পায়রা বন্দরকে কেন্দ্র করে পাল্টে যাচ্ছে দক্ষিণাঞ্চলের চিত্র

260

বরগুনা, ১৯ মে, ২০১৯ (বাসস) : পায়রা সমুদ্র বন্দরকে কেন্দ্র করে এক সময়ের অবহেলিত দক্ষিনাঞ্চল পরিনত হয়েছে আলোকিত জনপদে। ইতোমধ্যে পায়রা সমুদ্র বন্দর নির্মান কাজকে কেন্দ্র করে পাল্টে যেতে শুরু করেছে পটুয়াখালী, বরগুনাসহ দক্ষিণাঞ্চলের চিত্র।
আগামি জুলাই মাসে পায়রা বন্দরের নিয়মিত রেগুলার অপারেশনাল কার্যক্রম, ২০২৫ সালে পুর্ণাঙ্গ গভীর সমুদ্র বন্দরে উন্নীত হবে
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৩ সালের ১৯ নভেম্বর পায়রা গভীর সমুদ্র বন্দরের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এ প্রকল্পটিকে ফ্যাস্ট ট্রাক প্রকল্পের অন্তর্ভূক্ত করা হয়। সার্বিক উন্নয়ন কার্যক্রমকে ১৯টি কম্পোনেন্টে বিভাজন করা হয়। যেখানে দেশের জি-টু-জি অর্থায়ন এবং সরকারি-বেসরকারি অংশিদারিত্ব পিপিপি ভিত্তিতে এর বাস্তবায়ন চলছে।
২০১৬ সালের ১৩ আগস্ট সীমিত পরিসরে পায়রা বন্দরের নৌপথে বাণিজ্যিক জাহাজ হতে লাইটার জাহাজে পণ্য খালাশের মধ্য দিয়ে অপারেশনাল কার্যক্রম শুরু হয়।
বন্দর সূত্রে জানা গেছে, এ পর্যন্ত বন্দরে ৩২টি পণ্যবাহী জাহাজ পণ্য খালাশের মধ্য দিয়ে সরকারের প্রায় ৪৭ কেটি টাকা রাজস্ব আয় হয়েছে। এছাড়া বন্দর আয় করেছে প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকা। বর্তমানে জমি অধিগ্রহণে ক্ষতিগ্রস্ত সাড়ে চারহাজার পরিবারের পুনর্বাসন ছাড়াও তাদের কর্মদক্ষতার উন্নয়নে প্রশিক্ষণের কাজ চলমান রয়েছে। পায়রা বন্দরের অর্থায়নে উন্নয়ন সংস্থা ডরপ এ প্রশিক্ষণ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে। এ পর্যন্ত ৬৮৬ জনকে সাতটি ট্রেডের প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করেছ।
পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান কমোডর মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আগামী জুলাই মাসে পায়রা তাপ বিদ্যুত কেন্দ্রের (বিসিপিসিএল) নির্মিত টার্মিনাল ব্যবহারের মাধ্যমে পায়রা বন্দরের রেগুলার অপারেশনাল কার্যক্রম শুরু হবে। কয়লাবাহী জাহাজ থেকে কনভে বেল্টের মাধ্যমে কয়লা আনলোড করা হবে। প্রতিদিন একটি লাইটার জাহাজ কয়লা খালাশ কাজ করবে।
তিনি জানান, প্রথম পর্যায়ে পায়রা তাপ বিদ্যুত কেন্দ্র এবং পরবর্তীতে আরপিসিএল বিদ্যুত প্লান্টের কয়লা একই পদ্ধতিতে খালাশ করা হবে। প্রতিদিন একটি করে জাহাজ খালাশের লক্ষ্য নিয়ে পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষ কাজ করে যাচ্ছে।
এজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হচেছ উল্লেখ করে কমোডর মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, অ‘াগামী দুই বছরের মধ্যে ক্যাপিটাল ড্রেজিংএর কাজ করবে। যা ২০২১ সালে শেষ হবে। তখন ১০ থেকে ১১ মিটার নাব্যতার জাহাজ সরাসরি মূল চ্যানেলে পণ্য নিয়ে আসবে। এছাড়া রাবনাবাদ চ্যানেলের চারিপাড়ায় নির্মিতব্য টার্মিনালে ২০২৫ সালের মধ্যে সরাসরি পণ্য খালাশের কাজ শুরু করবে। ইতোমধ্যে তিনটি পরামর্শক কোম্পানি মাস্টার প্লান অনুসারে মূল বন্দরের কাজ শুরু করেছে।’
তিনি জানান, নিশানবাড়িয়ায় একটি কোল টার্মিনালসহ আরও একটি টার্মিনাল নির্মাণ করা হবে। এজন্য ৪৩৮ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। সেপ্টেম্বর নাগাদ কোল টার্মিণালের নির্মাণ কাজ শুরু হচ্ছে। এছাড়াও বহুমুখি কাজে ব্যবহারের জন্য চান্দুপাড়ায় এক দশমিক দুই কি.মি. দীর্ঘ একটি টার্মিনাল নির্মিত হবে।
তিনি বলেন, মধ্যমেয়াদী এসব কর্মকান্ডের সঙ্গে এখন পায়রা বন্দরের কর্মকান্ড এগিয়ে চলছ্।ে বন্দরের লোকবল নিয়োগ কার্যক্রম দ্রুত সম্পন্ন করা হচ্ছে।
বন্দর চেয়ারম্যান আরও বলেন, ‘বর্তমান নাব্যতার চ্যানেলে ২০-২৫ হাজার টন পণ্যবাহী জার্মান শিপিং কোম্পানির জাহাজ পণ্য খালাশের কাজ চালাবে। পরে ক্যাপিট্যাল ড্রেজিংএর পরে ৪০-৫০ হাজার মেট্রিক টন পণ্যবাহী জাহাজ পণ্য খালাশের কাজ শুরু করবে।’
বন্দর এলাকায় সরেজমিন দেখা যায়, পায়রা বন্দরের প্রকল্প এলাকায় নিরাপত্তা ভবন, ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট, ১০০০ কেভিএ ক্ষমতাসম্পন্ন বৈদ্যুতিক সাব স্টেশন, ভিএইচএফ টাওয়ার, প্রশাসনিক ভবন, ওয়ার হাউস, মসজিদ, মাল্টিপারপাস ভবন, স্টাফ ডরমেটারি, সার্ভিস জেটি নির্মাণ ও সংযোগ নদীর ড্রেজিং ও মার্কিং বয়া স্থাপন কাজ সম্পন্ন হয়েছে।
বন্দর পরিচালনায় জলযান পাইলট ভেসেল, হেভি ডিউটি স্পিড বোট, টাগ বোট, বয়া লেইং ভেসেল এবং জরীপ বোট জাহাজ নির্মাণ শেষ পর্যায়ে রয়েছে।
পায়রা সমুদ্র বন্দরকে ঘিরে অর্থনৈতিক অঞ্চল, বিমানবন্দর, ঢাকা থেকে পায়রা পর্যন্ত রেলসংযোগ স্থাপন, ডকইয়ার্ড ও শীপ ইয়ার্ড, ইকোট্যুরিজম, এলএনজি টার্মিনাল, লিক্যুইড বাল্ক টার্মিনাল নির্মাণসহ অন্যান্য সুবিধা ও অবকাঠামো গড়ে ওঠবে।
আর সামগ্রিক উন্নয়নের সুফল পাবেন কলাপাড়া উপজেলার গন্ডি ছাড়িয়ে বরগুনা জেলার জনগন। পদ্মা সেতু হয়ে পায়রা বন্দর পর্যন্ত রেললাইন চালু হলে দ্রুত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়ে দেশের সার্বিক আর্থ-সামাজিক অবস্থার বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটবে।