বাসস ক্রীড়া-৫ : রাশিয়া বিশ্বকাপ শেষ আসর হতে পারে যে সব তারকা ফুটবলারের

229

বাসস ক্রীড়া-৫
ফুটবল-বিশ্বকাপ

ঢাকা, ১১ জুন ২০১৮ (বাসস) : এমন অনেক ফুটবলার রয়েছে যাদের খেলা দেখে দর্শক দারুণ মুগ্ধ হয়েছে। খেলা উপভোগ করতে করতে মনে হয়েছে এসব কৃতি ফুটবলারের জন্ম না হলে হয়তো এই খেলাটিই গুরুত্বহীন হয়ে পড়তো। সর্বক্ষণ চলেছে এসব কিংবদন্তীদের বন্ধনা।
তবে সব কিছুর যেমন শুরু আছে তেমনি শেষও আছে। প্রতি বিশ্বকাপে নতুন কোন তারকা এসে জয় করে নেয় বিশ্বের লক্ষ কোটি ফুটবল অনুরাগীর হৃদয়। আবার ওই আসর থেকেই বিদায় নিতে হয় কিংবদন্তী ফুটবলারদের। যাদেরকে পরবর্তী আসরে আর দেখা যাবে না।
আসন্ন রাশিয়া বিশ্বকাপ ফুটবল আসর থেকেও বিদায় জানাতে হবে এরকম কতিপয় ফুটবলারকে। যাদের নিয়ে আজকের এই আলোচনা।
রাফায়েল মারকুইজ (৩৯) মেক্সিকো : গত এপ্রিলে অবসর নিয়েছেন ক্লাব ফুটবল থেকে। ফিরে গেছেন তার সেই কৈশোরের ক্লাব এটলাসে। যেখানে তার পেশাদার ফুটবল শুরু করেছিলেন ২২ বছর আগে। ২০১৮ বিশ্বকাপ হচ্ছে ফুটবলকে উপভোগ করার জন্য তার ক্যারিয়ারের শেষ সুযোগ। এই আসরে অংশগ্রহণের মাধ্যমে মারকুইজ পৌঁছে যাবেন একটি বিরল রেকর্ডে। সেটি হচ্ছে বিশ্বকাপের ৫টি আসরে অংশগ্রহণের রেকর্ড। রেকর্ড বইয়ে ইতোমধ্যে আসন পেতে আছেন এন্টনিও কারভাজাল ও জার্মান কিংবদন্তী লোথার ম্যাথুজ।
অবশ্য এককভাবে বিশ্ব রেকর্ড নিজের নামের পাশে লিখিয়ে নেয়ার সুযোগ ছিল মারকুইজের। কারণ ১৯৯৭ সালে পেশাদার ফুটবলে অভিষিক্ত হলেও দলের হয়ে ১৯৯৮ সালের ফ্রান্স বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ হয়নি তার। যদিও তখন তার বয়স ছির ১৯ বছর। পরের বার ২০০২ সালে কোরিয়া- জাপানের বিশ্বাকে যখন তিনি অংশ নিচ্ছিলেন তখন দলের নেতৃত্বের বোঝা তার কাঁধে। এরপর ধারাবাহিক চারটি বিশ্বকাপে দলের নেতৃত্ব দিয়েছেন মারকুইজ।
প্রোফাইল:
বিশ্বকাপ অভিষেক : ২০০২ সালের ৩ জুন, ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে ওই ম্যাচে ১-০ গোলে জয়লাভ করে মেক্সিকো।
বিশ্বকাপ : ২০০২, ২০০৬, ২০১০, ২০১৪
মোট অংশগ্রহণ : ১৬ ম্যাচ
বিশ্বকাপে স্মরণীয় মুহূর্ত : ২০১০ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে উদ্বোধনী ম্যাচে সমতাসুচক গোল করা।
আন্দ্রেস ইনিয়েস্তা (৩৪) স্পেন: সকার সিটি জোহানেসবার্গে তখন স্থানীয় সময় রাত ১০টা ৩৭ মিনিট। হল্যান্ডের বিপক্ষে বিশ্বকাপের ফাইনালে অতিরিক্ত সময়ে ইনিয়েস্তার ভলিতে লক্ষ্য ভেদ। অতপর শিরোপা স্পেনের। ওই মুহূর্তটিকে কখনো ভুলতে পারবেন না এই স্প্যানিশ কিংবদন্তী।
২০০৬ সালে জার্মান বিশ্বকাপের আগে স্পেন জাতীয় দলে অভিষিক্ত হন ইনিয়েস্তা। এরপর থেকে দলের প্রানভোমরা হিসেবে ছিলেন তিনি। তাকে আবর্তন করেই রচিত হয়েছে স্প্যানিশ মধ্যমাঠের খেলা। তবে এখন সবই অতীত। এরই মধ্যে প্রিয় ক্লাব বার্সেলোনার হয়ে খেলে ফেলেছেন শেষ পেশাদার ম্যাচটি। এর মাধ্যমে ইতি ঘটেছে ক্লাব ফুটবলে তার দুই যুগের পদচারনার। আর রাশিয়া বিশ্বকাপই হবে ইনিয়েস্তোর সর্বশেষ আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট।
