জায়েদের ৫ উইকেট ও ব্যাটসম্যানদের দৃঢ়তায় আয়ারল্যান্ডকে সহজেই হারালো বাংলাদেশ

755

ডাবলিন, ১৫ মে, ২০১৯ (বাসস) : ওয়ানডেতে নিজের দ্বিতীয় ম্যাচেই ৫ উইকেট শিকারের কীর্তি গড়লেন বাংলাদেশের ডান-হাতি পেসার আবু জায়েদ। তার দুর্দান্ত বোলিংয়ের পরও ত্রিদেশীয় সিরিজে লিগ পর্বে ষষ্ঠ ও শেষ ম্যাচে স্বাগতিক আয়ারল্যান্ড ৫০ ওভারে ৮ উইকেটে ২৯২ রান করেছে। কারণ আইরিশদের বড় সংগ্রহ এনে দিয়েছেন ওপেনার পল স্ট্রার্লিং। ১৪১ বলে ১৩০ রানের দর্শনীয় ইনিংস খেলেন তিনি। এরপর জয়ের জন্য ২৯৩ রানের টার্গেট ব্যাটসম্যানদের দৃঢ়তায় স্পর্শ করে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ৬ উইকেটে জয় তুলে নেয় বাংলাদেশ। তাই জয় দিয়ে লিগ পর্ব শেষ করলো বাংলাদেশ। আগামী ১৭ মে টুর্নামেন্টের ফাইনালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মুখোমুখি হবে মাশরাফির দল।
ডাবলিনের ক্যাসেল এভিনিউতে টস জিতে প্রথমে ব্যাট হাতে নেমে শুরু ভালো করতে পারেনি আয়ারল্যান্ড। দলীয় ২৩ রানে ওপেনার জেমস ম্যাককোলামকে হারায় আইরিশরা। ৫ রানে ম্যাককোলামকে বিদায় দেন বাংলাদেশের পেসার রুবেল হোসেন। শুরুর ধাক্কা সামাল দেয়ার চেষ্টা করে বেশি দূর যেতে পারেননি আরেক ওপেনার পল স্ট্রার্লিং ও তিন নম্বরে নামা এন্ডি ব্যালবির্নি। ৩৬ রানের জুটি গড়েন তারা। ২০ বলে ২০ রান করা ব্যালবির্নিকে নিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে প্রথম শিকারে পরিণত করেন বাংলাদেশের পেসার আবু জায়েদ।
৫৯ রানেই ২ উইকেট হারিয়ে কিছুটা চাপে পড়ে যায় আয়ারল্যান্ড। তৃতীয় উইকেটে বড় জুটির লক্ষ্যে বাংলাদেশ বোলারদের দেখে-শুনে খেলতে থাকেন স্ট্রার্লিং ও অধিনায়ক উইলিয়াম পোর্টারফিল্ড। তাতে আয়ারল্যান্ডের স্কোরবোর্ড শক্তপোক্ত হতে থাকে। শক্ত জুটিতে দলের স্কোর শতরান, দু’শও পার করিয়ে ফেলেন তারা। এরমধ্যে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের অষ্টম ও বাংলাদেশের বিপক্ষে প্রথম সেঞ্চুরি তুলে নেন স্ট্রার্লিং। ২০১৮ সালের মার্চের পর সেঞ্চুরির দেখা পান স্ট্রার্লিং।
সেঞ্চুরির পথে হাটতে থাকেন পোর্টারফিল্ড। কিন্তু পোর্টারফিল্ডকে ৯৪ রানে থামিয়ে দেন জায়েদ। ৭টি চার ও ২টি ছক্কায় ১০৬ বলে নিজের ইনিংসটি সাজান পোর্টারফিল্ড।
১২৭ বলে সেঞ্চুরির স্বাদ নেয়া স্ট্রার্লিংকে থামিয়ে দেন জায়েদ। ৮টি চার ও ৪টি ছক্কায় ১৪১ বলে ১৩০ রান করেন ১০৯টি ওয়ানডে খেলা স্ট্রার্লিং।
