একবিংশ শতাব্দীর সেরা বিশ্বকাপ একাদশ

388

ঢাকা, ১৩ মে, ২০১৯ (বাসস) : আগামী ৩০ মে ইংল্যান্ড এন্ড ওয়েলসে শুরু হতে যাচ্ছে ২০১৯ ক্রিকেট বিশ্বকাপ। এবারের আসরে অংশ নিচ্ছে দশটি দল। কোন গ্রুপ না থাকায় সেমিফাইনালের আগে সকল দল একে অপরের বিপক্ষে অন্তত একটি ম্যাচে মুখোমুখি হবে। আসন্ন টুর্নামেন্টের আগে আমরা একুশ শতকের সেরা একাদশ বাছাই করতে চাই।
তবে স্বপ্নের সেরা একাদশ নির্বাচনে আমরা কিছু মানদন্ড বিবেচনায় নিতে চাই।
১. যে সকল খেলোয়াড় ২০০৩ বিশ্বকাপের আগে খেলেনি আমরা তাদের বিবেচনার বাইরে রাখছি। সুতরাং উল্লেখ করা যাচ্ছে যে,শচিন টেন্ডুলকার, গ্লেন ম্যাকগ্রা এবং রিকি পন্টিং-এর মত সর্ব কালের সেরা খেলোয়াড়দের এ তালিকায় রাখা হয়নি।
২. সাধারণ ওয়ানডে নয় কেবলমাত্র বিশ্বকাপ ম্যাচে পারফরমেন্সের ভিত্তিতেই এ একাদশ নির্বাচন করা হচ্ছে।
৩. বিশ্বকাপে যে সকল ব্যাটসম্যান ও উইকেটরক্ষক কমপক্ষে ১০ ইনিংস খেলেছেন এবং যে সকল বোলাররা কমপক্ষে একশ’ ওভার বোরিং করেছেন কেবলমাত্র তাদেরকেই বিচেনা করা হয়েছে।
৪. সকল পরিসংখ্যান ইএসপিএন ক্রিকইনফো থেকে নেয়া।
শীর্ষ তিন ব্যাটসম্যান: মার্টিন গাপটিল, তিলকরত্নে দিলশান এবং কুমার সাঙ্গাকারা
সাম্প্রতিক সময়ে যেভাবে ওয়ানডে ক্রিকেট খেলা হচ্ছে সে বিষয়টি বিবেচনায় রেখে তিন শীর্ষ ব্যাটসম্যানকে বেছে নেয়া হয়েছে। শীর্ষ তিন ব্যাটসম্যানের দায়িত্ব থাকে অবিচল রান রেট অক্ষুন্ন বজায়ে রাখা এবং বড় সংগ্রহের একটা ভাল ভিত্তি তৈরী করা। যাকে পুঁজি করে শেষ ২০ ওভারে ব্যাটসম্যানরা মোট সংগ্রহটা দ্বিগুন করতে পারে। মূলত শীর্ষ তিন ব্যাটসম্যানের ক্ষেত্রে গড়ের চেয়ে স্ট্রাইক রেটের বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়।
মার্টিন গাপটিল এ পর্যন্ত ২০১১ ও ২০১৫ দুই বিশ্বকাপে অংশ নিয়েছেন। বিশ্ব আসরে ১৭ ইনিংসে কিউই এ ওপেনার ৬৫ দশমিক ৭৮ গড়ে মোট ৮৩৭ রান করেছেন। অন্য সকল ওপেনারের তার ব্যাটিং গড় সবচেয়ে বেশি। বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংসের মালিকও তিনি। ২০১৫ বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে তিনি অপরাজিত ২৩৭ রানের ইনিংস রয়েছে গাপটিলের।
এই একাদশে গাপটিলের ওপেনিং পার্টনার হিসেবে রাখা হয়েছে তিলকরতেœ দিলশানকে। ২০০৭-২০১৫ পর্যন্ত বিশ্বকাপে ২৫ ইনিংসে ৫২ দশমিক ৯৫ গড়ে তিনি মোট রান করেছেন ১১১২ রান। তার স্ট্রাইক রেট ৯৩। বিশ্ব আসরে তার নামের পাশে রয়েছে চারটি হাফ সেঞ্চুরি এবং এবং চারটি সেঞ্চুরি। বিশ্বকাপে তার সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংস অপরাজিত ১৬১ রানের। বাংলাদেশের বিপক্ষে তিনি সর্বোচ্চ রানের ইনিংসটি খেলেছিলেন।
ব্যাটিং অর্ডারের তিন নম্বরে আছেন খেলাটির ইতিহাসে এ পর্যন্ত সবচেয়ে সফল বাঁ-হাতি ব্যাটসম্যান কুমার সাঙ্গাকারা। এই শতাব্দিতে তিনি চারটি বিশ্বকাপে অংশ নিয়ে খেলেছেন ৩৫ ইনিংস। ৫৬ দশমিক ৭৪ গড়ে তার মোট রান ১৫৩২। বিশ্বকাপে সর্বকালের সর্বোচ্চ রান সংগ্রহকারীদের তালিকায়ও তিনি আছেন তিন নম্বরে। তার আগে রয়েছেন কেবলমাত্র শচিন টেন্ডুলকার ও রিকি পন্টিং। বিশ্বকাপে সাঙ্গাকারার আছে পাঁচ সেঞ্চুরি এবং সাত হাফ সেঞ্চুরি। ২০১৫ আসরে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে ১২৪ রান তার বিশ্বকাপে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ইনিংস।
চার ও পাঁচ নম্বরে: এবি ডি ভিলিয়ার্স ও এন্ড্রু সাইমন্ডস
ব্যাটিং অর্ডারের চার নম্বরে ক্রিকেটের সুপারম্যান এবি ডি ভিলিয়ার্স। ২০০৭-২০১৫ বিশ্বকাপে ২২ ইনিংসে ১১৭ দশমিক ২৯ স্ট্রাইক রেটে ৬৩ দশমিক ৫২ গড়ে ১২০৭ রান করেছেন এবি।
বিশ্বকাপে সর্বকালের সর্বোচ্চ রান সংগ্রহকারীদের তালিকায় পঞ্চম স্থানে আছেন তিনি। মাত্র ৬৬ বলে তার অপরাজিত ১৬২ রানের ইনিংসটি নি:সন্দেহে এ যাবত কালে বিশ্বকাপের সেরা ইনিংস। ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্রিস গেইলের সঙ্গে এই মুহুর্তে বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ ৩৭টি ছক্কা হাকানোর রেকর্ডটিও রয়েছে ভিলিয়ার্সের দখলে।
অনেকের কাছে বিস্ময় মনে হলেও পরিসংখ্যান বিবেচনায় নাম রাখা হচ্ছে অস্ট্রেরিয়ার এন্ড্রু সাইমন্ডসের। বিশ্বকাপে বিস্ময়করভাবে তার ব্যাটিং গড় ১০৩। ২০০৩ এবং ২০০৭ বিশ্বকাপের দুই আসরে তিনি ইনিংস খেলেছেন ১৩টি। যার মধ্যে ৮টিতে ছিলেন অপরাজিত। বিশ্বকাপ ২০০৩ আসরে নিজের প্রথম ইনিংসে তিনি অপরাজিত ১৪৩ রান করেন। তবে বিশ্বকাপে তার সেরা ইনিংসটি এসেছে একই একই বছর। সাইমন্ডসের অপরাজিত অপরাজিত ৯১ রানের সুবাদে ২০০৩ বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে শ্রীলংকাকে হারিয়ে ফাইনালে উঠেছিল অস্ট্রেলিয়া। স্বাভাবিকভাবেই ম্যাচের সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি।
অলরাউন্ডার : যুবরাজ সিং
একজন অলাউন্ডার হিসেবে ৬ নম্বর ব্যাটসম্যান হিসেবে থাকছেন ২০১১ বিশ্বকাপের সেরা খেলোয়াড় ভারতের যুবরাজ সিং। টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হওয়া ভারতের একমাত্র ক্রিকেটার তিনি। ২০০৩-২০১১ বিশ্বকাপে তিনি ২১ টি ইনিংস খেলেছেন। এ সময়ে ৯০ দশমিক ৩৩ স্ট্রাইক রেটে ৫২ দশমিক ৭১ গড়ে মোট ৭৩৮ রান করেছেন যুবরাজ। একই সঙ্গে বোলার হিসেবে ২৩ দশমিক ১০ গড়ে তিনি শিকার করেছেন ২০ উইকেট।
