বাসস ক্রীড়া-৩ : আয়াক্সকে কাঁদিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে টটেনহ্যাম

136

বাসস ক্রীড়া-৩
ফুটবল-চ্যাম্পিয়ন্স লিগ
আয়াক্সকে কাঁদিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে টটেনহ্যাম
এ্যামাস্টারডাম, ৯ মে ২০১৯ (বাসস) : ব্রাজিলিয়ান মিডফিল্ডার লুকাস মৌরার দুর্দান্ত হ্যাটট্রিকে অবিশ্বাস্য এক ম্যাচ উপহার দিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ইতিহাসে প্রথমবারের মত ফাইনাল নিশ্চিত করেছে টটেনহ্যাম হটস্পার। বুধবার ডাচ ক্লাব আয়াক্সকে তাদের মাঠে ৩-২ গোলে হারিয়ে দুই লেগ মিলিয়ে ৩-৩’এ সমতা থাকলেও এ্যাওয়ে গোলের সুবাদে শেষ মিনিটে ফাইনালের টিকিট পায় স্পার্সরা। অল ইংলিশ ফাইনালে তাদের জন্য অপেক্ষায় আছে আরেক ইংলিশ জায়ান্ট লিভারপুল। ম্যাচ শেষে আবেগী স্পার্স কোচ মরিসিও পচেত্তিনো তার শিষ্যদের ‘সুপার হিরো’ আখ্যা দিতেও ভুল করেননি।
স্টপেজ টাইমের আগে ইউরোপীয়ান ঐতিহ্যবাহী এই আসরের স্বপ্নের ফাইনালে খেলার পথে এক পা দিয়েই রেখেছিল ডাচ জায়ান্ট আয়াক্স। ইয়োহান ক্রুইফ এরিনাতে স্বাগতিক সমর্থকরা যখন ফাইনালের আশায় স্বপ্নের বুনছে তখনই ইনজুরি টাইমের শেষ মিনিটে মৌরার হাত ধরে টটেনহ্যামের ফাইনাল নিশ্চিত হয়।
আগামী ১ জুন মাদ্রিদে লিভারপুলের বিপক্ষে ফাইনালে খেলবে টটেনহ্যাম। ২০০৮ সালের পর এই প্রথম অল-ইংলিশ ফাইনালে এই দুই দল মুখোমুখি হতে যাচ্ছে।
ম্যাচ শেষে কান্নায় ভেঙ্গে পড়া পচেত্তিনো বলেছেন, ‘আমার জীবনে এটা অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি রাত হয়ে থাকবে। সর্ব প্রথম আমি খেলোয়াড়দের অভিনন্দন জানাতে চাই, তাদের জন্যই আজ এটা সম্ভব হয়েছে। আমি আগে বলেছি তারাই আমার নায়ক। আর আজ আমি তাদেরকে ‘সুপার হিরো’ হিসেবে আখ্যা দেব। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে এভাবেও যে যাওয়া যায় আজ তারা সেটাই প্রমাণ করেছে। এটা সত্যি অবিশ্বাস্য।’
হ্যাটট্রিকম্যান লুকাস মৌরার জন্যও আবেগটা ছিল প্রায় একইরকম। নেইমারকে দলে নিতে গিয়ে প্যারিস সেইন্ট-জার্মেই মৌরাকে ছেড়ে দিয়েছিল। আর গতকাল তারকা স্ট্রাইকার হ্যারি কেনের অনুপস্থিতিতে মৌরার পজিশনে পরিবর্তন হয়েছিল। এসব কিছুই মৌরাকে প্রমাণের সুযোগ করে দিয়েছিল যার শতভাগ তিনি কাল করে দেখিয়েছেন। ম্যাচ শেষে মৌরা বলেছেন, ‘ফুটবল এভাবেই এমন কিছু মুহূর্ত উপহার দেয় যা কেউ হয়ত কখনো কল্পনাও করতে পারেনা। আমাদের এখন উদযাপনের সময়। আমার ক্যারিয়ারে এটাই সবচেয়ে সেরা মুহূর্ত।’
১৯৯৬ সালের পর প্রথমবারের মত ফাইনালে খেলার স্বপ্ন শেষ মুহূর্তে ভঙ্গ হয়ে যাওয়ায় আয়াক্স খেলোয়াড়রা মৌরার গোলের পর একেবারেই মুষড়ে পড়েছিলেন। ঐ গোলের সাথে সাথেই রেফারী শেষ বাঁশি বাজালে আয়াক্স খেলোয়াড়রা কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে। প্রথম লেগে ১-০ গোলে জয়ের পর ডাচ ক্লাবটি এ ম্যাচে প্রথমার্ধেই অধিনায়ক মাথিয়াস ডি লিট ও হাকিম জিয়েচের গোলে এগিয়ে গিয়েছিল। আগের রাতে লিভারপুল যেভাবে বার্সেলোনার সাথে প্রথম সেমিফাইনালে ঘুড়ে দাঁড়িয়েছিল কাল টটেনহ্যামেরও সেই ধরনের কিছুই করে দেখানোর তাগিদ ছিল। কিন্তু প্রথমার্ধেই দুই গোলে পিছিয়ে পড়ে স্পারসদের সামনে অকল্পনীয় কিছু করার সুযোগ এসেছিল। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই মৌরার গোলে কিছুটা হলেও স্বস্তি ফিরে পায় স্পারসরা।
ইতোমধ্যেই এবারের আসরে রিয়াল মাদ্রিদ ও জুভেন্টাসের মত ফেবারিট দলগুলোকে বিদায় করে এরিক টেন হ্যাগসের দল নিজেদের জায়ান্ট কিলার হিসেবে প্রমান করেছিল। ফাইনালে পথে তাদের শুরুটা দুর্দান্ত হলেও শেষ পর্যন্ত আর স্বপ্নপূরণ হয়নি। ম্যাচ শেষে অবশ্য স্বাগতিক দর্শকরা তাদের প্রিয় দলকে অভিনন্দিত করতে ভুল করেনি। এখন তাদের সামনে ডাচ লিগ ও কাপ শিরোপা জয়ের আশা টিকে রয়েছে। এই দুটি শিরোপা জয় করে কিছুটা হলেও চ্যাম্পিয়ন্স লিগের হতাশা থেকে বেরিয়ে আসা যাবে।
ম্যাচ শুরুর ঠিক আগে ব্রাজিলিয়ান উইঙ্গার ডেভিড নেরেস ইনজুরিতে পড়লে তার পরিবর্তে আয়াক্সের মূল একাদশে খেলতে নেমেছিলেন কাসপার ডলবার্গ। ম্যাচ শুরু পাঁচ মিনিটেই লাসে সোচেনের কর্ণার থেকে ডি লিটের হেডে এগিয়ে যায় স্বাগতিকরা। পরের মিনিটেই সং হেয়াং-মিনের ক্রস পোস্টে লেগে ফেরত আসে। ৩৫ মিনিটে টাডিচের পাস থেকে বা-পায়ের জোড়ালো শটে ব্যবধান দ্বিগুন করেন জিয়েচ। দুই গোলে পিছিয়ে পড়ে স্পারস সমর্থকরা অনেকটাই হতাশ হয়ে পড়ে। দ্বিতীয়ার্ধে অনেকটাই উজ্জীবিত স্পারসদের সামনে বেশীরভাগ সময়ই বিপদে পড়তে হয়েছে আয়াক্স রক্ষণভাগকে। ৫৫ মিনিটে ডেলে আলির সাথে বোঝাপড়ায় মৌরা আয়াক্স গোলরক্ষক ওনানাকে পরাস্ত করেন। চার মিনিট পর বদলী খেলোয়াড় ফার্নান্দো লোরেন্তের বল ওনানা রুখে দিলে ফিরতি বলে মৌরা দারুন দক্ষতায় রক্ষনভাগকে ফাঁকি দিয়ে বল জালে জড়ান। টেনশনে থাকা আয়াক্স বারবার চেষ্টা করেও আরেকটি গোল আদায় করতে পারেননি। জিয়েচ একাই দুটি সুযোগ নষ্ট করেছেন। কিন্তু ইনজুরি টাইমের শেষ মিনিটে মৌরা সব হিসেব পাল্টে দিয়ে টটেনহ্যামকে পৌঁছে দেন স্বপ্নের ফাইনালে।
বাসস/নীহা/১৪৪০/স্বব