ঈদ উপলক্ষে রেলের আগাম টিকিট বিক্রি শুরু

302

ঢাকা, ২২ মে, ২০১৯ (বাসস) : আসন্ন পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে ঘরমুখো মানুষের পরিবহনের জন্য রাজধানীতে রেলের আগাম টিকিট বিক্রি আজ বুধবার সকাল থেকে শুরু হয়েছে। রাজধানীর কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনসহ বিমানবন্দর, বনানী, তেজগাও স্টেশন এবং ফুলবাড়িয়া থেকে আগাম টিকিট বিক্রয় করা হয়েছে। যাত্রী সাধারণের ভোগান্তী লাঘবে এবারই প্রথম পাঁচটি স্টেশন থেকে অগ্রিম টিকেট বিক্রয় করলো রেলওয়ে। এর আগে শুধুমাত্র কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে অগ্রিম টিকিট বিক্রি করা হতো।
আগাম টিকিট দেওয়ার প্রথম দিন আজ বুধবার ৩১ মে’র টিকিট বিক্রি করা হয়েছে। ন্যাশনাল আইডি কার্ড দেখিয়ে একজন ব্যক্তি সর্বোচ্চ চারটি টিকিট কিনতে পেরেছেন।
মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ি এবার অ্যাপসের মাধ্যমে ট্রেনের ৫০ শতাংশ টিকিট বিক্রি করার কথা রয়েছে। তবে অ্যাপ ব্যবহার করেও টিকেট কাটতে না পারার অভিযোগও রয়েছে।
অগ্রীম টিকিট কেনার জন্য সকাল থেকেই বিপুল সংখ্যক মানুষ কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে উপস্থিত হন। তারা দীর্ঘ লাইনে দাড়িয়ে টিকিট সংগ্রহ করেন।
রেলপথমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন আজ সকাল সাড়ে ১০টার দিকে কমলাপুর স্টেশনে রেলওয়ের অগ্রিম টিকিট বিক্রি কার্যক্রম পরিদর্শন করেছেন।
টিকেট বিক্রির কার্যক্রম পরিদর্শনের পর ই-টিকেটিংয়ের সমস্যার বিষয়ে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন বলেন, সেবাদাতা সংস্থা সিএনএসবিডিকে পাঁচ দিন সময় দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ই-টিকেটিং সেবা ঠিক না হলে অবিক্রিত টিকিটগুলো ২৭ মে কাউন্টারে দেওয়া হবে। সিএনএসবিডি সঠিকভাবে যাত্রী সেবা দিতে ব্যর্থ হলে সেপ্টেম্বরে তাদের সঙ্গে যে চুক্তি হওয়ার কথা তা আর করা হবে না।
এর আগে বেলা ১০টার দিকে কমলাপুর স্টেশনে আসেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) একটি দল। তারা যাত্রীদের কাছ থেকে বিভিন্ন অভিযোগ শুনেন। তারপর তারা রেল স্টেশন ম্যানেজার, রেল ও সিএনএসবিডির কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেন। যাওয়ার আগে দুদকের উপ-সহকারী পরিচালক মনিরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, অনলাইনে টিকেট না পাওয়ার বিষয়ে অভিযোগ পেয়ে আমরা এখানে এসেছি। তবে কাউন্টারে টিকেট বিক্রি নিয়ে তেমন একটা অভিযোগ নেই।
তিনি বলেন, এ ব্যাপারে আমরা সিএনএসবিডির কাছ থেকে জানতে চেয়ে কোনো সদুত্তর পাইনি। দুদকে আমরা অতি দ্রুত প্রতিবেদন জমা দেব।
