বাসস দেশ-৯ : মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলে গড়ে উঠছে ৬১৮ শিল্প প্লট

153

বাসস দেশ-৯
মিরসরাই-বেপজা
মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলে গড়ে উঠছে ৬১৮ শিল্প প্লট
চট্টগ্রাম, ১৩ মে, ২০১৯ (বাসস) : বঙ্গোপসাগর তীরবর্তী চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে বেপজা ইকোনমিক জোনে ৪শ ৫ কোটি মার্কিন ডলার বিনিয়োগে ৬১৮টি শিল্প প্লট তৈরী হচ্ছে। বেপজা ইকোনমিক জোনে প্রায় ৩৫০টি শিল্প প্রতিষ্টান স্থাপিত হবে। যেখানে প্রায় ৫ লাখ বাংলাদেশি শ্রমিকের কর্মসংস্থান হবে।
বাংলাদেশ রপ্তানী প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষ (বেপজা)-এর মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) নাজমা বিন্তে আলমগীর বাসস’কে জানান, চট্টগ্রাম জেলার মিরসরাইয়ে ১১৫০ একর জমির উপর স্থাপিত হচ্ছে বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চল। বঙ্গবন্ধু শিল্পাঞ্চলে বেপজা জোনের উন্নয়ন কর্মকা- দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে। প্রথম পর্যায়ের কাজের অংশ হিসেবে প্রকল্পের চার পাশে বাঁধ নির্মাণের কাজ প্রায় শেষ হয়েছে। প্রকল্পের প্রস্তাবিত দু’টি সংযোগ সড়কের মধ্যে একটির কাজ চলছে।
এছাড়া প্রকল্পের ভূমি উন্নয়নের কাজ ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে। এখানে বিনিয়োগকারীদের জন্য মোট ৬১৮টি শিল্প প্লট তৈরি করা হবে। যেখানে প্রায় ৩০০-৩৫০টি শিল্প প্রতিষ্টান স্থাপন সম্ভব হবে। বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চলে প্রায় ৪শ’ ৫০ কোটি মার্কিন ডলার বিনিয়োগ আকৃষ্ট করা যাবে যেখানে প্রায় পাঁচ লাখ মানুষের র্কমসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।
ধাপে ধাপে বাস্তবায়নাধীন বেপজা’র বৃহত্তর প্রকল্পটির প্রথম পর্যায়ে ২০২১ সালের জুনের মধ্যে ২শ’৫০টি শিল্প প্লট তৈরী করা হবে। সেখানে দেড় লাখ বাংলাদেশি শ্রমিকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে বলে আশা করছেন বেপজা।
এই প্রতিবেদক সম্প্রতি বেপজা অর্থনৈতিক জোনের নির্মাণ কাজ পরিদর্শনে গেলে বেপজা’র মূখপাত্র জানান, ইতোমধ্যে প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ের কাজ শুরু করা হয়েছে। এ পর্যায়ে আমরা অবকাঠামোগত বিভিন্ন সুবিধাদিসহ বিনিয়োগ উপযোগী ২৫০টি শিল্প প্লট তৈরি করব। প্রথম পর্যায়ে ১.২৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগে ১.৫ লাখ মানুষের কাজের সুযোগ তৈরি হবে।’ ২০২১ সালের ৩০ জুনের মধ্যে প্রথম পর্যায়ের কাজ শেষ হবে জানিয়ে তিনি বলেন, বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চল হবে একটি সবুজ শিল্পাঞ্চল।
ইপিজেড পরিচালনায় প্রায় ৩৫ বছরের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন বেপজার অধীন আটটি ইপিজেডে ৩৮টি দেশের বিনিয়োগকারীরা এপর্যন্ত ৪ দশমিক ১১ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে।
ইপিজেডগুলোয় প্রতিষ্ঠিত ৫৮৮টি কারখানার মধ্যে এরই মধ্যে ৪৬২টি চালু আছে। বাকিগুলো আগামী কয়েক বছরের মধ্যে উৎপাদনে আসবে। এই কারখানাগুলোয় কর্মরত আছে প্রায় চার লাখ ৬০ হাজার বাংলাদেশি শ্রমিক। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে চাহিদা থাকা সত্ত্বেও ঢাকা ও চট্টগ্রাম অঞ্চলের ইপিজেডগুলোয় প্লট স্বল্পতার কারণে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বিগত কয়েক বছর জমি বরাদ্দ দেওয়া সম্ভব হচ্ছিল না। স্যামসাং-সনির মতো বিশ্বখ্যাত বহুজাতিক কম্পানিকেও জমির অভাবে ফিরিয়ে দিতে হয়েছে।
এ অবস্থায় বেপজার চাহিদার বিপরীতে চট্টগ্রামের নিকটবর্তী মিরসরাইয়ে বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চলের সাধুর চর ও পীরের চর মৌজায় এক হাজার ১৫০ একর জমি বরাদ্দ দিয়েছে বেজা (বাংলাদেশ অর্থনৈতিক এলাকা কর্তৃপক্ষ)। যা বেপজার আট ইপিজেডের মোট আয়তনের (২৩০৮ দশমিক ৯৩ একর) প্রায় অর্ধেক। বেপজার অতীত সাফল্যের কারণে এরই মধ্যে বেপজা ইকোনমিক জোন নিয়ে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে বলে জানান বেপজার মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) নাজমা বিনতে আলমগীর।