ব্যালবির্নি-স্ট্রার্লিং-পোর্টারফিল্ডকে শিকারের পর পরবর্তীতে আয়ারল্যান্ডের আরও দু’ব্যাটসম্যানকে আউট করেন জায়েদ। ফলে ওয়ানডেতে নিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতেই পাঁচ উইকেট শিকার করেন জায়েদ। তার দুর্দান্ত বোলিং নৈপুণ্যে তিনশর সম্ভাবনা জাগিয়েও ৮ উইকেটে ২৯২ রানের বেশি করতে পারেনি আয়ারল্যান্ড। ৯ ওভারে ৫৮ রানে ৫ উইকেট নেন জায়েদ। এছাড়া মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন ২টি ও রুবেল ১টি উইকেট নেন।
জয়ের জন্য ২৯৩ রানের লক্ষ্যে লিটন দাসকে নিয়ে ইনিংস শুরু করেন তামিম ইকবাল। ফাইনাল নিশ্চিত হওয়ায় সৌম্য সরকারসহ এ ম্যাচে চার জনকে বিশ্রাম দেয় বাংলাদেশ। তাই সৌম্যর পরিবর্তে এই টুর্নামেন্টে প্রথমবারের মত খেলতে নেমেই নিজের যোগ্যতার প্রমান দেন লিটন। তামিমের সাথে শতরানের জুটি গড়ে তুলেন তিনি। দু’জনের মারমুখী ব্যাটিং-এ ১৫তম ওভারেই তিন অংকে পৌঁছায় বাংলাদেশের সংগ্রহ। তবে দলীয় ১১৭ রানে বিচ্ছিন্ন হন তামিম-লিটন। ৫৩ বলে ৯ বাউন্ডারিতে ৫৭ রান করে আউট হন তামিম।
এরপরও নিজের ইনিংসটা বড় করছিলেন লিটন। মাত্র ৬৭ বল মোকাবেলায় ৯টি চার ও ১টি ছক্কায় ৭৬ রান তুলে ম্যাককার্থির শিকার হন লিটন।
দলীয় ১৬০ রানে লিটনের বিদায়ের পর জুটি বাঁধেন সাকিব আল-হাসান ও মুশফিকুর রহিম। ব্যাট হাতে আয়ারল্যান্ডের বোলারদের উপর আধিপত্য বিস্তার করে ৬৪ রানের জুটি গড়েন তারা। তবে ব্যক্তিগত ৩৩ বলে ৫টি বাউন্ডারিতে ৩৫ রান করা মুশফিক দ্বিতীয় শিকার হন বয়েড র‌্যানকিনের।
এরপর ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ৪২তম হাফ-সেঞ্চুরি তুলে নেন সাকিব। কিন্তু হাফ-সেঞ্চুরিতে পা দিয়েই প্যাভিলিয়নে ফিরে যান তিনি। নামের পাশে ৫০ রান রেখে আহত অবসর নেন সাকিব। তার ইনিংসে ৪টি চার ছিলো।
দলীয় ২৪৭ রানে সাকিব আহত অবসর নেয়ার সময় জয়ের জন্য বাংলাদেশের দরকার হয় ৮৪ বলে ৪৬ রান। বাকি কাজটুকু সাড়ার দায়িত্ব পান মাহমুদুল্লাহ রিয়দ ও মোসাদ্দেক হোসেন। কিন্তু ১৭ বলে ১৪ রান করে আউট হয়ে যান মোসাদ্দেক। এতে কোন সমস্যায় পড়তে হয়নি বাংলাদেশকে। কারন মাহমুদুল্লাহ-সাব্বির মিলে ৭ ওভার বাকী রেখেই দলের জয় নিশ্চিত করেছেন। মাহমুদুল্লাহ ২৯ বলে ৩৫ ও সাব্বির ৭ রানে অপরাজিত ছিলেন।
ম্যাচ সেরা টাইগার দলের আবু জায়েদ।