বাজিস-২ : নাটোরে গ্রামীণ জনপদে ৭৬টি সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ পর্যায়ে

202

বাজিস-২
নাটোর-৭৬টি সেতু
নাটোরে গ্রামীণ জনপদে ৭৬টি সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ পর্যায়ে
নাটোর, ২৫এপ্রিল, ২০১৯ (বাসস) : গ্রামীণ সংযোগ স্থাপন, ফসল বাজারজাতকরণ, পানি ও মানুষের অবাধ চলাচল নিশ্চিত করতে সর্বমোট ২৪ কোটি ২০ লাখ ৮০ হাজার টাকা ব্যয়ে নাটোর সদর ও নলডাঙ্গা উপজেলায় ১৫ মিটার দৈর্ঘ্য পর্যন্ত মোট ৭৬টি সেতু নির্মাণ কাজ প্রায় শেষ হয়েছে। দুূর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর এসব সেতু নির্মাণ কাজ বাস্তবায়ন করছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসারের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা শাখা সূত্রে জানা যায়, নাটোর সদর ও নলডাঙ্গা উপজেলায় চলমান অর্থ বছর ছাড়াও বিগত দুইটি অর্থ বছরে ‘গ্রামীণ রাস্তায় (১২ মিটার দৈর্ঘ্য পর্যন্ত) সেতু/কালভার্ট নির্মাণ’ এবং ‘ গ্রামীণ রাস্তায় কম-বেশী ১৫ মিটার দৈর্ঘ্যরে সেতু/কালভার্ট নির্মাণ’ প্রকল্পের আওতায় ৭৬টি সেতু নির্মাণ কাজের মধ্যে ৬১টি শেষ হয়েছে এবং ১৫টি চলমান সেতু নির্মাণ কাজ চলতি অর্থ বছরের জুন মাসে শেষ হবে। নদী, খাল, জলা এবং রাস্তার উপরে এসব সেতু নির্মাণ করা হয়েছে।
নির্মাণ কাজ শেষ হওয়া সেতুগুলোর দুই পাশের বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের সাথে কথা বলে জানা যায়, সেতু নির্মাণের ফলে চলাচলের ক্ষেত্রে সময়ের সাশ্রয় ঘটেছে, উৎপাদিত ফসল খুব সহজেই বাড়িতে আনা যাচ্ছে এবং বাজারজাত করা যাচ্ছে, রাস্তার উপরে নির্মিত সেতুর নীচ দিয়ে অবাধে পানি চলাচল করতে পারায় অনেক ক্ষেত্রে মাঠের জলাবদ্ধতা রোধ হয়েছে। সেতুর উপর দিয়ে খুব সহজেই গ্রামবাসী প্রয়োজনমত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে কিংবা বাজারে যেতে পারছেন। গ্রাম থেকে যেতে পারছেন জেলা শহরে। এতে করে রাস্তার দূরত্ব কমেছে, ঘটেছে সময়ের সাশ্রয় আর হ্রাস পেয়েছে ঝুঁকি। সর্বোপরি জীবনযাত্রা সহজ ও উন্নত হয়েছে। সেতুগুলো নির্মাণে যথাযথ স্থান নির্বাচন ও মান অনুসরণ করা হয়েছে বলে তারা মত প্রকাশ করেছেন।
প্রায় ৪১ লাখ টাকা ব্যয়ে নাটোর সদর উপজেলার ছাতনী ইউনিয়নের তেলকুপি পাঁচ আনিপাড়ায় খালের উপরে সেতু নির্মাণে উচ্ছ্বসিত এলাকার বাসিন্দারা। গৃহবধু মরিয়ম বেগম বলেন, আগে বাঁশের আড় দিয়ে খাল পার হতে হচ্ছিল। বিপদজনক সরু এ আড় পার হতে গিয়ে অনেক ছোট বাচ্চারা খালে পড়ে গেছে। এখন তারা বিপদমুক্ত। এখন যাতায়াত সহজ হয়েছে। অসুস্থ মানুষ অনায়াসে হাসপাতালে যেতে পারছেন।