প্রোফাইল:
বিশ্বকাপ অভিষেক: ২০০৬ সালের ২৩ জুন। সৌদি আরবের বিপক্ষে ম্যাচে ১-০ গোলে জয়লাভ করে স্পেন।
বিশ্বকাপ: ২০০৬, ২০১০, ২০১৪
সর্বমোট অংশগ্রহণ : ১০ ম্যাচ
বিশ্বকাপে স্মরণীয় মুহূর্ত: ২০১০ সালের দক্ষিন আফ্রিকা বিশ্বকাপের ফাইনালে জয়সুচক গোল।
টিম চাহিল (৩৮) অস্ট্রেলিয়া : অস্ট্রেলিয়ার আধুনিক বিশ্বকাপ যুগে একমাত্র ধারাবাহিক ফুটবল তারকা। জাতীয় হিরো হতে খুব বেশি সময় নষ্ট করেননি চাহিল। ২০০৬ সালে জার্মান বিশ্বকাপে প্রথম অংশগ্রহণেই জাপানের বিপক্ষে গোল করে দলকে জিতিয়ে দেয়ার পাশাপাশি জাতীয় হিরো বনে যান চাহিল। এ পর্যন্ত চাহিলকে ছাড়া কোন গোল পায়নি সকারুসরা।
বিশ্বকাপে এ পর্যন্ত ৫টি গোল করেছেন চাহিল। তন্মধ্যে ২০১৪ সালের ব্রাজিল বিশ্বকাপে চিলির বিপক্ষের ম্যাচটিও রয়েছে। যার ফলে প্রথম কোন অস্ট্রেলিয়ান হিসেবে বিশ্বকাপের তিন আসরেই গোল করার রেকর্ড গড়েছেন চাহিল। রাশিয়া বিশ্বকাপে অংশগ্রহনের মাধ্যমে দেশের হয়ে সর্বাধিক বিশ্বকাপে অংশগ্রহণকারীর খাতায় নাম লেখানোর পাশাপাশি ওই আসরে গোল করতে পারলে তিনি দেশটির পক্ষে বিশ্বকাপে সর্বাধিক গোলদাতার আসনটি আরো সমৃদ্ধ করতে পারবেন।
প্রোফাইল:
বিশ্বকাপ অভিষেক: ২০০৬ সালের ১২ জুন, জাপানের বিপক্ষে ৩-১ গোলে জয়লাভ করে অস্ট্রেলিয়া।
বিশ্বকাপ: ২০০৬, ২০১০, ২০১৪
মোট অংশগ্রহণ : ৮ ম্যাচ
বিশ্বকাপে স্মরণীয় মুহূর্ত: ২০১৪ সালের ব্রাজিল বিশ্বকাপে হল্যান্ডের বিপক্ষে তার বিদ্যুৎগতির ভলি।
জাভিয়ার মার্সেরানো (৩৩) আর্জেন্টিনা: আর্জেন্টিনার তারকার ভিড়ে অনেকেই হয়তো মার্সেরানোকে খুব একটা আমলে নিতে চাইবেনা। কিন্তু বস্তবতা হচ্ছে আর্জেন্টিনার সর্বশেষ তিনটি বিশ্বকাপে লা আলবাসেলেসতা শিবিরের হয়ে প্রতিটি মিনিট কাজে লাগিয়েছেন তিনি। দক্ষিন আফ্রিকা বিশ্বকাপে তৎকালীন কোচ কিংবদন্তী ফুটবলার দিয়েগো ম্যারাডোনা আর্জেন্টিনা দলকে বলেছিলেন, ‘মাসর্রোনো এবং বাকী দশ খেলোয়াড় নিয়ে গঠিত।’ রক্ষণাত্মক এই মিডফিল্ডারকে নিয়ে জীবন্ত কিংবদন্তীর ওই মন্তব্যই বুঝিয়ে দেয় দলে তার গুরুত্ব কতখানি ছিল।
চার বছর আগে বিশ্বকাপ শিরোপার খুব কাছে পৌঁছে যাওয়া আর্জেন্টিনাকে শেষ মুহূর্তে হার মানতে হয়েছিল অতিরিক্ত সময়ে জার্মানির পক্ষে মারিও গোয়েতজের জয়সুচক গোল। তবে মার্সেরানোর বিশ্বকাপ শিরোপা স্বপ্ন পূরণের শেষ সুযোগ হচ্ছে রাশিয়া বিশ্বকাপ।
প্রোফাইল:
বিশ্বকাপ অভিষেক: ২০০৬ সালের ১০ জুন, আইভরি কোস্টের বিপক্ষে ২-১ গোলে জয়লাভ করে আর্জেন্টিনা।
বিশ্বকাপ: ২০০৬, ২০১০, ২০১৪
মোট অংশগ্রহণ : ১৬ ম্যাচ
বিশ্বকাপে স্মরণীয় মুহূর্ত: ২০১৪ সালের ব্রাজিল বিশ্বকাপের সেমি-ফাইনালে ৯০তম মিনিটে এরিয়েন রোবেনের নিশ্চিত গোলটি প্রতিহত করে দেয়া।
বাসস/ওয়েবসাইট/এমএইচসি/১৭১৫/মোজা/স্বব