বাজিস-৫ : হবিগঞ্জের হাওরে নতুন দুর্যোগ বজ্রপাত

172

বাজিস-৫
হবিগঞ্জ-বজ্রপাত
হবিগঞ্জের হাওরে নতুন দুর্যোগ বজ্রপাত
হবিগঞ্জ, ২৯ এপ্রিল ২০১৯ (বাসস) : জেলার হাওর তথা বৃহত্তর সিলেটের নতুন প্রাকৃতিক দুর্যোগের নাম বজ্রপাত। শুধু এ অঞ্চলেই নয়, সারা দেশেই এ দুর্যোগের কমবেশি প্রাদুর্ভাব আছে। সরকার এ দুর্যোগ থেকে বাঁচতে তালগাছ রোপণের কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
হবিগঞ্জ ত্রাণ অফিস সূত্রে জানা যায়, ২০১৫ সালের জানুয়ারি মাস থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত হবিগঞ্জ জেলায় বজ্রপাতে মৃত্যুবরণ করেছেন ৭৯ জন। এর মাঝে হাওর এলাকায় সর্বাধিক। ওই সময়ে আহত হয়েছে আরও ২শতাধিক মানুষ। মারা গেছে অনেক গবাদিপশু।
দেশের পরিবেশ নিয়ে কাজ করা অধ্যাপক ড. আইনুন নিশাত জানান, বজ্রপাত প্রাকৃতিক কারণে হয়। মেঘের মাঝে জলকনা ভেসে থাকে। মেঘ থাকে দুই স্তরে। উপরে নেগেটিভ এবং নিচে পজেটিভ থাকতে পারে। যদি দুই স্থর কাছাকাছি আসে তখন সেখানে বিদ্যুৎ চমকায়। এক পর্যায়ে বজ্রপাত হয়। উষ্ণায়ন বজ্রপাতের মূল কারণ। এছাড়াও মেঘের পরিমাণ বাড়ছে এবং মেঘের স্থরের উঠানামা বেড়ে যাওয়ায় বজ্রপাত হচ্ছে। বিশেষ করে সিলেট অঞ্চলের পাহাড়ী এলাকায় এর প্রভাব বেশি।
তিনি এর সমাধান হিসাবে বাড়িতে পূর্বে যেভাবে তার দেয়া হত সেভাবে তার দেয়ার ব্যবস্থা করার পরামর্শ দেন। পাশাপাশি ঝড় বৃষ্টির সময় সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন তিনি।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন বাপার কেন্দ্রীয় যুগ্ম-সাধারন সম্পাদক শরীফ জামিল বলেন, আমরা বজ্রপাত নিয়ে কাজ শুরু করেছি। বন ধ্বংস এবং উষ্ণায়নকে এ বজ্রপাতের মূল কারণ হিসাবে তিনি চিহ্ণিত করেন।
তিনি আরও বলেন, একসময় দেশে খড়া, বায়ূ দূষণ, বন্যা, ভূমি ধস, ঘূর্ণি ঝড়, অতিবৃষ্টি, ভূমিকম্প, নদী ভাঙ্গণ ও লবনাক্তা ছিল প্রধান দুর্যোগ। এখন বজ্রপাতকেও গুরুত্ব দিতে হবে।
পরিবেশ নিয়ে কাজ করা সংগঠন স্বাধীন জীবন এর নির্বাহী পরিচালক আব্দুর রাজ্জাক নাসিম জানান, বজ্রপাত নিয়ে প্রচলিত অনেক ভুল ধারণা রয়েছে মানুষের মাঝে। এ ধারণার পরিবর্তন করে জনগণকে সচেতন করতে হবে। সরকার এ ব্যাপারে বিশেষ উদ্যোগ নিতে পারে। তিনি আরও জানান, দেশে ২০১৫ সালে ১৮৬ জন, ২০১৪ সালে ২১০ জন, ২০১৩ সালে ২৮৫ জন, ২০১২ সালে ৩০১ জন এবং ২০১১ সালে বজ্রপাতে মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ১৭৯ জন । বর্তমানে বজ্রপাতে মৃত্যুর হার আরও বেশি
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা দিয়েছেন সারাদেশে ১০ লাখ তাল গাছ লাগানোর জন্য। ইতোমধ্যে দেশের সর্বত্র এ গাছ লাগানো হচ্ছে। হবিগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা তোফায়েল খান জানান, হবিগঞ্জে ১০ হাজার তালের গাছ লাগানো হয়েছে কৃষি বিভাগের উদ্যোগে। এর বাহিরেও বিভিন্ন বিভাগ তাল গাছ লাগাচ্ছে। স্বল্প সময়ে এর প্রভাব খুব বেশি না হলেও ভবিষ্যতে এর সুফল পাওয়া যাবে। তাল গাছের অন্যান্য উপকারীতাও রয়েছে।
তিনি আরও জানান, বজ্রপাতে বেশি লোক মারা যাচ্ছে হাওরে। বিশেষ করে বোরো মৌসুমে কৃষকরা যখন ধান কাটতে ব্যস্ত থাকে তখন বেশি বজ্রপাতে হয় এবং কৃষক মারা যায়। এ বজ্রপাতের ভয়ে হাওরে এখন ধান কাটা শ্রমিকের সংকট দেখা দিয়েছে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন বাপার হবিগঞ্জ জেলা শাখার সাধারন সম্পাদক তোফাজ্জল সোহেল বলেন, বজ্রপাতের সময় ধাতব বস্তু স্পর্শ করা ঠিক নয়। এমনকি টিভি ফ্রিজ পানির মোটর বন্ধ থাকলেও তার স্পর্শ থেকে সাবধানে থাকা ভালো। এ সময় বৈদ্যুতিক ঝরণায় গোসল করা ঠিক নয়। পাকা বাড়ি হলেও তার ধাতব জানালায় হাত রাখা বিপদ হতে পারে। বিদ্যুতের সুইচ বন্ধ রাখা বাঞ্ছনীয়। তারযুক্ত ফোন এবং মোবাইল ফোন ব্যবহারও ঠিক নয়। কারণ মোবাইল ফোনের টাওয়ার বজ্রপাত টেনে নেয়। বর্তমানে ভূমিকম্পের প্রবণতা বেড়ে যাওয়ায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগ ভূমিকম্প থেকে রক্ষা পেতে সচেতন হয়ে উঠেছে কিন্তু বজ্রপাতের বিষয়ে তেমন উদ্যোগ নেই।
তিনি আরও বলেন, যেসব এলাকায় গ্রীষ্মকালে তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি থাকে সেসব এলাকায় যে মেঘের সৃষ্টি হয়, সেখান থেকেই বজ্রপাতের আশংকা থাকে।
হবিগঞ্জের জেলা ত্রাণ ও পুণর্বাসন কর্মকর্তা মো. নজরুল ইসলাম জানান, চলতি বছর এখন পর্যন্ত বজ্রপাতে ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। গত বছর মারা যায় ২৯ জন। নতুন এ দুর্যোগ মোকাবেলায় বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মহড়ার আয়োজন করা হয়ে থাকে। তবে এ ব্যাপারে ব্যাপক সচেনতা বৃদ্ধির প্রয়োজন রয়েছে।
বাসস/সংবাদদাতা/কেইউ/১২১২/নূসী