাম আদালতে আইনজীবী নিয়োগের বিধান না থাকলেও উভয় পক্ষ প্রতিনিধি নিয়োগ করতে পারবে।
সম্প্রতি চাঁদপুর জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত গ্রাম আদালত সম্পর্কে ব্যাপক জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে গণমাধ্যমের ভূমিকা শীর্ষক মতবিনিময় সভায় এ তথ্যগুলো জানানো হয়।
জেলা প্রশাসন ও স্থানীয় সরকার বিভাগের অধীন ‘বাংলাদেশ গ্রাম আদালত সক্রিয়করণ (দ্বিতীয় পর্যায়) প্রকল্প’। মতবিনিময় সভায় জাতীয় গণমাধ্যম, স্থানীয় দৈনিক পত্রিকা ও অনলাইন পোর্টালের প্রায় ৫৫ জন সাংবাদিক, চেয়ারম্যান ও উপকারভোগীসহ ৬৫জন অংশ গ্রহণ করেন।
বাংলাদেশ গ্রাম আদালত সক্রিয়করণ (দ্বিতীয় পর্যায়) প্রকল্প’ চাঁদপুর এর ডিস্ট্রিক্ট ফ্যাসিলিটেটর নিকোলাস বিশ্বাস জানান, ২০১৬ থেকে শুরু হওয়ার এ প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের ২৭ জেলার ১০৮০ ইউনিয়নে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত ৩৬ হাজার ৯৫৮ টি মামলা নিষ্পত্তি হয়। এগুলোর মধ্যে সরাসরি ইউপির গ্রাম আদালতে মামলা দায়ের হয় ৩১ হাজার ৭৬৫ এবং উচ্চ আদালত থেকে ২ হাজার ৫ ০৫টি মামলা প্রেরণ করা হয়।
গ্রাম আদালতে আবেদনকারী ও আদালত পরিচালনাকারী উভয় অংশে উল্লে¬খযোগ্য হারে নারীর অংশগ্রহণ ছিলো। চাঁদপুরের পরিসংখ্যানে ৮ উপজেলার মধ্যে ৫ উপজেলার ৪৪ ইউনিয়নে গ্রাম আদালত সক্রিয় রয়েছে বলে জানানো হয়। এরমধ্যে মতলব দক্ষিণে ৪, মতলব উত্তরে ৮, ফরিদগঞ্জে ১০, শাহরাস্তিতে ১০ ও কচুয়ার ১২টি ইউনিয়ন রয়েছে। তিনি আরো জানান চাঁদপুর জেলায় এ পর্যন্ত ৪৪ টি গ্রাম আদালতে ১০ টাকা ফিতে ১১৩৬ মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। মামলা দায়ের হয়েছে ১৩৪৫টি। মামলা নিষ্পত্তির হার ৮০ শতাংশ।
এসব ইউনিয়নের জনগ্রতিনিধিদেরকে এরইমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও বিচারকি এজলাস তৈরি করে দেয়া হয়েছে। সরকারি এ প্রকল্প বাস্তবায়নে কাজ করছে স্থানীয় সরকার বিভাগ, স্থানীয় সরকার, পল্ল¬ী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়। অর্থায়ন করেছে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) ও ইউরোপিয় ইউনিয়ন।
উন্মুক্ত আলোচনায় সাংবাদিকরা গ্রাম আদালতের বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা তুলে ধরেন।
তারা বক্তব্যে বলেন, বিশেষ করে গ্রাম আদালতের বিচারিক ক্ষেত্রে টাকা আদায় পরিমান ৭৫ হাজার এর অধিক করা প্রয়োজন। জেলার সকল গণমাধ্যম গ্রাম আদালত বিষয়ে সম্পর্কে মানুষ জানার জন্য ১৬০টি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছেন। এখন থেকে গ্রাম আদালতকে আরো শক্তিশালী ও এ গ্রকল্পে কর্মরতদের জবাবদিহিতা বৃদ্ধির জন্য সরেজমিন ও অনুসন্ধানমূলক প্রতিবেদন প্রকাশ করবে সাংবাদিকরা।
স্থানীয় সরকার বিভাগ চাঁদপুর এর উপ-পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মো. মঈনুল হাসানের সভাপতিত্বে সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক মো. মাজেদুর রহমান খান।
জেলা প্রশাসক বক্তব্যে বলেন, সরকার গ্রাম আদালতকে শক্তিশারী করতে চায়। এ জন্য ইউনিয়ন পরিষদে চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্য থাকা সত্বেও প্রকল্পের মাধ্যমে এ কাজটি তদারকি করাচ্ছেন। সরকার দরিদ্র নয়, সব জায়গায় কাজের জন্য অর্থ ছড়িয়ে দিচ্ছেন। মূলত এ অর্থ কাজে লাগছে কিনা এ বিষয়টি আমাদের বেশি করে দেখতে হবে। গ্রামের সাধারণ মানুষ জানতে হবে ছোট খাট সমস্যায় উচ্চ আদালতে না গিয়ে মাত্র ১০ টাকা ফি দিয়ে গ্রাম আদালতে সমাধান করা সম্ভব। গ্রাম আদালতগুলো কি ধরনের কাজ করছেন এবং জনগণ কি সুবিধা পাচ্ছেন কোন কোন ক্ষেত্রে সমস্যা হচ্ছে এসব বিষয়গুলো সাংবাদিক সমাজ তুলে ধরার জন্য আহবান জানাচ্ছি।
‘বাংলাদেশ গ্রাম আদালত সক্রিয়করণ (দ্বিতীয় পর্যায়) প্রকল্প’ চাঁদপুর এর ডিস্ট্রিক্ট ফ্যাসিলিটেটর নিকোলাস বিশ্বাস এর সঞ্চালনায় ‘গ্রাম আদালত সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধিমূলক কার্যক্রম’ সম্পর্কে বক্তব্য রাখেন উল্লে-খিত প্রকল্পের ইউএনডিপি’র কম্যুনিকেশনস ও আউটরিচ স্পেশালিস্ট অর্পণা ঘোষ।