রোহিঙ্গা ইস্যুতে জাতিসংঘকে জোরালো ভূমিকা রাখার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

864

ঢাকা, ২৪ এপ্রিল, ২০১৯ (বাসস) : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে আরো জোরালো ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘জোরপূর্বক বিতাড়িত ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেয়া আমাদের জন্য একটি বড় বোঝা। আমরা কতদিন এ বোঝা বহন করবো? তাদেরকে অবশ্যই মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে তাদের নিজ বাসভূমিতে ফিরে যেতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তাই আমরা চাই আপনারা এক্ষেত্রে আরো সক্রিয় ভূমিকা পালন করুন।’
জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনার ফিলিপ্পো গান্ধী, জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল (হিউম্যান এ্যাফেয়ারস) মার্ক লোকক ও আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম)-এর মহাপরিচালক এন্তোনিও ভিতোরিনো আজ সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর জাতীয় সংসদ ভবনস্থ কার্যালয়ে যৌথভাবে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে গেলে তিনি এ আহ্বান জানান।
সাক্ষাৎ শেষে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।
শেখ হাসিনা রোহিঙ্গা ইস্যুতে সহায়তার জন্য জাতিসংঘ সংস্থা ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং বিভিন্ন দেশকে ধন্যবাদ জানান।
তিনি বলেন, ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা প্রবেশের কারণে কক্সবাজারের স্থানীয় জনগণ অনেক ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। ‘তাদের চাষের জমি এমনকি স্থানীয় বনসম্পদও রোহিঙ্গাদের উপস্থিতির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।’
শেখ হাসিনা প্রাকৃতিক দুর্যোগ সম্পর্কে সতর্ক করে বলেন, আগামীতে বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে পার্বত্য এলাকাগুলোতে যে কোনো সময় ঘূর্ণিঝড় ও ভূমিধস হতে পারে। এতে রোহিঙ্গারা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
তিনি বলেন, ‘তাই তাদেরকে এখান থেকে অন্য জায়গায় সরিয়ে নেয়া ভালো হবে। না হলে ঝুঁকি বাড়বে।’
প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন যে, সরকার ভাসানচর নামে একটি দ্বীপ প্রস্তুত করছে, যেখানে এক লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে আরো উন্নত জীবন মান ও বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধাসহ স্থ’ানান্তর করা হবে।
রোহিঙ্গা শিশুদের শিক্ষা সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যেসব শিক্ষক রোহিঙ্গাদের সাথে বাংলাদেশে এসেছেন তারা রোহিঙ্গা শিশুদের অনানুষ্ঠানিক শিক্ষা দিচ্ছেন।
জাতিসংঘের তিন শীর্ষ কর্মকর্তা ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে আশ্রয় দেয়ায় মানবিক দৃষ্টিভঙ্গির জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভূয়সী প্রশংসা করেন।
তাদের মিয়ানমারের সফরের কথা উল্লেখ করে তারা প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করেন যে, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন প্রশ্নে তারা মিয়ানমারে ইউএনডিপি ও ইউএনএইচসিআর-এর প্রবেশাধিকার চেয়েছেন।
তারা বলেন, ‘আমরা রোহিঙ্গা ইস্যুতে বিশেষ করে রোহিঙ্গা শিশুদের শিক্ষা দেয়ার ব্যাপারে বাংলাদেশকে সহায়তা অব্যাহত রাখার ব্যাপারে অঙ্গীকারাবদ্ধ।’
জাতিসংঘ কর্মকর্তারা বলেন, তারা রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের ব্যাপারে মিয়ানমারের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করেছেন এবং কয়েকটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছেন। তবে তারা ‘এক্ষেত্রে অগ্রগতি খুবই মন্থর’ বলে উল্লেখ করেন।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব নজিবুর রহমান, পররাষ্ট্র সচিব শহিদুল হক এবং বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়ক ও ইউএনডিপি’র আবাসিক প্রতিনিধি মিয়া সেপ্পো এ সময় উপস্থিত ছিলেন।