সন্ত্রাস-যৌন নিপীড়নের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ার প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে সংসদে গৃহীত

887

সংসদ ভবন, ২৯ এপ্রিল, ২০১৯ (বাসস) : সন্ত্রাস ও যৌন নিপীড়নের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে জাতীয় সংসদে গৃহীত হয়েছে।
নিউজিল্যান্ড ও শ্রীলঙ্কায় সন্ত্রাসী হামলা এবং নুসরাতকে যৌন নিপীড়ন ও পুড়িয়ে মারার ঘটনায় বাংলাদেশসহ বিশ্বের সব দেশের সংসদ, সরকার ও নাগরিকদের প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহবান জানিয়ে সংসদে আজ সরকারি দলের সদস্য কার্যপ্রণালী-বিধির ১৪৭ (১) বিধি অনুসারে তোফায়েল আহমেদ এই প্রস্তাবটি উত্থাপন করেন।
সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ প্রস্তাবের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নেন।
আলোচনায় অংশ নিয়ে সরকারি দলের সদস্য আমির হোসেন আমু বলেন, ২০১৪ সালে নির্বাচনকে প্রতিহত করার নামে মানুষকে পেট্রল বোমা মেরে মানুষ হত্যা করা শিখিয়েছে বিএনপি জামায়াত। আজকের নুসরাত হত্যাও সেখান থেকে শিক্ষা নিয়েছে। প্রয়োজনে স্পেশাল ট্রাইব্যুনার গঠন করে স্বল্পতম সময়ের মধ্যে এসব হত্যাকান্ডের বিচার কাজ সম্পন্ন করতে হবে।
শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেন, সারাবিশ্বে আজ ধর্মের নামে বাড়াবাড়ি, মানবতা বিপর্যস্ত। কোন ধর্মই সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদের সমর্থন করে না। ধর্মের নামে সন্ত্রাস বিশ্বের সকল ধর্মকে আজ বিতর্কিত করছে।
তিনি বলেন, শ্রীলঙ্কায় সন্ত্রাসী হামলায় আমার নাতি জায়ান জীবন দিয়েছে, জামাতা আহত হয়ে চিকিৎসাধীন। সে একটা নিষ্পাপ শিশু, তাকে সন্ত্রাসবাদের শিকার হতে হয়েছে। নুসরাতকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। এসব সন্ত্রাসীদের কঠোর শাস্তি দিতে হবে। এখন সময় এসেছে এ ধরনের সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে পৃথিবীর সকল মানবতাবাদী নেতাকে রুখে দাঁড়াতে হবে।
সন্ত্রাসবিরোধী নতুন আইন প্রণয়নের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, এ ধরনের চাঞ্চল্যকর ঘটনার এক মাসের মধ্যে বিচারিক কার্যক্রম সম্পন্ন করতে হবে।
বেগম মতিয়া চৌধুরী বলেন, বেগম খালেদা জিয়া কর্নেল রশিদকে বিরোধী দলের নেতার আসন দিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু, শেখ রাসেল, সুকান্ত বাবুর খুনিদের বিচারের পথ রহিত করে বিএনপি জঙ্গি সন্ত্রাসকে প্রশ্রয় দিয়েছে। ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার পর তৎকালীন বিরোধী দলের নেতা শেখ হাসিনাকে বার বার সময় চাওয়ার পরও সংসদে কথা বলতে দেয়া হয়নি। ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে বিএনপি কি অপকর্ম করেছে তা দেশবাসীর পাশাপাশি বিশ্ববাসী দেখেছে।
তিনি বলেন, নুসরাতকে আগুন দেয়ার কাজে জড়িত মনি ৫ মাসের অন্ত:সত্তা ছিল। ৫ মাসের শিশুকে গর্ভে রেখে যে মানুষকে পুড়িয়ে মারতে পারে সে কতটা অমানবিক কাজ করেছে। এর বিচার অবশ্যই হবে।
মোহাম্মদ নাসিম বলেন, ধর্মান্ধতা মনুষ্যত্ব ও মানবতাকে খেয়ে ফেলছে। এটাকে রুখে দাঁড়াতে হবে। তিনি নুসরাত হত্যাকারীদের ফাঁসির দাবি জানান।
বিরোধী দলের চিফ হুইপ মাশউর রহমান রাঙা বলেন, নুসরাতকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছে। হত্যাকারীদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে বিচার সম্পন্ন করতে হবে।
ওয়ার্কাস পার্টির সদস্য রাশেদ খান মেনন বলেন, ধর্মকে যখন রাজনীতির সাথে যুক্ত করা হয় তখনই সাম্প্রদায়িকতা, মৌলবাদ, হিংসা ও সন্ত্রাসের জন্ম হয়। গণমাধ্যম ও ইউটিউবে যারা ধর্মের নামে বিদ্বেষ ছড়ায়, তিনি তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান।
আলোচনায় আরো অংশ নেন সরকারি দলের সদস্য মাহবুব উল আলম হানিফ, শাজাহান খান, মেহের আফরোজ চুমকী, এ্যারোমা দত্ত, বিরোধী দলের সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ, ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, ফখরুল ইমাম, রুস্তম আলী ফরাজী, বিএনপির সদস্য হারুনুর রশীদ, জাসদের সদস্য মইন উদ্দিন খান বাদল, শিরিন আক্তার ও গণফোরামের সদস্য সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ।