বাজিস-১৩ : ২৮ এপ্রিল যশোর শহরের পূর্ববারান্দীপাড়া গণহত্যা দিবস

229

বাজিস-১৩
পূর্ববারান্দীপাড়া গণহত্যা দিবস
২৮ এপ্রিল যশোর শহরের পূর্ববারান্দীপাড়া গণহত্যা দিবস
যশোর, ২৭ এপ্রিল ২০১৯ (বাসস) : ২৮ এপ্রিল। যশোর শহরের পূর্ববারান্দীপাড়া গণহত্যা দিবস। ৭১’র এই দিনে একদল পাক সেনা আচমকা অভিযান চালিয়ে ১৭ বাঙালিকে ধরে নিয়ে যায়। শহরের পালবাড়ি হর্টিকালচার সেন্টারের অভ্যন্তরে নিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করা হয় ১৬ জনকে। ভাগ্যক্রমে প্রাণে বেঁচে যান হায়দার আলী নামে একজন।
স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ১৯৭১ সালের এপ্রিল মাসে যশোরে ছিল সব চাইতে ভয়াবহ অবস্থা। এ মাসের ৩ থেকে ৫ তারিখে অসংখ্য নরনারীকে নির্বিচারে হত্যা করেছে পাক সেনারা।
২৮ এপ্রিল ১৭ জনকে ধরে নিয়ে গিয়ে ১৬ জনকে হত্যা করে মাটি চাপা দিয়েছে তারা। ভাগ্যক্রমে জল্লাদের মুখ থেকে আহত অবস্থায় ফিরে আসেন হায়দার আলী। শহরের ভোলাট্যাংক রোড, সার্কিট হাউজপাড়া, পোস্ট অফিসপাড়া, কাঁচাবাজারসহ সবখানে পাখির মতো মানুষকে গুলি করে হত্যা করা হয় বলে জানিয়েছে তিনি।
এপ্রিলের ২ বা ৩ তারিখে বড় মাছবাজারের পিছে গণহত্যায় শহিদ হন হায়দার আলীর বাবা হোসেন আলী। ২৮ এপ্রিল হায়দার আলীর সাথে আটক হন আব্দুল জব্বার, আব্দুল লতিফ, আব্দুল আজিজ, সাদেক পাটোয়ারী, আব্দুল গণি, আব্দুল কাদের, মোজাম্মেল হক, নেজামুল হক, কেতাব আলী, আজব আলী, সামছুদ্দিন, নজরুল ইসলাম তুলো, ওয়াজেদ আলী, শুকুর আলী দর্জি, তোফাজ্জেল হোসেন ও আজিজুল হক।
মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে আসা হায়দার আলী সে সময় ছিলেন ১৮ বছরের যুবক। মুদি দোকান ছিল তার।
হায়দার আলী সেদিনের বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন, ২৮ এপ্রিল সকাল ৯টা কি সাড়ে ৯টা। অভিযান চালিয়ে হানাদারদের গাড়িতে করে শহরের মাঝ দিয়ে তাদের নিয়ে যায় ওই নারকেল বাগানে। সবাকে গোল করে বসানো হয়। পাক আর্মির একজন কমান্ডার একেকজনকে জিজ্ঞাসাবাদের নামে নির্যাতন চালাতে থাকে। এক পর্যায়ে রাইফেলের বাটের আঘাতে মাথা ফেটে যায় হায়দার আলীর। রক্ত দেখে নির্যাতন বন্ধ করে রেঞ্জার বাহিনীর কমান্ডার জাফরকে একে একে হত্যার নির্দেশ দিয়ে চলে যায়। প্রথমে আব্দুল জব্বার, কেতাব আলী, রজব আলী ও সাদেক আলীকে দড়ি দিয়ে বেঁধে ঘরের বাইরে নিয়ে যায়।
কিন্তু পরে হায়দার আলীসহ দর্জি শুকুর আলী, নজরুল ইসলাম ও আজিজুল হককে একইভাবে ঘরের বাইরে নেয়া হয়।
হায়দার আলী জানান, সে সময় দেখি আগের ৪ জনকে দিয়ে গর্ত খোড়ানো হচ্ছে। এ সময় এক রেঞ্জার সদস্য সিগারেটের ছেকা দিলে চিৎকার দেয় হায়দার। এ সময় এক ছোট ভাইয়ের বন্ধু রেঞ্জার সদস্য রিয়াজ এগিয়ে আসে। সান্তনা দিয়ে বলে তোমাকে ছেড়ে দেয়া হবে।
হায়দার আলী বলেন, স্থানীয় অবাঙালিদের নিয়ে গঠিত রেঞ্জার সদস্য অনেকের সাথে পরিচয় ছিল। তিনি জানান, রেঞ্জার সদস্য জাফর, টুনটুন, সেলিম, মঈন, রিয়াজ, সিরাজের সাথে পরিচয় থাকলেও কথা বলতে সাহস ছিল না হায়দার আলীর। এ সময় সত্যিই তাকে ছেড়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় তারা। তবে শর্তজুড়ে দেয় এ বিষয়ে কারো সাথে কথা বলা যাবে না। পেছনে তাকানোর সুযোগ নেই। ছাড়া পেয়ে দ্রুত সেখান থেকে বাড়ি ফিরে যান হায়দার। এর পরে স্থানীয়দের কাছে সন্দেহ হয়। অন্যরা তবে কোথায়। হায়দার সব গোপন রাখে। পর দিন সন্ধ্যায় রেঞ্জার সদস্য রিয়াজ তার সাথে দেখা করে অন্য কোথাও পালিয়ে থাকার পরামর্শ দেয়। ৬ ডিসেম্বর যশোর মুক্ত হলে এলাকায় ফিরে আসেন হায়দার। স্থানীয়দের সাথে হর্টিকালচার সেন্টারের নারকেল বাগানের সেই গর্ত খুড়ে অসংখ্য নরকংকাল উদ্ধার করে।
২৮ এপ্রিলে হায়দারের সাথে আটক হওয়া আব্দুল জব্বারের ছেলে স্বপন মোহাম্মদ কামালও সেদিন কংকাল উঠানোর সময় তাদের সাথে ছিলেন।বছর খানেক আগে হৃদ রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন স্বপন মোহাম্মদ কামাল।মৃত্যুর আগে তিনি গল্পে গল্পে বলেছিলেন,
সেদিন গর্তে ১৬ জন নয় অনেক মানুষকে পোতা হয়েছিল। সেখানে পাওয়া গিয়েছিল অনেক কংকাল।
বাসস/সংবাদদাতা/১৯৩০/মরপা