একই ইউনিয়নের মদনহাট মধ্যপাড়ায় সেতু নির্মাণের অভিব্যক্তি ব্যক্ত করে তেলকুপি উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণীর ছাত্র বোরাক হোসেন জানায়, এখন আর ঘুরে স্কুলে যেতে হয়না, সোজা রাস্তায় সেতু পার হয়ে স্কুলে যাই, সময় কম লাগে। এ সেতু হওয়াতে মদনহাট, ঘোড়াগাছা, বুড়িদহ গ্রাম থেকে জেলা সদরে যাওয়ার দূরত্ব কয়েক কিলোমিটার কমেছে বলে জানালেন শহরে নিয়মিত যাতায়াতকারী পারভিন হাইস্কুলের শিক্ষক সোহেল রানা। সেতু হওয়াতে ক্রেতা বেড়েছে বলে জানালেন এলাকার রড-সিমেন্টের ব্যবসায়ী সেলিম হোসেন। এলাকাতে সেতু হওয়াতে জমির আবাদ আনতে প্রায় আধাঘন্টা সময়ের সাশ্রয় হয়েছে বলে জানান ছাতনী দিয়ার দক্ষিণপাড়া এলাকার কৃষক হাবিবুর রহমান।
সেতু নির্মাণ কাজ বাস্তবায়নকারী ঠিকাদারী জাকির হোসেন বলেন, দরপত্রে উল্লেখ না থাকলেও সেতুর দুই পাশের সংযোগ সড়ক পর্যন্ত সেতুর উচ্চতায় প্রচুর মাটি প্রয়োজন হয়। বৃষ্টির কারণে মাটি সরে গেলে আবার তা পূরণ করে দিতে হয়, এভাবে মুনাফা হিসেবে জামানতের টাকাটাও প্রায় শেষ হয়ে যায়। প্রকল্পের পরবর্ত্তী পর্যায়ে দরপত্রে মাটির সংস্থান থাকা প্রয়োজন বলে মনে করেন এ ব্যবসায়ী।
তেবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ওমর আলী প্রধান বলেন, এলাকার বাসিন্দাদের চাহিদা অনুযায়ী সেতুগুলো নির্মাণ করা হয়েছে। প্রয়োজনীয় তদারকির মাধ্যমে সেতুগুলো নির্মাণে যথাযথ মান নিয়ন্ত্রণ কর হয়েছে বলে জানান নাটোর সদর উপজেলার প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা প্রকৌশলী ওমর খৈয়াম।
নাটোর জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি হালতি বিল এলাকার এডভোকেট সিরাজুল ইসলাম বলেন, নলডাঙ্গা উপজেলার পিপরুল ইউনিয়নের খোলাবাড়িয়া পানাগাড়ী এলাকায় সেতু নির্মাণের ফলে জলাবদ্ধতা দূর হয়েছে। এখন খুব সহজেই বিলের পানি সেতুর নীচ দিয়ে বিল হালতি খাল হয়ে বারনই নদীতে যাচ্ছে। জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম শিমুল এমপি বিগত সরকারে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য থাকার সুফল হিসেবে নাটোর ও নলডাঙ্গা উপজেলায় অসংখ্য সেতু নির্মিত হয়েছে এবং এলাকার জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন ঘটেছে ব্যাপকভাবে।
নাটোর সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার জেসমিন আকতার বানু বাসস’কে বলেন, উপজেলা প্রশাসনের তদারকিতে নির্ধারিত মান অনুযায়ী সেতুগুলোর নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে ও হচ্ছে। এলাকার আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে এ সেতুগুলো অনন্য ভূমিকা পালণ করছে।
বাসস/সংবাদদাতা/১০১০/নূসী