বাজিস-১১ : ৩০ এপ্রিল জগৎপুর গণহত্যা দিবস

122

বাজিস-১১
জগৎপুর- গণহত্যা
৩০ এপ্রিল জগৎপুর গণহত্যা দিবস
শেরপুর, ২৯ এপ্রিল, ২০১৯ (বাসস) : ১৯৭১ সালে ৩০ এপ্রিল শেরপুর শহর থেকে ২৫ কিলোমিটার উত্তরে ঝিনাইগাতীর জগৎপুর গ্রামে পাকবাহিনী ও দেশীয় রাজাকাররা নির্বিচারে গুলি চালিয়ে হত্যা করে ৩৫ জন নিরীহ গ্রামবাসীকে। আহত করে অর্ধশতাধিক নরনারীকে ।
আহত হয়েছিল অর্ধশত মানুষ, জ্বালিয়ে দিয়েছিল জগৎপুর গ্রাম। এতে ২০০ বেশী বাড়ী-ঘর পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছিল। স্ব^াধীনতার ৪৮ বছর পার হলেও এই গ্রামে শহীদদের উদ্দ্যেশে নির্মিত হয়নি কোন স্মৃতিসৌধ । অযতœ আর অবহেলায় পড়ে আছে শহীদদের গণকবর।
শেরপুর শহর থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূুরে ঝিনাইগাতী উপজেলার জগৎপুর গ্রাম। ৭১ এই দিনে পাক বাহিনী আর দেশীও দোসররা গ্রামটিকে তিন দিক থেকে ঘিরে ফেললে গ্রামের মানুষ প্রাণ ভয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে পাশেই রঙ্গবিলে। সেদিনের বর্বরোচিত হামলায় ৩৫ জনের প্রাণ গেলেও সেদিনের ভয়াল স্মৃতি বুকে নিয়ে আজও বেঁচে আছেন অনেকেই।
সেদিনের সেই ভয়াল স্মৃতি বুকে নিয়ে নিরীহ গ্রামবাসী জানায়, সেদিন ছিল বাংলা ১৬ বৈশাখ, ৩০ এপ্রিল শুক্রবার সকাল ৮ টা। জগৎপুরের সামনের সংকর ঘোষ গ্রাম থেকে স্থানীয় রাজাকার মজিবর, বেলায়েত, নজর ও কালামের সহযোগীতায় পাক বাহিনী জগৎপুরের তিন দিক থেকে ঘিরে ফেলে। পাক বাহিনীর তিন টি দল গ্রামের তিন দিকে গিয়ে অবস্থান নিয়ে নির্বিচারে গুলি করতে থাকে।
এসময় গ্রামবাসী কোন কিছু না বুঝেই জীবন বাঁচতে গ্রামের পেছনের দিকের রঙ্গবিলের দিকে দৌঁড়ে পালাতে থাকে। কিন্তু বিলের মাঝখানে পানি থাকায় কেউ সাঁতরিয়ে আবার কেউ বিলের দুই পাড় ঘেঁষে পালাতে যায়। এসময় শুকনো জায়গা দিয়ে পালাতে গিয়ে পাক সেনাদের গুলিতে শহীদ হন ৩৫ গ্রামবাসী। শুধু গুলি করে গ্রামবাসীকে হত্যা করেই ক্ষান্ত হয়নি পাক সেনারা।
গ্রামের বাড়ী-ঘর জ্বালিয়ে দেয়। ঘটনার প্রায় ৩ থেকে ৪ ঘন্টা পর পাক সেনারা চলে গেলে কিছু কিছু গ্রামবাসী ফিরে এসে দেখে তাদের বাড়ী-ঘরের স্থলে পোড়া গন্ধ আর ছাঁই ছড়া আর কিছুই নেই। এঅবস্থা দেখে অনেকেই চলে যায় সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ভারতে। আবার অনেকেই নারীর টানে পড়ে থাকে গ্রামেই।
এদিকে হিন্দু-মুসলিম অনেকেই তাদের আত্মীয়দের লাশ গ্রামের একটি জঙ্গলের কাছে গণকবর দেয়। ওই গণ কবরের পাশেই বর্তমানে হিন্দুদের শ্মশান ঘাট রয়েছে। কিন্তু ওই গণ কবরের স্থানটি আজো স্মৃতি চিহৃ না করার জন্য ক্ষোভ রয়েছে গ্রামবাসীর।
গ্রামের কৃষক আব্দুস সামাদের ছোট ভাই আলফাজ ছিল মুক্তিযোদ্ধা। তিনি পাশ্ববর্তী একটি ব্রীজ ভাঙ্গার জন্য গ্রামের কাছাকাছি আসলে তার মা অসু¯ ’হওয়ার খবর শুনে গ্রামে ছুটে আসে। এসময় তার সাথে ছিল আরো এক মুক্তিযোদ্ধা। দেশ স্বাধীনের মাস খানিক আগে স্থানীয় রাজাকাররা তার ভাই ও ওই মুক্তিযোদ্ধাকে ডেকে নিয়ে গেলেও আজো তাদের কোন খবর পাওয়া যায়নি।
এনিয়ে আব্দুস সামাদ উল্লেখিত রাজাকারদের আসামী করে ২০০৯ সালে মামলা করলেও আজো সে মামলার কোন অগ্রগতি না হওয়া হতাশ মুক্তিযোদ্ধা আলফাজের ভাই আব্দুস সামাদ।
গ্রামবাসীদের দাবি দেশের বিভিন্ন স্থানের রাজাকারদের বিচার হলেও তাদের গ্রামের রাজাকারদের কোন বিচার হচ্ছে না। এছড়া ওই গ্রামের শহীদদের নামে নাম ফলক ও গণকবরের স্মৃতিচিহৃ হোক।
শেরপুর জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার নুরুল ইসলাম হিরু বাসসকে জানান, কেন্দ্রীয় কমান্ডাকে বারবার স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করার জন্য চিঠি পাঠানো হলেও আজ পর্যন্ত সেখানে কোন স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হয়নি। আমরা এ ব্যাপারে সরকারের উর্দ্বতন কর্তৃপক্ষকে একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণের জন্য জোর দাবি করছি।
বাসস/সংবাদদাতা/১৬৪৫/-মরপা