বাসস দেশ-২৫ : চট্টগ্রাম বন্দরে কোকেন জব্দ মামলায় ১০ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন

283

বাসস দেশ-২৫
কোকেন মামলায়-অভিযোগ গঠন
চট্টগ্রাম বন্দরে কোকেন জব্দ মামলায় ১০ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন
চট্টগ্রাম, ২৯ এপ্রিল ২০১৯ (বাসস) : চট্টগ্রাম বন্দরে কোকেন জব্দ করার ঘটনায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে করা মামলায় ১০ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরু করেছে চট্টগ্রামের একটি আদালত।
সোমবার (২৯ এপ্রিল) দুপুরে চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ মো. আকবর হোসেন মৃধা এই আদেশ দেন বলে চট্টগ্রাম মহানগর সরকারি কৌঁসুলি মো. ফখরুদ্দিন চৌধুরী জানান। আদালত আগামি ১৯ মে মামলার পরবর্তী তারিখ ধার্য করেছেন বলে তিনি জানান।
আসামিরা হলেন লন্ডন প্রবাসী চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জের ফজলুর রহমান, মৌলভীবাজারের বকুল মিয়া, চালানটির আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান খাঁন জাহান আলী লিমিটেডের চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ, মোস্তাক আহমেদ। নুর মোহাম্মদ জামিনে গিয়ে পলাতক রয়েছেন। অন্য তিনজন ঘটনার পর থেকে পলাতক। জামিনে রয়েছেন কসকো বাংলাদেশ শিপিং লাইনসের ব্যবস্থাপক এ কে আজাদ, সিকিউরিটিজ প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা মেহেদী আলম, সিএন্ডএফ প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা সাইফুল আলম, আবাসন ব্যবসায়ী মোস্তফা কামাল। কারাগারে রয়েছেন প্রাইম হ্যাচারির ব্যবস্থাপক গোলাম মোস্তফা ও পোশাক রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান ম-ল গ্রুপের বাণিজ্যিক নির্বাহী আতিকুর রহমান।
এর আগে ২০১৫ সালের ৬ জুন পুলিশের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে কোকেন সন্দেহে চট্টগ্রাম বন্দরে সূর্যমুখী তেলের চালান জব্দ করে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর। এরপর ২৭ জুন তেলের চালানের ১০৭টি ড্রামের মধ্যে একটি ড্রামের নমুনায় কোকেন শনাক্ত হয়। বলিভিয়া থেকে আসা চালানটির প্রতিটি ড্রামে ১৮৫ কেজি করে সূর্যমুখী তেল ছিল। পরে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি), মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের রাসায়নিক পরীক্ষাগারসহ চারটি পরীক্ষাগারে তেলের চালানের দুটি ড্রামের নমুনায় কোকেন শনাক্ত হয়।
এ চালান উরুগুয়ের মন্টিভিডিও থেকে জাহাজীকরণ করা হয়। পরে তা সিঙ্গাপুর হয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে আসে।
শুল্ক গোয়েন্দা সুত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ এর আগে কখনোই বলিভিয়া থেকে সূর্যমুখী ভোজ্যতেল আমদানি করেনি। তা ছাড়া তরল কোকেনকে গুঁড়া বা পাউডার কোকেনে রূপান্তর করার মতো প্রযুক্তি বা যন্ত্রপাতি বাংলাদেশে নেই।
কোকেন জব্দের ঘটনায় চট্টগ্রামের বন্দর থানায় ২০১৫ সালের ২৭ জুন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ ও চোরাচালান আইনে মামলা হয়। আসামি করা হয় চালানটির আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান খাঁন জাহান আলী লিমিটেডের চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদকে।
পরে ২৮ জুন চট্টগ্রাম বন্দর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) ওসমান গণি বাদী হয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের ১৯ (১) এর ১(খ) ও ৩৩ (১)/২৫ ধারায় আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান খানজাহান আলী লিমিটেডের চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ ও তার ভাই খানজাহান আলী লিমিটেডের মালিকানাধীন প্রাইম হ্যাচারির ব্যবস্থাপক মোস্তাক আহমেদকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন। পরে আদালতের নির্দেশে চোরাচালান সংক্রান্ত বিশেষ ক্ষমতা আইনের ২৫ (বি) ধারা সংযুক্ত করা হয়েছে।
একই বছরের ১৯ নভেম্বর কোকেন আমদানির মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা তৎকালীন নগর গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী কমিশনার (উত্তর) মো. কামরুজ্জামান চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। অভিযোগপত্রে গ্রেফতার হওয়া ছয়জনের সঙ্গে বিদেশে অবস্থানরত দু’জনসহ মোট ৮ জনকে আসামি করা হয়।
তবে এজাহারে নাম থাকলেও কোকেনের চালানটি যে প্রতিষ্ঠানের নামে বন্দরে আনা হয়েছিল, সেই খানজাহান আলী লিমিটেডের মালিক নূর মোহাম্মদকে অভিযোগপত্রে অব্যাহতি দেওয়া হয়। অব্যাহতি পান তার ভাই মোস্তাক আহমেদও।
ঘটনার পাঁচ মাস পর চট্টগ্রাম নগর গোয়েন্দা পুলিশ নুর মোহাম্মদকে অব্যাহতির সুপারিশ করে আটজনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয়। চালানের গন্তব্য অজানা, আন্তর্জাতিক চক্র শনাক্ত না হওয়ায় রাষ্ট্রপক্ষ নারাজি আবেদন করলে আদালত র‌্যাবকে অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দেন। কিন্তু র‌্যাবের তদন্তেও চালানটির গন্তব্য বের করা সম্ভব হয়নি। র‌্যাব নুর মোহাম্মদসহ ১০ জনকে আসামি করে ২০১৭ সালের ৩ এপ্রিল আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয়। আদালত তা গ্রহণ করেন।
মামলাটিতে পৃথক দুটি ধারা থাকায় মাদক আইনে বিচার শুরু হয়েছে। আর চোরাচালান আইনের ধারায় আদালতের নির্দেশে র‌্যাব অধিকতর তদন্ত করছে। প্রতিবেদন এখনো দেয়নি র‌্যাব।
বাসস/জিই/এসকেবি/এমএএস/১৯৪৫/কেকে