বিমানবন্দর স্টেশনে সকাল ৯টা থেকে ঈদের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছে। এই স্টেশন থেকে চট্টগ্রাম ও নোয়াখালীগামী সকল আন্ত:নগর ট্রেনের আগাম টিকিট বিক্রি করা হয়। এখানে চারটি কাউন্টারে যাত্রীরা সহজেই টিকিট কিনতে পেরেছেন বলে যাত্রীরা জানিয়েছেন।
একইভাবে ফুলবাড়িয়ায় (পুরাতন রেলভবন) সকাল থেকেই টিকিট বিক্রি শুরু হয়। এখানে সিলেট ও কিশোরগঞ্জগামী সকল আন্ত:নগর ট্রেনের টিকিট বিক্রি করা হচ্ছে।
রেলপথ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, রেলের এই অগ্রিম টিকিট বিক্রি আজ বুধবার (২২ মে) থেকে শুরু হয়েছে এবং এই টিকিট বিক্রির কার্যক্রম আগামী ২৬ মে পর্যন্ত চলবে। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত এই টিকিট বিক্রি করা হবে।
রেলপথ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ঢাকা (কমলাপুর) স্টেশন থেকে সমগ্র পশ্চিমাঞ্চলগামী ট্রেন ভায়া যমুনা সেতুর টিকিট দেওয়া হচ্ছে। আর বিমানবন্দর স্টেশন থেকে চট্টগ্রাম ও নোয়াখালীগামী সকল আন্ত:নগর ট্রেনের টিকিট এবং তেজগাও স্টেশন থেকে ময়মনসিংহ ও জামালপুরগামী সকল আন্ত:নগর ট্রেনের টিকিট পাওয়া যাচ্ছে। অপর দিকে বনানী স্টেশন থেকে নেত্রকোনাগামী মোহনগঞ্জ ও হাওড় এক্সপ্রেস ট্রেন এবং ফুলবাড়িয়া (পুরাতন রেলভবন)-সিলেট ও কিশোরগঞ্জগামী সকল আন্ত:নগর ট্রেনের টিকিট বিক্রি করা হচ্ছে।
রেলপথ মন্ত্রণালয় সূত্র জানান, আজ ২২ মে দেয়া হয়েছে ৩১ মে’র অগ্রিম টিকিট। আর ২৩ মে দেয়া হবে ১ জুনের, ২৪ মে দেয়া হবে ২ জুনের, ২৫ মে দেয়া হবে ৩ জুনের এবং ২৬ মে দেয়া হবে ৪ জুনের টিকিট।
কর্মকর্তারা জানান, রেলের ফিরতি টিকিট বিক্রি আগামী ২৯ মে শুরু হয়ে ২ জুন পর্যন্ত চলবে। ২৯ মে দেওয়া হবে ৭ জুনের, ৩০ মে দেওয়া হবে ৮ জুনের, ৩১ মে দেওয়া হবে ৯ জুনের, ১ জুন দেওয়া হবে ১০ জুনের এবং ২ জুন দেওয়া হবে ১১ জুনের ফিরতি টিকিট।
এছাড়াও অ্যাপসের মাধ্যমে ট্রেনের ৫০ শতাংশ টিকিট বিক্রি করা হবে। তবে স্পেশাল ট্রেনের কোন সীট মোবাইল অ্যাপে পাওয়া যাবে না।
রেলপথমন্ত্রী সাংবাদিকদের জানান, ঈদের পাঁচদিন আগে ৩১ মে থেকে রেলওয়েতে ট্রেনের কোনো ডে-অফ থাকবে না। ফলে ৪৮টি বিশেষ ট্রিপ পরিচালিত হবে। টিকিট কালোবাজারী প্রতিরোধে জেলা প্রশাসকদের সহায়তায় ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করা হবে জানিয়ে রেলপথ মন্ত্রী বলেন, ‘ঢাকা, ঢাকা বিমানবন্দর, জয়দেবপুর, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, সিলেট, রাজশাহী, খূলনাসহ সকল বড় বড় স্টেশনে জিআরপি, আরএনবি, বিজিবি ও স্থানীয় পুলিশ এবং র‌্যাব এর সহযোগিতায় টিকেট কালোবাজারী প্রতিরোধে সার্বক্ষণিক প্রহরার ব্যবস্থা থাকবে।’ তিনি বলেন, টিকিট কালোবাজারি রুখতে ন্যাশনাল আইডি কার্ড দেখিয়ে একজন সর্বোচ্চ চারটি টিকিট কিনতে পারবেন। ঈদের আগে ও পরে মালবাহী ট্রেন বন্ধ থাকবে।