হিংসা বিদ্বেষ পরিহার করে ধর্মীয় সম্প্রীতির মাধ্যমে বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব : পররাষ্ট্রমন্ত্রী

1518

সিলেট, ১৮ মে, ২০১৯ (বাসস) : পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, হিংসা বিদ্বেষ পরিহার করে মানবতা ও ধর্মীয় সম্প্রীতির মাধ্যমে বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব।
মানবতার একমাত্র ধর্ম শান্তি এ কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এখন বিশ্বের কাছে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত।
মন্ত্রী আজ শনিবার বিকেলে সিলেটে বুদ্ধ পূর্ণিমা-২০১৯ উদযাপন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এ কথা বলেন।
বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব বুদ্ধ পূর্ণিমা উদযাপন উপলক্ষে আজ সিলেট নগরীর আখালিয়ার নয়াবাজারে অবস্থিত ব্রাহ্মশাসন বৌদ্ধ বিহারে বিশ্ব শান্তি কামনায় বিশেষ প্রার্থনা, ভিক্ষু পিন্ডদান, মধ্যাহ্ন ভোজ, আলোচনা সভা ও প্রদীপ প্রজ্জলনের আয়োজন করা হয়।
আলোচনা অনুষ্ঠানে ড. মোমেন বলেন, মায়ানমারে মুসলমানদের ওপর বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মানুষের নির্যাতন খুবই বেদনাদায়ক। এটা প্রমাণ করে, মানুষ ধর্মের শিক্ষা থেকে বিচ্যুত হচ্ছে।
তিনি বলেন, গৌতম বুদ্ধ মানব জাতির অহংকার। তিনি সারাজীবন মানব জাতির কল্যাণে কাজ করেছেন। তিনি অহিংস ধর্মে বিশ্বাসী ছিলেন। তার এই নীতি আমাদের মধ্যে জাগ্রত করতে হবে।
মন্ত্রী বলেন, মানুষে মানুষে হিংস্বা, বিদ্বেষ, সংঘাত পরিহার করতে হবে। সবার উপরে মানুষ সত্য তার উপরে নাই- সেই মানবতার জয়গান নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। হিংসা বিদ্বেষ পরিহার করে মানবতার জয়গান গাইতে হবে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাচ্য ভাষা বিভাগের চেয়ারম্যান ডা. জ্ঞানরত্ন মহাথেরোর সভাপতিত্ব সভায় উদ্বোধনী বক্তব্য রাখেন সিলেট বৌদ্ধ সমিতির সভাপতি অরুন বিকাশ চাকমা। প্রধান আলোচক ছিলেন প্রকৌশলী পুলক কান্তি বড়ুয়া।
সিলেট বৌদ্ধ সমিতির সাধারণ সম্পাদক উৎফল বড়ুয়ার পরিচালনায় বক্তব্য রাখেন বুদ্ধ পূর্ণিমা উদযাপন কমিটির আহবায়ক সাধন কুমার চাকম, চট্টগ্রাম বোধিজ্ঞান ভাবনা কেন্দ্রের লোকপ্রিয় মহাথের, সিলেট বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ সংঘানন্দ থের, চট্টগ্রাম বিশ্বমৈত্রী বৌদ্ধ বিহারের উপাধ্যক্ষ বোধিরত্ন ভিক্ষু, সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক অধ্যক্ষ সুজাত আলী রফিক, সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক জগদীশ চন্দ্র দাস, ৮ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. ইলিয়াছুর রহমার ইলিয়াছ, ৭, ৮, ৯ নং ওয়ার্ড মহিলা কাউন্সিলর রেবেকা বেগম রেনু প্রমুখ।
এর আগে মন্ত্রী সিলেটে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আগমনের শতবর্ষ উদযাপন কমিটির প্রস্তুতি সভায় যোগ দেন।
শনিবার সকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল হাসপাতালের নতুন এমআরআই ও সিটি স্ক্যান মেশিন উদ্বোধন করেন। এ সময় হাসপাতালের আনসার ক্যাম্পেরও উদ্বোধন করেন তিনি।
ওসমানী হাসপাতালের রেডিওলজি ও ইমেজিং বিভাগে রোগ নির্ণয়ের এমআরআই (ম্যাগনেটিক রিসোন্যান্স ইমেজিং) ও সিটিস্ক্যান মেশিন প্রায় তিন বছর ধরে বিকল অবস্থায় ছিলো। ২০১৬ সালের জুনের দিকে নষ্ট হয়ে পড়ে মেশিন দু’টি। নতুন এমআরআই ও সিটিস্ট্যান মেশিন চালু করার রোগীদের এই দুর্ভোগ দূর হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিস্টরা।
শনিবার মেশিন দুটির উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রোগীদের চাপ কমাতে সিলেটে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট আরো একটি হাসপাতাল নির্মানের কাজ শুরু হয়েছে।
দেশে মানসম্পন্ন ডাক্তার ও নার্সের অভাব রয়েছে এ মন্তব্য করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে মোমেন বলেন, দেশে দক্ষ মেডিকেল টেকনোলজিস্টেরও অভাব রয়েছে। এদেশে টেকনিক্যাল কাজের জন্য লোক পাওয়া যায় না। তাই সরকার কারিগরি শিক্ষায় গুরুত্ব দিচ্ছে।
মোমেন বলেন, ওসমানী হাসপাতাল ৯০০ শয্যার, কিন্তু এ হাসপাতালে সবসময় রোগী ভর্তি থাকেন ২ হাজার ৪০০ জন। এছাড়া রয়েছে ডাক্তার ও নার্স সংকট। ফলে অনেকসময় কাঙ্খিত সেবা পাওয়া যায় না।
তিনি বলেন, সিলেট নগরীর চৌহাট্টা এলাকায় প্রাচীন ভবন আবু সিনা ছাত্রাবাসের জায়গায় নির্মানাধীন সিলেট জেলা হাসপাতালের নির্মাণ কাজ শেষে হলে ওসমানীতে রোগীর চাপ কিছুটা কমবে। একটি মহল এ হাসপাতাল নির্মাণের কাজ দীর্ঘায়িত করার চেষ্টা করছে বলেও মন্তব্য করেন মন্ত্রী।
এসময় সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী, ওসমানী হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইউনুছ রহমানসহ প্রশাসন ও হাসপাতালের উর্ধতন কর্মকর্তা ও চিকিৎসক নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
পরে মন্ত্রী হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির ৫ম সভায় যোগ দেন। দুপুরে তিনি নগরীর রায়নগরস্থ সরকারি শিশু নিবাসে ঈদ বস্ত্র বিতরণ করেন।