শিরোপা ধরে রাখলো ম্যানচেস্টার সিটি, জয়ের পরও লিভারপুলের হতাশা

206

লন্ডন, ১৩ মে ২০১৯ (বাসস) : পিছিয়ে পড়েও ব্রাইটনের বিপক্ষে শেষ পর্যন্ত দাপুটে জয় তুলে নিয়ে প্রিমিয়ার ফুটবল লিগের শিরোপা ধরে রাখলো ম্যানচেস্টার সিটি। আর এই জয়ে সিটির সাথে শিরোপা লড়াইয়ে কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা লিভারপুলকে রানার্স-আপ শিরোপা নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হলো।
পেপ গার্দিওলার দল মৌসুমের শেষ ম্যাচে ব্রাইটনকে ৪-১ গোলে উড়িয়ে দিয়ে ৯৮ পয়েন্ট নিয়ে লিগ শিরোপা নিশ্চিত করেছে। প্রিমিয়ার লিগের ইতিহাসে এটা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পয়েন্ট। এদিকে এ্যানফিল্ডের ঘরের মাঠে উল্ফসকে ২-০ গোলে পরাজিত করে এক পয়েন্ট পিছিয়ে টেবিলের দ্বিতীয় স্থানে থেকে মৌসুম শেষ করলো অল রেডসরা।
মৌসুমের শেষে ১৪টি লিগ ম্যাচে জয়ই সিটিকে শিরোপা ধরে রাখতে সহায়তা করেছে। ২০০৯ সালে নগর প্রতিদ্বন্দ্বী ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের পর প্রথম দল হিসেবে প্রিমিয়ার লিগের শিরোপা ধরে রাখার কৃতিত্ব দেখালো সিটি। ইংলিশ ফুটবল ইতিহাসে প্রথমবারের মত ঘরোয়া ট্রেবল জয়ের পথে সিটিজেনরা ভালভাবেই এগিয়ে রয়েছে। গত আট মৌসুমে এটা তাদের চতুর্থ ইংলিশ শিরোপা ও ক্লাবের ইতিহাসে ষষ্ঠ।
গতকালই ছিল এবারের ইংলিশ লিগ আসরের শেষ ম্যাচ। অন্যান্য শীর্ষ লিগগুলোতে যেখানে লিগ শেষ হবার বেশ কিছুদিন আগেই শিরোপা নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল সেখানে ইংল্যান্ডে শিরোপা নির্ধারণের জন্য শেষ দিনটি পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছে। আর এতেই বোঝা যায় ইংলিশ ফুটবলের সাম্প্রতীক সময়টা বেশ প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হয়ে উঠেছে। যার প্রমাণ চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ও ইউরোপা লিগের অল ইংলিশ ফাইনাল।
১৯৯০ সালের পর ইংল্যান্ডের শীর্ষ লিগে শিরোপা নির্ধারনের স্বপ্নে বিভোর ছিল লিভারপুল। এ্যানফিল্ডে ১৭ মিনিটে সাদিও মানের গোলে এগিয়ে যাওয়া লিভারপুলের সামনে সেই স্বপ্ন আরো উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। অন্যদিকে ব্রাইটনের মাঠে গ্লেন মারির হাত ধরে ২৭ মিনিটে সিটিজেনরা যখন পিছিয়ে যায় তখন তো এ্যানফিল্ড যেন উচ্ছাসে ফেটে পড়ে। কিন্তু সেই উচ্ছ্বাস বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। মাত্র ৮৩ সেকেন্ডের মধ্যে ডেভিড সিলভার অসাধারণ একটি পাস থেকে সার্জিও আগুয়েরো গার্দিওলার দলকে সমতায় ফেরান। ১০ মিনিট পর রিয়াদ মাহরেজের কর্ণার থেকে অনেকটা ফাঁকায় দাঁড়ানো অমারিক লাপোর্তে হেডের সাহায্যে সিটিকে এগিয়ে দেন। আর দ্বিতীয়ার্ধে মাহরেজ ও ইকে গুনডোগানের গোলে সিটির শিরোপা নিশ্চিত হয়।
