বাজিস-১ : সুন্দরবনের করমজলে কুমির জুলিয়েট এবার ৩৪টি ডিম দিয়েছে

180

বাজিস-১
বাগেরহাট-সুন্দরবন- কুমির
সুন্দরবনের করমজলে কুমির জুলিয়েট এবার ৩৪টি ডিম দিয়েছে
বাগেরহাট, ১৯ মে ২০১৯ (বাসস): বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জে করমজলে দেশের একমাত্র সরকারী কুমির প্রজনন কেন্দ্রে এবার মা কুমির ‘জুলিয়েট’ ৩৪টি ডিম দিয়েছে।
প্রজনন কেন্দ্রের পুকুর পাড়ে শনিবার সকালে এ ডিম দেয় কুমির জুলিয়েট। এরপর ডিমগুলোর কিছু পুকুর পাড়ে কুমিরের তৈরি বাসায় ও বাকীগুলো সরিয়ে কেন্দ্রের ইনকিউভেটরে রাখা হয়েছে। সব ঠিক থাকলে প্রায় ৯০ দিন পর ডিম থেকে বাচ্চা ফুটে বের হবে বলে জানিয়েছে সুন্দরবর বিভাগ।
করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আজাদ কবির জানান, কুমির লালনপালন কেন্দ্রে লোনা পানি প্রজাতির মা কুমির জুলিয়েট শনিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে পুকুর পাড়ে তৈরিকৃত বাসা ডিম দিতে শুরু করে। ঘন্টাখানেক সময়ের মধ্যে ৩৪টি ডিম দেয় জুলিয়েট।
তিনি জানান, গত দু’বছর জুলিয়েটের ডিম থেকে বাচ্চা না ফুটায় এবার ভিন্নপস্থা অবলম্বন করা হয়েছে। প্রাকৃতিক ভাবেই ডিম থেকে বাচ্চা ফুটানোর জন্য এবার কুমিরের বাসায় ৮টি ডিম রাখা হয়েছে। আর বাকী ২৬টি কৃত্রিম পদ্ধতিতে ফুটানোর জন্য রাখা হয়েছে ইনকিউভেটরে। আজাদ কবির বলেন, আশা করছি এখন থেকে ৯০ দিনের মধ্যে প্রাকৃতিক ও সংরক্ষণকৃত এ ডিম থেকে বাচ্চা ফুটে বের হবে। যেহেতু বিগত দুই বছর জুলিয়েটের ডিম থেকে একটিও বাচ্চা না ফুটায় এবার প্রাকৃতিক ও কৃত্রিম দুই পদ্ধতিই ব্যবহার করা হচ্ছে। এ নিয়ে জুলিয়েট ১৩ বার ডিম দিল করমজল কুমির প্রজনন কেন্দ্রে। তবে মা কুমির জুলিয়েট গতবছর ১৬ মে ৫০টি ও ২০১৭ সালে ৪৩টি ডিম দিলেও একটি ডিম থেকেও কোন বাচ্চা ফুটেনি। সবগুলো ডিম নষ্ট হয়ে যায়।
তবে সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে এবার করমজলের কুমির জুলিয়েট পরিবারে নতুন অতিথি আসবে বলে আশা করেন এই বন কর্মকর্তা।
মো. আজাদ কবির আরো জানান, এক সময় বাংলাদেশে লবণ পানির কুমির, মিঠা পানির কুমির ও ঘড়িয়াল এই তিন প্রজাতির কুমিরের অস্তিত্ব ছিল। এর মধ্যে মিঠা পানির কুমির ও ঘড়িয়াল বিলুপ্ত হয়ে গেছে। শুধু লবণ পানির কুমিরই কোনমতে টিকে আছে। নোনা পানির কুমির সাধারণত ৬০ থেকে ৬৫ বছর পর্যন্ত ডিম দিতে পারে। আর বেঁচে থাকে ৮০ থেকে একশ’ বছর পর্যন্ত। তাই বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির লোনা পানির কুমির রক্ষায় পদক্ষেপ নিয়েছে বন বিভাগ।
তিনি জানান, দেশের বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির নোনা পানির কুমিরের প্রজনন, বৃদ্ধি ও তা সংরক্ষণে জন্য সরকারীভাবে ২০০২ সালে বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের করমজলে বন বিভাগের উদ্যোগে গড়ে তোলা হয় দেশের একমাত্র এই কুমির প্রজননকেন্দ্রটি। বন বিভাগের ‘বায়োডাইভারসিটি কনজারভেশন’ প্রকল্পের আওতায় ৩২ লাখ টাকা ব্যয়ে ৮ একর জমির ওপর গড়ে তোলা হয় কেন্দ্রটি।
তিনি আরও জানান, শুরুতেই জেলেদের জালে ধরা পড়া ছোট-বড় পাঁচটি কুমির দিয়ে কেন্দ্রের কার্যক্রম শুরু হয়। বর্তমানে কেন্দ্রটিতে নোনা পানি প্রজাতির দুটি স্ত্রী কুমির জুলিয়েট, পিলপিল ও একটি পুরুষ কুমির রোমিওসহ বড় ৬টি ও ছোট দুইশ’টি কুমির রয়েছে।
করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রে জন্ম নেয়া কুমিরগুলো ডুলাহাজারা সাফারি পার্ক, বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক, পটুয়াখালী বন বিভাগ ও সুন্দরবনের বিভিন্ন নদী-খালে অবমুক্ত করা হয়।
বাসস/সংবাদদাতা/১৫৩০/এমকে