বাসস রাষ্ট্রপতি-৩ : শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন গণতন্ত্রের ইতিহাসে একটি মাইলফলক : রাষ্ট্রপতি

170

বাসস রাষ্ট্রপতি-৩
স্বদেশ-প্রত্যাবর্তন-বাণী
শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন গণতন্ত্রের ইতিহাসে একটি মাইলফলক : রাষ্ট্রপতি
ঢাকা, ১৬ মে, ২০১৯ (বাসস) : রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ বলেছেন, শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন বাংলাদেশের গণতন্ত্রের ইতিহাসে একটি মাইলফলক।
আগামীকাল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে আজ দেয়া এক বাণীতে তিনি বলেন, শেখ হাসিনার ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, স্বাধীনতার মূল্যবোধ ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পথসুগম হয় ।’
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সভাপতি ও গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৩৯তম স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি তাঁকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান।
রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘শেখ হাসিনা দেশে ফিরে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলন শুরু করেন। এরই ধারাবাহিকতায় ৯০’এর গণআন্দোলনের মাধ্যমে স্বৈরাচারের পতন হয়, বিজয় হয় গণতন্ত্রের। ১৯৯৬ সালের ১২ জুন সাধারণ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ বিপুল ভোটে জয়লাভ করে এবং শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার গঠন করে। এ সময় পাহাড়ি-বাঙালি দীর্ঘমেয়াদী রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ বন্ধে পার্বত্য শান্তিচুক্তি এবং প্রতিবেশী ভারতের সাথে গঙ্গার পানিবণ্টন চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।’
তিনি বলেন, ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর সাধারণ নির্বাচনে তাঁর নেতৃত্বে ১৪ দলীয় জোট সরকার ক্ষমতায় আসে এবং জনগণের কল্যাণে নানামুখী কর্মসূচি গ্রহণ করে। বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের রায় কার্যকর করা হয়। গণতন্ত্র, মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, নারীর ক্ষমতায়ন, বিদ্যুৎ, তথ্যপ্রযুক্তি, গ্রামীণ অবকাঠামো, বৈদেশিক কর্মসংস্থানসহ নানা কর্মসূচি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বলতর করে।
আবদুল হামিদ বলেন, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি সাধারণ নির্বাচনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জোট সরকার পুনরায় ক্ষমতায় এসে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কার্যক্রম শুরু ও রায়ের বাস্তবায়নসহ সমুদ্রে বাংলাদেশের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠা, ভারতের সাথে দীর্ঘদিনের অমিমাংসিত স্থল সীমানা নির্ধারণ তথা ছিটমহল বিনিময় চুক্তি সম্পাদনের মাধ্যমে সরকার গণমানুষের কল্যাণে নিরলস প্রয়াস চালান। ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর সাধারণ নির্বাচনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জোট সরকার টানা তিনবার ক্ষমতায় এসে ইতিহাস সৃষ্টি করেছে এবং সাফল্যের সাথে সরকার পরিচালনা করছে।
রাষ্ট্রপতি বলেন, নানা প্রতিকূলতা সত্ত্বেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদৃষ্টি, বলিষ্ঠ নেতৃত্ব এবং জনকল্যাণমুখী কার্যক্রমে দেশ আজ এগিয়ে যাচ্ছে। ক্রমাগত প্রবৃদ্ধ্বি অর্জনসহ মাথাপিছু আয় বাড়ছে, কমছে দারিদ্র্যের হার। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতুর মতো বৃহৎ প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কাজ এগিয়ে চলেছে। মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণ একটি যুগান্তকারী ঘটনা।
তিনি বলেন, দেশকে একটি সুখী-সমৃদ্ধ সোনার বাংলায় পরিণত করতে তিনি ‘ভিশন ২০২১’ ও ‘ভিশন ২০৪২’ কর্মসূচি গ্রহণ করেছেন। গণতন্ত্র, উন্নয়ন ও জনগণের কল্যাণে শেখ হাসিনার এসব যুগান্তকারী কর্মসূচি বিশ্বে আজ রোল মডেল হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
আগামী ২০২০ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও ২০২১ সালে আমাদের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপিত হবে। জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ এ দুটি অনুষ্ঠানমালা সাড়ম্বরে উদযাপনের জন্য গোটা দেশ অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। উল্লেখ করে তিনি অনুষ্ঠানমালার সাফল্য কামনা করেন।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কালোরাতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতাবিরোধী ঘাতকচক্রের হাতে সপরিবারে নির্মমভাবে নিহত ঘটনা স্মরণ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘ওই সময় বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা তৎকালীন পশ্চিম জার্মানিতে অবস্থান করায় তাঁরা প্রাণে বেঁচে যান। কিন্তু তাঁরা দেশে ফিরতে পারেননি। বাবা, মা, ভাইসহ আপনজনদের হারানো বেদনাকে বুকে ধারণ করে পরবর্তীতে ৬ বছর লন্ডন ও দিল্লীতে চরম প্রতিকূল পরিবেশে তাঁদের নির্বাসিত জীবন কাটাতে হয়।’
তিনি বলেন, ১৯৮১ সালে ১৪ থেকে ১৬ ফেব্রুয়ারি ইডেন হোটেলে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ত্রয়োদশ জাতীয় কাউন্সিল অধিবেশনে শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতে সর্বসম্মতিক্রমে তাঁকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। এ ছিল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের তৎকালীন নেতৃবৃন্দের এক দূরদর্শী সিদ্ধান্ত।
শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের দিনটির কথা স্মরণ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘নানা উৎকণ্ঠা ও অনিশ্চয়তার মধ্যে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তিনি স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের সিদ্ধান্ত নেন। বৈরি আবহাওয়া সত্ত্বেও ১৯৮১ সালের ১৭ মে ঢাকা কুর্মিটোলা বিমান বন্দরে তাঁকে স্বাগত জানাতে লাখো মানুষের ঢল নামে। সেদিন তাঁদের অকৃত্রিম ভালোবাসায় তিনি সিক্ত হন। আবেগ আপ্লুত কণ্ঠে সেদিন তিনি বলেন, ‘সব হারিয়ে আজ আপনারাই আমার আপনজন। বাংলার মানুষের পাশে থেকে মুক্তির সংগ্রামে অংশ নেয়ার জন্য আমি এসেছি। আওয়ামী লীগের নেতা হওয়ার জন্য আসিনি। আপনাদের বোন হিসেবে, মেয়ে হিসেবে বঙ্গবন্ধুর আদর্শে আওয়ামী লীগের একজন কর্মী হিসেবে আমি আপনাদের পাশে থাকতে চাই।’
তিনি বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে সরকারের অব্যাহত সাফল্যসহ তাঁর নিজের ও পরিবারের সকল সদস্যের সুস্বাস্থ্য, দীর্ঘায়ু, সুখ-সমৃদ্ধি ও কল্যাণ কামনা করেন।
বাসস/তবি/এমএসএইচ/১৭৩০/কেএমকে