ম্যাচ শেষে বার্সেলোনা ও বায়ার্ন মিউনিখের সাবেক বস গার্দিওলা স্কাই স্পোর্টসকে বলেছেন, ‘আমরা লিভারপুলকে অভিনন্দন ও ধন্যবাদ জানাতে চাই। তাদের কারনেই আমরা নিজেদের মান বাড়াতে বাধ্য হয়েছি। পরপর দুই মৌসুমে শিরোপা লাভ করাটা সত্যিই বিশেষ কিছু। তার উপর ৯৮ পয়েন্ট। গতবারের তুলনায় এবার আমরা নিজেদের মান আরো উঁচুতে নিয়ে গেছি, আর এতে লিভারপুল আমাদের সহযোগিতা করেছে। এই শিরোপা জিততে আমাদের টানা ১৪টি ম্যাচ জিততে হয়েছে। একটি পয়েন্টও আমরা হারাইনি। আমার ক্যারিয়ারে এ পর্যন্ত পাওয়া শিরোপাগুলোর মধ্যে এটাই সবচেয়ে কঠিন ছিল।’
ম্যাচ শেষ করেই সিটি তাদের ঘরের মাঠ ইতিহাদ স্টেডিয়ামে ফিরে গেছে। সেখানে গভীর রাতে প্রায় দশ হাজার সমর্থক উপস্থিত হয়ে নাচে-গানে তাদের প্রিয় দলকে স্বাগত জানিয়েছে। খেলোয়াড়রা প্রিমিয়ার লিগের শিরোপা উঠিয়ে উল্লাস করেছে। ক্লাব অধিনায়ক ভিনসেন্ট কোম্পানী ও কোচ গার্দিওলার জন্য এটাই সিটির হয়ে একসাথে শেষ মৌসুম।
কোম্পানী বলেন, ‘আমি দারুণ গর্বিত। এই দলটি অসাধারণ। শিরোপা জন্য সবাইকে অনেক ধন্যবাদ।’
গত মৌসুমে সিটি ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের থেকে ১৯ পয়েন্ট এগিয়ে থেকে শিরোপা নিশ্চিত করেছিল। কিন্তু এবারের আসরটা ছিল একেবারেই ভিন্ন। লিভারপুলের কঠিন চ্যালেঞ্জে শিরোপা প্রায় হাতছাড়াই হয়ে গিয়েছিল। রেডসরা এবারের মৌসুমে মাত্র একটি ম্যাচে পরাজিত হয়ে শিরোপা লড়াইটা কঠিন করে তুলেছিল।
লিভারপুল বস জার্গেন ক্লপ শিরোপা জয়ে সিটির প্রশংসা করে বলেছেন তার দল ঠিকই ফিরে আসবে। ক্লপ বলেন, দুই মৌসুমে সিটিজেনরা ১৯৮ পয়েন্ট সংগ্রহ করেছে যা সত্যিই অসাধারণ। তবে আমরাও অনেকদূর এগিয়ে গিয়েছি। এটা আমাদের এগিয়ে যাবার প্রথম ধাপ। প্রতি বছর একটি ভাল মৌসুম কাটানোর পরপরই আমরা গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়দের হারাই। কিন্তু এবার আর সেটা হচ্ছে না।
লিভারপুলের ফরোয়ার্ড মোহাম্মদ সালাহ তার সতীর্থ মানে ও আর্সেনালের পিয়েরে-এমেরিক অবামেয়াংয়ের সাথে সর্বোচ্চ ২২ গোল করে প্রিমিয়ার লিগের গোল্ডেন বুট এ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন।
ক্লপের দল জানুয়ারিতে ১০ পয়েন্ট এগিয়ে লিগ টেবিলের শীর্ষে থেকে ইতিহাদ স্টেডিয়াম সফরে গিয়েছিল। ম্যাচটিতে সিটি ২-১ গোলে জয়ী হয়ে পয়েন্টের ব্যবধান কমাতে সক্ষম হয়েছিল। ঐ ম্যাচটিকেই সিটির শিরোপা জয়ের টার্নিং পয়েন্ট হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
শেষ দিনে প্রিমিয়ার লিগের অন্যান্য ম্যাচে এভারটনের সাথে ২-২ গোলে ড্র করে চতুর্থ স্থানে থেকে মৌসুম শেষ করেছে টটেনহ্যাম। চেলসি লিস্টার সিটির সাথে গোলশুন্য ড্র করেও তৃতীয় স্থানেই থাকলো। ইউরোপা লিগের ফাইনালে চেলসির প্রতিপক্ষ আর্সেনাল শেষ ম্যাচে বার্নালিকে ৩-১ গোলে পরাজিত করে স্পার্সদের থেকে এক পয়েন্ট পিছিয়ে পঞ্চম ও রেলিগেটেড কার্ডিফের কাছে ঘরের মাঠে ২-০ গোলে পরাজিত হয়ে ষষ্ঠ স্থান নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে ইউনাইটেডকে। এছাড়াও জয় দিয়েই মৌসুম শেষ করেছে ক্রিস্টাল প্যালেস, নিউক্যাসেল ও ওয়েস্ট হ্যাম। সাউদাম্পটন রেলিগেটেড হাডার্সফিল্ডের সাথে ১-১ গোলে ড্র করেছে।