উইকেটরক্ষক/ অধিনায়ক : ধোনি
মহেন্দ্র সিং ধোনিকে তার প্রজন্মের সেরা অধিনায়ক হিসেবে উপস্থাপন করলে খুব কম ব্যক্তিই আছেন যারা অস্বীকার করবেন। এমনকি ধোনি তার প্রজন্মের সেরা উইকেটরক্ষ, তার সাথেও দ্বিমত করার খুব বেশি থাকবে না। ভক্তদের কাছে কখনো কখনো স্টাম্পের পিছনে ঝলক দেখানো ধোনি এ দলের উইকেটরক্ষ। বিশ্বকাপে ভারতের হয়ে এ পর্যন্ত ২০ ইনিংসে উইকেটরক্ষকের দায়িত্ব পালন করা ধোনি ৩২টি ডিসমিজাল করেছেন(বিশ্বকাপ ইতিহাসে যা তৃতীয় সর্বোচ্চ)। উইকেটরক্ষক হিসেবে ডিসমিজাল/ইনিংস রেটে তার চেয়ে এগিয়ে আছেন কেবলমাত্র ব্র্যাড হাডিন ও দিনেশ রামদিন। তবে বিশ্বকাপে ব্যাট হাতে ৪২ দশমিক ২৫ গড় রানের মালিক ধোনি চমৎকার একজন ফিনিশারও । তাছাড়া অধিনায়ক হিসেবে তিনি জয় পেয়েছেন ৮৫ দশমিক ২৯ শতাংশ।
বোলার: ব্রেট লী, লাসিথ মালিঙ্গা, ইমরান তাহির এবং শেন বন্ড
এ দলে রয়েছে তিন পেসার ও একজন স্পিনার। মূলত অলরাউন্ডার একজন স্পিনার হিসেবেও ভূমিকা রাখতে পারেবন। এছাড়া স্পিন বিকল্প হিসেবে আছেন দিলশান সাইমন্ডসও। এছাড়া দু’জন বোলারকে নির্বাচন করা হয়েছে তাদের স্ট্রাইক রেট বিবেচনায়, অপর দুইজনকে গড় বিবেচনায়।
২০০৩-২০১১ বিশ্বকাপের ১৭ ইনিংসে ২৩ দশমিক ৫ স্ট্রাইক রেটে ৩৫ উইকেট শিকার করেছেন ব্রেট লী। বিশ্বকাপে কম পক্ষে একশ ওভার বোলিং করেছেÑ এমন বোলারদের মধ্যে এটাই সেরা স্ট্রাইক রেট। বিশ্বকাপে তার সেরা বোলিং ফিগার ২০০৩ আসরে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৪২ রানে ৫ উইকেট শিকার।
দ্বিতীয় পেসার হিসেবে দলে আছেন মালিঙ্গা। ব্রেট লী’র পর দ্বিতীয় সেরা ২৩ দশমিক ৮ স্ট্রাইক রেটে বিশ্বকাপের ২১ ইনিংসে তিনি ৪৩ উইকেট শিকার করেছেন। বিশ্বকাপে ডাবল হ্যাট্রিক করা (এক ম্যাচে ৪ বলে ৪ উইকেট) একমাত্র বোলার মালিঙ্গা। বিশ্বকাপে তার সেরা বোলিং ফিগার ৭.৪ ওভারে ৩৮ রানে ৬ উইকেট শিকার। কেনিয়ার বিপক্ষে তিনি এ অসাধারন বোলিং করেন।
দলে একমাত্র বিশেষজ্ঞ স্পিনার ইমরান তাহির। ২০১১ এবং ২০১৫ দুই বিশ্বকাপে ১৩ ম্যাচে ১৬ দশমিক ৩১ গড়ে তিনি ২৯ উইকেট শিকার করেছেন। বিশ্বকাপে চার ইনিংসে তাহির চার বা ততোধিক উইকেট শিকার করেছেন। এমন রেকর্ড রয়েছে শেন ওয়ার্ন, মুত্তিয়া মুরলিধরন এবং শহিদ আফ্রিদির।
কিউই পেসার শেন বন্ড ২০০৩ ও ২০০৭ দুই বিশ্বকাপে ১৬ ম্যাচে মোট ৩০ উইকেট শিকার করেছেন। বিশ্বকাপে তার ইকোনোমি রেট মাত্র ৩ দশমিক ৫। বিশ্ব আসরে তার গড়১৭ দশমিক ২৬।
বিশ্বকাপে তার সেরা বোলিং ফিগার ২০০৩ আসরে। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ১০ ওভার বোলিং করে মাত্র ২৩ রানে ৬ উইকেট শিকার করেছিলেন তিনি।