তিনি বলেন, ‘ইপিজেড স্থাপনে বেপজার বিশেষ দক্ষতা, পরিচালন অভিজ্ঞতা এবং পেশাগত জ্ঞান বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চল উন্নয়নের কাজকে ত্বরান্বিত করবে। ইকোনমিক জোনটি চালু হলে বেপজায় আগত বিনিয়োগকারীদের চাহিদা অনুযায়ী প্লট দেওয়া সম্ভব হবে বলে তিনি জানান।’
প্রথম পর্যায়ের কাজের অংশ হিসেবে বেপজা ইকোনোমিক জোন প্রকল্পের চারপাশে ডাইক (বাঁধ) নির্মাণের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। ফলে অল্প দিনের মধ্যে পুরোপুরি বিনিয়োগ উপযোগী হয়ে উঠবে বলে আশা করছে বেপজা কর্তৃপক্ষ। পুরো অর্থনৈতিক অঞ্চল রক্ষার জন্য (সুপার ডাইক) বাঁধের কাজও দ্রুতগতিতে চলছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধানে চায়না হারবার ইঞ্জিনিয়ারিং এই বাঁধের কাজ করছে।
বেপজা’র ব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) এএসএম আনোয়ার পারভেজ জানান, বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চলের প্রথম পর্যায়ের কাজের অংশ হিসেবে ভূমি উন্নয়ন, রাস্তা, ড্রেন, সীমানা দেয়াল নির্মাণ, বিদ্যুৎ লাইন, সাব-স্টেশন ও পানির লাইন স্থাপন, স্যানিটারি ও তরল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ, জলাধারসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় সুবিধাদি সৃষ্টি করা হবে।
বেপজা’র প্রকল্প পরিচালক আব্দুল আলীম এই প্রতিবেদককে জানান, ‘আমরা ইতোমধ্যে প্রকল্পের চারপাশে ডাইক (বাঁধ) নির্মাণের কাজ ৯০ ভাগ শেষ করেছি। প্রকল্পের ৩০০ ফুট চওড়া দুইটি সংযোগ সড়কের একটির কাজ অনেকদূর এগিয়েছে। ২০২০ সালের জানুয়ারি মাসের মধ্যেই ভূমি উন্নয়নের কাজ সম্পন্ন হবে বলে তিনি জানান।
বেপজা সুত্র জানায়, অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের লক্ষ্যে বেপজা ২০১৭ সালের ১৮ মে বেজার সাথে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৮ সালের ২৪ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বেপজা ইন্টারন্যাশনাল ইনভেস্টরস্ সামিট ২০১৮-এ ভিডিও কনফারেন্সে ভিত্তি প্রস্তর স্থাপনের মাধ্যমে ‘বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চল’ এর আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয়। পরবর্তীতে ২০১৮ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)-এ মিরসরাই বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চলের প্রথম পর্যায়ের কাজের জন্য ৭৫০ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) অনুমোদিত হয়।
উল্লেখ্য, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীন একটি সংস্থা হিসেবে বেপজা বিনিয়োগ আনয়ন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, রপ্তানী বৃদ্ধি প্রভৃতি উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ৮টি ইপিজেড স্থাপন এবং সেগুলো সফলতার সাথে পরিচালনা করে আসছে। ইপিজেড গুলোতে ৪৬৯টি চালু এবং ১০৬টি বাস্তবায়নাধীন শিল্প প্রতিষ্ঠানে মোট বিনিয়োগ এসেছে ৪.৯২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ইপিজেডসমূহ থেকে রপ্তানী হয়েছে প্রায় ৭৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সমমূল্যের পণ্য সামগ্রী। বর্তমানে বেপজা’র ইপিজেড গুলোতে ৫ লাখ ২০ হাজার মানুষ কর্মরত রয়েছে ।
বেপজা ইকোনমিক জোনে বিনিয়োগ চাহিদার কথা বলতে গিয়ে ইপিজেডে বাংলাদেশি মালিকানাধীন বৃহত্তম এবং দেশি-বিদেশি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দ্বিতীয় বৃহত্তম প্রতিষ্ঠান প্যাসিফিক জিন্স গ্রুপের পরিচালক সৈয়দ মোহাম্মদ তানভীর বলেন, ‘যেহেতু মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলে আলাদা বন্দর হবে, তাই বিনিয়োগের জন্য এই জায়গার চাহিদা হবে প্রচুর। ঝামেলা এড়াতে এখন কেউ আর জোনের বাইরে বিনিয়োগ করতে চায় না। তা ছাড়া বেপজার গত তিন দশকের বেশি সময়ের অভিজ্ঞতার কারণে বেপজা ইকোনমিক জোনের চাহিদা একটু বেশিই থাকবে। কারণ তারা জানে কিভাবে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের দেখভাল করতে হয়।’
বাসস/জিই/এসকেবি/১৫৩৫/-আসচৌ